ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাদীর কাছে ক্ষমা-মুক্তিযুদ্ধের বই পড়ার আদেশে ২ আসামিকে মুক্তি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৩
বাদীর কাছে ক্ষমা-মুক্তিযুদ্ধের বই পড়ার আদেশে ২ আসামিকে মুক্তি

রাজশাহী: বগুড়া থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক মহাস্থানগড়’ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক তানভীর আলম রিমনকে নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস ও মারধরের ঘোষণা দেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজগর তালুকদার হেনা ও শহর যুবদলের আহ্বায়ক আদিল শাহরিয়ার গোর্কী। এ ঘটনায় রিমন মামলা করেন।

আদালতে বাদীর তথ্য ও অভিযোগ প্রমাণ হয়। আসামিরও দোষী সাব্যস্ত হন। কিন্তু আদালত আসামিদের কারাগারের শাস্তি দেননি। বরং বাদীর কাছে ক্ষমা-মুক্তিযুদ্ধের ১২টি বই পড়ার আদেশ দিয়ে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। সঙ্গে আরও কিছু শর্তও দেওয়া হয় তাদের।

রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান রোববার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে প্রবেশনে এ আদেশ দেন। রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ইসমত আরা বেগম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মামলার দুই আসামির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আজকে প্রবেশনের এ রায় দেন বিচারক।

আর প্রবেশনের জন্য সাতটি শর্ত নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শর্তটি হলো- অভিযুক্ত দুই আসামিকেই মামলার বাদী তানভীর আলম রিমনের কাছে লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। এ ছাড়া আসামিদের ২০ বনজ ও ফলজ গাছ রোপণ; মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা ১২টি বই পড়তে হবে। বইগুলোর মধ্যে রয়েছে- জাহানারা ইমামের লেখা একাত্তরের দিনগুলি, রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা একাত্তরে চিঠি, আনিসুল হকের লেখা মা, ড. কামাল হোসেনের লেখা মুক্তিযুদ্ধ কেন অনিবার্য ছিল, আনিসুজ্জামানের লেখা আমার মুক্তিযুদ্ধ, আনিসুল হক ঊষার দুয়ারে, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদীর লেখা দ্য রেপ অব বাংলাদেশ, এম আর আক্তার মুকুলের লেখা আমি বিজয় দেখেছি ও চরমপত্র, নীলিমা ইব্রাহিমের লেখা আমি বীরাঙ্গনা বলছি, সেলিনা হোসেনের লেখা হাঙর নদী গ্রেনেড এবং আনোয়ার পাশার রাইফেল রোটি আওরাত।

অন্যান্য শর্তগুলো হলো- নিজ আইডি থেকে আসামিদের সাইবার সচেতনতা বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা; প্রবেশকালীন সময় দোষী সাব্যস্ত আসামিরা আর কোনো নতুন অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবেন না বা একই ধরনের অপরাধ করবেন না; আদালত এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তলব করলে যথাসময়ে উপস্থিত হবেন। ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুই আসামি এক লাখ করে দুই লাখ টাকা আদালতে জমা দেবেন। সেখান থেকে এক লাখ বাদীকে এবং এক লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হবে।

অ্যাডভোকেট ইসমত আরও বলেন, প্রবেশনের এই শর্তগুলোর কোনো একটি ভঙ্গ করলেই তাদের প্রবেশনের আদেশ বাতিল হয়ে যাবে। আর এমনটি হলে দুই আসামিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। এছাড়া জরিমানা গুণতে হবে এক লাখ টাকা করে। অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড।

প্রবেশন কর্মকর্তা তিন মাস পরপর প্রবেশনের আসামিদের প্রবেশন শর্ত প্রতিপালন ও গতি সম্পর্কে মনিটরিংয়ের পর আদালতে রিপোর্ট দাখিল করবেন। প্রবেশন সন্তোষজনক হলে এই দণ্ড দুই আসামির চাকরিসহ ভবিষ্যৎ জীবন অযোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে না।

প্রকাশক ও সম্পাদক তানভীর আলম রিমনের দৈনিক মহাস্থানগড়ে সম্প্রতি বগুড়ার বিএনপির রাজনীতি নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজগর তালুকদার হেনা তাকে হুমকি দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসে রিমনকে খুবই অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এ ছাড়া তাকে যেখানে পাওয়া যাবে, মারার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়।

অপর আসামি শহর যুবদল আহ্বায়ক আদিল শাহরিয়ার গোর্কীও তার ফেসবুকে তানভীর আলম রিমনের ছবির সাথে অসংলগ্ন কথা লিখে স্ট্যাটাস দেন। এই ঘটনায় ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। পরে রাজশাহীতে সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত স্থাপন হলে ওই মামলাটি বিচারের জন্য এখানে স্থানান্তর হয়ে আসে। সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে আজকে এই রায় ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০২৩
এসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।