নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তিন গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এতে পথচারীসহ উভয় পক্ষে ৪ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার (১২ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার চনপাড়া এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গুলিবিদ্ধরা হলেন- মো. সানি (১৭), পারভেজ (২১), মো. রুমান (১৮) এবং ইমন (২২)। তারা সবাই চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকার বাসিন্দা। আহত অন্যদের নাম পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকার নিয়ন্ত্রণ ছিল ইউপি সদস্য বজলুর রহমান বজলুর হাতে। তিনি মারা যাওয়ার পর থেকেই ওই এলাকার আধিপত্য নিজেদের দখলে নিতে উঠে পড়ে লাগে জয়নাল গ্রুপ, শমসের গ্রুপ ও শাহাবুদ্দিন গ্রুপ। এরই জেরে বেশ কয়েকদিন ধরে ওই তিন গ্রুপ পৃথকভাবে বিভিন্ন সময় সশস্ত্র মহড়া দিয়ে আসছে।
এসব গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদকসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মামলা রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে চায় না, প্রতিবাদও করতে সাহস পায় না।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে জয়নাল গ্রুপের সঙ্গে শমসের ও শাহাবুদ্দিন গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জেরে বুধবার (১২ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ওই তিন গ্রুপের সংঘর্ষ শুরু হয়।
এ সময় সাধারণ মানুষের বাড়িঘর ও দোকানপাটেও লুটপাট চালানো হয় বলে দাবি করেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি।
খবর পেয়ে রূপগঞ্জ থানার বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হন।
তবে, দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। আবারও সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
এদিকে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে সানি, পারভেজ, রুমান ও ইমন নামের চারজন গুলিবিদ্ধ হন।
এদের মধ্যে ইমনকে প্রথমে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে অবস্থা গুরুতর দেখে তাকেও ঢামেকে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) নাজমুল আলম জানান, তাকে (ইমন) কিছুক্ষণ আগে আনা হয়। গুলিবিদ্ধ হবার কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তাই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, সম্রাট ও রুমানের পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আর সানির পুরুষাঙ্গের পাশে গুলির চিহ্ন দেখা গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ঢামেকে চিকিৎসাধীন আহতরা বলেন, তারা চনপাড়ায় থাকেন। বুধবার (১২ এপ্রিল) সকালে স্থানীয় কয়েকটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষকালে তারা সেখান দিয়ে কাজে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন।
সংঘর্ষের কারণ সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না বলেও দাবি করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে তিন গ্রুপের তিন প্রধান জয়নাল, শমসের ও শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
এদিকে ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, ঘটনাটি রুপগঞ্জ থানা এলাকার। তাৎক্ষণিকভাবে থানা পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। বিশৃঙ্খলাকারীদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে থেমে থেমে চলছে সংঘর্ষ, ৪ যুবক গুলিবিদ্ধ
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৩
এমআরপি/এনএস
.jpg)
