ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থনের দাবি শ্রমিকদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৭ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৩
আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থনের দাবি শ্রমিকদের জাতীয় ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করছেন শ্রমিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনুসমর্থনের দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা।  

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) দুপুরে জাতীয় ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।

 

বক্তারা বলেন, আমরা যখনই লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে কথা বলি সেখানে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটের কারণে নারীর প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতার বিষয়টি সামনে চলে আসে। নারী কেবলমাত্র একটি সত্তার নাম নয় বরং সে একটি চালিকা শক্তি, যাকে ছাড়া পৃথিবী স্তব্ধ-স্থবির। সভ্যতা বির্নিমাণে পুরুষের পাশাপাশি নারীও অবদান রাখছে। প্রত্যেক যুগেই নারী তার মেধা, বুদ্ধি, যোগ্যতা, শ্রম এবং মমতার সংমিশ্রনে গড়ে তুলেছে ভবিষ্যতের বুনিয়াদ, জন্ম দিয়েছে নতুন ইতিহাসের। নারীর প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বেড়েছে শূন্যতা তার চারিদিকে সমস্যা জড়িয়ে ধরেছে মাকড়সার জালের মতো হাজারও প্রতিবন্ধকতা। আজ একবিংশ শতাব্দির আলোতে পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেলেও নারীরা আজও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসহায়, বড় বিপর্যস্থ। আধুনিক বিশ্বের নারী সমাজকে প্রতিটি পদক্ষেপে নানাবিধ সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে। নারীরা পারিবারিক বৈষম্য, সামাজিক বৈষম্য, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য, মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। নারীর অবমূল্যায়ন, ইভটিজিং, গনধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, নিত্য দিনকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট আইন এবং বিচার প্রক্রিয়ার কারণে ভুক্তভোগীরা সুষ্ঠু বিচার পাচ্ছে না এবং এই অপরাধ দিন দিন বেড়েই চলছে।

নারীরা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া-আসার বিষয় উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, নারীরা কর্মক্ষেত্রে এবং কর্মক্ষেত্রে যাওয়া আসার পথে, বিশেষ করে গণপরিবহনে, রাস্তাঘাটে ও তাদের আবাসস্থলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে, এমন দৃশ্যই উঠে এসেছে গবেষণায়। গত বছর বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি মাঠ পর্যায়ে ৪২০ জন পোশাক শ্রমিকের উপর গবেষণার মাধ্যমে দেখতে পায়। যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে ৮০% নারী শ্রমিক মৌখিক এবং শারীরিকভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে তার মধ্যে ৮৩% শ্রমিক যৌন হয়রানির ধরনগুলো সম্পর্কে সচেতন না শুধুমাত্র শারীরিকভাবে যৌন হয়রানির শিকার হলেও অধিকাংশ কারখানায় কার্যকরী যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি না থাকায় অভিযোগ জানাতে পারে না। যা তাদের কর্মপরিবেশে কাজ করার জন্য অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং অনেক শ্রমিক কারখানা থেকে চাকরি ছেড়ে চলে যায়। গবেষণায় উঠে এসেছে ৮১% শ্রমিক যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির গঠন এবং কার্যাবলি সম্পর্কে সচেতন নয়। আরও বৃহৎ পরিসরে উঠে এসেছে ৭৬% শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে কোননা কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। গবষেণার তথ্য অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে ১০০% শ্রমিক মৌখিকভাবে হয়রানির শিকার হয়েছে। আরও বিভিন্ন সংস্থার গবেষণায় প্রায় একই চিত্র দেখতে পাওয়া যায়।

বক্তারা পরিশেষে বলেন, বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি নিরসনে গত ২১ জুন ২০১৯ সালে আইএলওর ১০৮তম অধিবেশনে একটি কনভেনশন গৃহিত হয় যে কনভেনশন ১৯০ নামে পরিচিত। বাংলাদেশ সরকার এ কনভেশন অনুমোদন করে সুনির্দিষ্ট আইন ও বিধি গ্রহণ করে সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।

মানববন্ধনে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ৮ সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়। সুপারিশগুলো হলো- কর্মক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যকরী যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে। আইএলও কনভেনশন ১৯০ অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুস্বাক্ষর করতে হবে। অবিলম্বে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও হয়রানি বন্ধে পূর্ণাঙ্গ আইন ও বিধি গ্রহণ করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে হয়রানি প্রতিরোধে রাত্রিকালীন নারী শ্রমিকদের কাজ করানোর ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। সব কর্মক্ষেত্রে এবং গণপরিবহনে নারী শ্রমিক তথা সব নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শ্রম আইনের সংস্কার এবং ব্যর্থতায় কঠোর শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে। আসা-যাওয়ার পথে নিরাপত্তা এবং সামাজিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নারী নির্যাতন এবং হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৩
এমএমআই/এসএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।