ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কমান্ডাররা মানুষের কথা শোনেন না বলে অভিযোগ পাচ্ছি: র‌্যাব ডিজি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৩
কমান্ডাররা মানুষের কথা শোনেন না বলে অভিযোগ পাচ্ছি: র‌্যাব ডিজি

ঢাকা: র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন বলেছেন, অনেক ক্যাম্পের কমান্ডাররা অসহায় সাধারণ মানুষের কথা ঠিকমত শোনেন না, আমি অভিযোগ পাচ্ছি। পুনরায় এমন অভিযোগ শুনতে চাই না আমি।

 

তিনি বলেন, র‌্যাবে কর্মরত অবস্থায় যারা শহীদ হয়েছেন বা সাধারণ মানুষ যারা র‌্যাবের সহায়তা চাইতে যাবেন তাদের সঙ্গে অবশ্যই ক্যাম্প কমান্ডাররা কথা বলবেন। তাদের সহায়তা করবেন।

সোমবার (২০ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা র‌্যাব সদর দপ্তরের শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে আয়োজিত   র‌্যাবের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও র‍্যাব মেমোরিয়াল ডে-২০২৩ উপলক্ষে র‍্যাব মহাপরিচালকের দরবার অনুষ্ঠানে এ নির্দেশনা দেন র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি)।

এম খুরশীদ হোসেন বলেন, আমি বলব, অসহায় মানুষ আমাদের কাছে আসবে। তাদের কথা শুনব, আইনের মধ্য থেকে সহায়তা করব। তবে নিয়ত ঠিক থাকতে হবে - আমরা যেন তার (অসহায় মানুষের) সমস্যাটা পুঁজি করে অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ না করি। মানুষ যাতে মনে করে র‌্যাবের কাছে গেলে কষ্টের কথা বলা যায়, অভিযোগ করা যায়, র‌্যাব মানুষের কথা শোনে। আমি কিন্তু বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি, র‌্যাবের সিওরা সাধারণ মানুষের কথা শুনলেও ক্যাম্প কমান্ডাররা কথা শোনেন কম। আজ সরাসরি বলে দিই, শুধু আমাদের শহীদ পরিবার না; বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তের মানুষ ক্যাম্পে যাবে। অবশ্যই ক্যাম্প কমান্ডার তার কথা শুনবেন। পুনরায় কারও বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুনতে চাই না।  

র‌্যাব সদস্যদের উদ্দেশে ডিজি বলেন, আপনারা এদেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় চলেন, তাই সাধারণ মানুষকে সার্ভিস দিতে হবে। আমি যেসব জায়গায় কাজ করেছি, সব জায়গায় সাধারণ মানুষের কথা শুনেছি। আমি এখনও মানুষের কথা শুনি। থানায় বা এসপিকে ফোন করে বলে দিই। এতে যদি কারও উপকার হয়। প্রয়োজনে ক্যাম্প কমান্ডাররা সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বা দেখা করার সময় বেঁধে দেবেন। এসময় অবশ্যই ক্যাম্পে উপস্থিত থাকতে হবে। এটা সিওরা নিশ্চিত করবেন। আমি কিন্তু পুনরায় এই অভিযোগ শুনতে চাই না। আমরা শাসক না, সেবক হতে চাই। আমি চাই যারা অসহায় মানুষ, বিপদগ্রস্ত মানুষ আমাদের আন্তরিকতা, ক্ষমতা দিয়ে তাদের সহায়তা করব। যদি দিন চাকরি আছে মানুষকে সহায়তা করে যাবেন।

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, র‌্যাবে কর্মরত অবস্থায় যারা শহীদ হয়েছেন সেসব পরিবারকে আমরা প্রতিবছর আমন্ত্রণ জানাই। আমরা তাদের আর্থিক সহায়তা, উপহার সামগ্রী প্রদান করি। তবে আজ যে সন্তান পিতা হারা, যে স্ত্রী স্বামী হারা আমরা সেই শুন্যতা কোনো অবস্থাতেই অর্থ দিয়ে বা পুরস্কার দিয়ে পূরণ করতে পারব না।

তিনি বলেন, কর্নেল আজাদের স্ত্রী এখানে বক্তব্যে বলেছেন, র‌্যাব বাংলাদেশের অহংকর, গর্ব। যেসব সদস্য দেশের জন্য শাহাদাত বরণ করেছেন তারা আমাদের গর্ব। আমরা জানি আল্লাহর কাছে শহীদের মর্যাদা অনেক বেশি। আমরা যারা কর্মজীবী রয়েছি তাদের দায়িত্ব হবে, সমস্ত শহীদ যে যেখানে থাকুক না কেন তাদের সহায়তা করা। আমার পক্ষ থেকে ডিরেক্টর বা সিওদের অনুরোধ থাকবে আমার কোনো শহীদ পরিবার আপনাদের কাছে উপকার না পেলেও অন্তত আন্তরিকতার কমতি না থাকে; এটা নিশ্চিত করতে হবে।

এম খুরশীদ হোসেন বলেন, আজকে আমরা যারা জীবিত রয়েছি, তারা কে কোন অবস্থায় মারা যাব কেউ জানি না। কিন্তু শহীদ পরিবারের ক্ষতিগ্রস্ত সদস্যদের অনুভূতি যদি বুঝতে পারি তাহলে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব।

শহীদ পরিবারের অনেক সদস্য পড়াশোনায় ভালো ফলাফল করছে জানিয়ে র‌্যাবপ্রধান বলেন, শহীদ পরিবারের সন্তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব থাকবে, আমাদের মাধ্যমে যদি কর্মসংস্থান হয় সেটা অবশ্যই করব। শহীদদের অনেকের সহধর্মিণী রয়েছে, তাদেরও যদি কর্মের ব্যবস্থা করা যায় সেটাও আমরা সবাই চেষ্টা করব।

চাকরি জীবনে আমরা যতটুকু মানুষের জন্য উপকার করে যেতে পারি সেটাই কিন্তু সব সেটিসফেকশন, আত্মতৃপ্তি। যখন অবসরে চলে যাবো তখন এ সুযোগ থাকবে না।

র্যাব কর্মকর্তাদের প্রতি কড়া হুশিয়ারি দিয়ে ডিজি বলেন, র্যাবের এডিজি, অধিনায়ক বা কোনো ক্যাম্পে গিয়ে আমাদের শহীদ পরিবারের সদস্যদের এমন অনুভূতি না জাগে যে, আজ আমার বাবা-স্বামী বেঁচে নেই কিন্তু র্যাবের কাছে এসে সহায়তা পেলাম না। সবাইকে বলব শহীদ পরিবারের প্রতি আমাদের আন্তরিকতার কমতি থাকবে না। তারা যেন মনে কষ্ট না পায়। কোনো ব্যাটালিয়নে গিয়ে যদি কেউ উপকার না পান কষ্ট করে ঢাকায় চলে আসবেন, আমরা তাদের সহায়তার চেষ্টা করব। আর শহীদ পরিবারের সদস্য যারা আমাদের কাছে দাবি-দাওয়া রেখেছেন তাদের বিষয়ে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

ডিজি বলেন, দরবারের প্রথমদিনে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। আমাদের অন্য কোনো কিছু চিন্তা করলে চলবে না। ভয়ের কোনো কাজ নেই। আমাদের একটাই আস্থা আমরা এদেশের সন্তান, এদেশের জন্য কাজ করি। সবার মধ্যে একটা আস্থা তৈরি হয়েছে র্যাব মানুষের ভরসা, নিরাপত্তা ও ভরসার প্রতীক। আমি চাই, আমাদের সকল সদস্য মানুষের মধ্যে ভরসা-আস্থা আরও বাড়াতে কাজ করবে। আমরা যারা সরকারি কর্ম করি, যাদের ইউনির্ফ আছে তাদের পরিবার সিকিউরিটিতে আছে। কিন্তু সমাজের বাস্তব চিত্র আলাদা।

এর আগে অনুষ্ঠানে পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) আভিযানিক কার্যক্রমের বীরত্বপূর্ণ ও সেবামূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ র‍্যাব মহাপরিচালক পদক পেয়েছেন ৮৫ সদস্য।

এ বছর বিশেষ সম্মাননা (সাহসিকতা) ৩৫ জন ও বিশেষ সম্মানা (সেবা) পুরস্কার পেয়েছেন ৫০ র‍্যাব সদস্য।

এবছর র‍্যাব মহাপরিচালকের দরবার অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মত র‍্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) ডগ স্কোয়াডের কুকুর 'চিতা' বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য র‍্যাব মহাপরিচালক পদক পেয়েছে।

র‌্যাবের ডক স্কোয়াডের কুকুর 'চিতা' রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজারে ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় উদ্ধার কার্যক্রম অংশগ্রহণ করে। সেখানে দুর্ঘটনায় নিহত ৩ ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করার বীরত্বপূর্ণ কাজে পদক পেয়েছে এই কুকুর 'চিতা'।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২৩
এসজেএ/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।