ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শুরু হলো ‘তিন দশকের কবিতা’ শীর্ষক আয়োজন, বহুমুখী পর্যালোচনার আড্ডা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৩
শুরু হলো ‘তিন দশকের কবিতা’ শীর্ষক আয়োজন, বহুমুখী পর্যালোচনার আড্ডা

ঢাকা: অনলাইন ম্যাগাজিন ‘পরস্পর’র উদ্যোগে ‘তিন দশকের কবিতা’ শিরোনামের শুরু হলো অনুষ্ঠানমালা।   আয়োজকরা জানিয়েছেন, কবিতার আলাপ আলোচনায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১২টি সেশন অনুষ্ঠিত হবে।

শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কাঁটাবনের পাঠক সমাবেশে এই আয়োজনের প্রথম অধিবেশনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনজন গুরুত্বপূর্ণ কবি- জুয়েল মাজহার, কুমার চক্রবর্তী ও চঞ্চল আশরাফ। সঞ্চালনায় ছিলেন কবি সোহেল হাসান গালিব। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন কবি সেঁজুতি জাহান।

আলোচনায় আশির দশকের কবিতা নিয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সম্পাদক কবি জুয়েল মাজহার বলেন, আশির দশকে যেসব কবিরা এসেছিল, তারা নতুন কবিতা লিখতে এসেছিল এবং সেটা সমবায়ী কবিতা লিখতে আসেনি। তারা তাদের প্রত্যেকের কণ্ঠস্বর আলাদা করতে চেয়েছিলেন। এটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। তাদের ভাষা ও চিন্তার জগত সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের মধ্যে কোথাও মিল পাওয়া যাবে না। এদের কারও লেখার সঙ্গে কারও লেখা মিলবে না। সেদিক থেকে আশির দশকের কবিরা প্রসিদ্ধি অর্জন কি করেছেন না করেছেন সেটি তারা ভাববেন, কিন্তু আমি একটা লক্ষ্যযোগ্য ব্যাপার আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। সেটি হলো আশির প্রধান যারা কুশীলব, তারা প্রত্যেকেই নিজস্ব জগত নির্মাণ করেছেন। তাদের ভাবনার জগত নির্মাণ করেছেন। প্রত্যেকের একটা সিগনেচার আছে। নাম মুছে দিলেও আমি বলতে পারবো এটা সুব্রতর কবিতা নাকি এটা মাসুদ খানের কবিতা। আমার মনে হয় একজন কবির এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কিছু থাকতে পারে না।

কবি জুয়েল মাজহার আশির দশকের কবিদের প্রতি অভিযোগ এনে বলেন, আশি সম্পর্কে আমার একটা অভিযোগ আছে। আশির প্রধান কুশীলবদের মধ্যে একটা জিনিস আপনি লক্ষ্য করবেন- আমরা যে মাটি থেকে বেড়ে উঠেছি, আমাদের যে জীবনের বাস্তবতা, আমরা কি আমাদের হারিয়ে যাওয়া শব্দ, শৈশবে শোনা শব্দগুলো আমাদের কবিতায় তুলে এনেছি? আমাদের শৈশবের অনেক শব্দ হারিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীতে প্রতিদিন বহু ভাষা মরে যাচ্ছে। কবির দায়িত্ব হলো পুরনো শব্দকে নতুন টাকার মতো বাজিয়ে দেখা। আমি তাদের কাছে আর্জি জানাচ্ছি- এই কবিরা তাদের কবিতায় রূপক তৈরি করে, নতুন জগত তৈরি করে এমন প্রমিত বাংলা শব্দগুলো ব্যবহার করা।

কুমার চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশের কবিতার বৈপ্লবিক যে পরিবর্তন, সেটা হওয়ার অন্যতম সাবজেক্টিভ কারণ আমাদের মহান স্বাধীনতা। কিন্তু আমাদের জায়গা থেকে সেরকম কবিতা ওইভাবে লেখা হয়েছে কিনা, তা প্রশ্ন রাখে। আর কবিতার যে পরিবর্তন, এটা হচ্ছে একটা মনগত পরিবর্তন। এই তিন দশকের কবিতার মধ্যে ছন্দের প্রত্যাবর্তন একটা বিশাল ব্যাপারের মতো কাজ করেছে। অনেকে আবার কবিতা না লিখে ছন্দ লিখছে। ছন্দ সচেতনতার কারণে অনেক সময় কবিতা মার খেয়ে যায়। কবিতার ভেতর থেকে যদি ছন্দটা আসে, কবিতাকে আশ্রয় করার জন্য, সেই কবিতাটাই সুন্দর হয়ে উঠে। সামগ্রিকভাবে আমি বলবো যে এই তিন দশকের কবিতা একটা কালপর্ব। এর মধ্যে বিস্ময়কর যেটুকু আছে সেটা চিহ্নিত করার প্রয়োজন আছে।

চঞ্চল আশরাফ বলেন, বাংলা কবিতার ইতিহাসটা আমার কাছে খুবই গোলমেলে বলে মনে হয়েছে। কবিতার পরিবর্তন কখন হয়? যখনই দীর্ঘকাল একই আঙ্গিকে একই বিষয় বা দৃষ্টিভঙ্গি বর্জিত থাকে না, একটা স্থবরিতা গ্রাস করে, তখন কিন্তু পরিবর্তনটা হয়। শুধু পরিবর্তনের জন্য পরিবর্তন কিন্তু সাহিত্যে কখনো হয়নি। আমাদের এখানে সংবেদনশীলতার বিবর্তন নেই। আমাদের সামনে কোন সংবেদনশীলতাই নেই। আমাদের সামনে কি আছে? আমাদের সামনে কবি আছে, তাদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ আছে এবং সেই অসন্তোষ থেকে আমরা নতুন কবিতা সৃষ্টি করছি। নতুন কবিতা লেখার জন্য যে দৃষ্টিভঙ্গি, যে জীবন দৃষ্টি, যে শিল্পদৃষ্টি দরকার, এবং সেটার একটা ভিন্নতা প্রতিষ্ঠা করা দরকার, আবিষ্কার করা দরকার, সেটা আমাদের এখানে আছে কি না সেটা ভাবার দরকার।

স্বাধীনতার এক দশক পর বাংলাদেশের কবিতার যে বাঁক-বদল, নতুন কবিতার যে ধারা তার বহুমুখী পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে জমে ওঠে আড্ডা। দর্শক-আলোচকের প্রশ্নোত্তর পর্বে আরও প্রাণসঞ্চার করে অনুষ্ঠানে।

‘কবিতা পাঠক থেকে দূরে সরে যাচ্ছে কি না?’ এমন প্রশ্নের জবাবে কবি জুয়েল মাজহার বলেন, আমাদের স্কুলগুলোতে যখন কবিতা পড়ানো হয়, এবং যিনি কবিতা পড়ান, তিনি কবিতা কতটা বোঝেন সেটি একটা ব্যাপার। এজন্য ছোট থেকেই আমরা কবিতার মূল ভাবটা ধরতে পারি না। ফলে কবিতা আস্তে আস্তে ছোট থেকেই আমাদের কাছ থেকে সরতে থাকে।

‘কবিতা কি এলিট শ্রেণির?’ এবং ‘কবিতার গন্তব্য কোথায়?’  এমন প্রশ্নের জবাবে কবিরা বলেন- শাস্ত্রীয় সঙ্গীত খুব সহজে সাধারণ মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারে না। আবার সাধারণ গানগুলো সকলেই শোনে। কবিতাও এমন। আর কবিতা একটা চলমান বিষয়। এর নির্দিষ্ট কোন গন্তব্য নেই।

অনুষ্ঠানে তিন দশকের কবিতার একটি সংকলন প্রকাশের প্রয়োজনীয়তার কথা উঠে আসে। কবি চঞ্চল আশরাফ সংকলনটি সম্পাদনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আদর্শ প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী মাহাবুব রহমান তাৎক্ষণিকভাবে আগ্রহ জানান সংকলনটি প্রকাশের ব্যাপারে। সিদ্ধান্ত হয় 'তিন দশকের কবিতা' শিরোনামে সংকলনটি আদর্শ থেকে প্রকাশিত হবে ২০২৪-এর বইমেলায়।

আলোচনা আড্ডা শেষে কবি জুয়েল মাজহারের জন্মদিন উপলক্ষে কেট কাটার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

অনুষ্ঠানে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন কবি হাসান রোবায়েত, শেখ ফিরোজ আহমেদ বাবু, আব্দুর রাজ্জাক, রণজিৎ দাশ, সারাজাত সৌম, পারভীন মিনু, শাহানা পারভিন, মহসিন চৌধুরী জয়, মণিকা চক্রবর্তী, শামস আল মোমিন, নভেরা হোসেন, সাবেরা তাবাসসুম, ধ্রুব সাদিক সহ অন্যান্য বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিক ও শিল্পীরা।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২৩
এইচএমএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।