ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এক টাকায় রোগী দেখেন ডা. সুমাইয়া

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৩
এক টাকায় রোগী দেখেন ডা. সুমাইয়া

রাজশাহী: দেশে কিছু কিছু ডাক্তারদের ভিজিট দৌরাত্ম্য থাকলেও ব্যতিক্রমও আছে। যারা অল্প ভিজিটে রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন।

৫০০ থেকে ১০০০ টাকা ক্ষেত্র বিশেষে দুই হাজার টাকা নিয়ে যারা রোগীদের চিকিৎসা দেন, তাদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে অনেক সময় বিনা পয়সায় সেবা দেন কেউ কেউ। তাদের একজন রাজশাহীর চিকিৎসক সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল। বাবার ইচ্ছা পূরণে জনসেবামূলক এ উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

সুমাইয়ার চেম্বার রাজশাহীর সাহেব বাজার মনিচত্বরে একটি ওষুধের দোকানে। প্রাথমিকভাবে দোকান ঘরেই তিনি প্রতি শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রোগী দেখেন। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা তার এমন চিন্তাধারা নিয়ে ব্যাপক খুশি। তারা জানিয়েছেন, যেখানে হাজার টাকার বেশি ভিজিট দিয়ে সেবা পাওয়া দুষ্কর, সেখানে মাত্র ১ টাকা নিয়ে উন্নত মানের চিকিৎসা দেন মীর মোজাম্মেল আলীর মেয়ে সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল।

মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সকালে মহানগরীর বাসিন্দা জুহুরা এসেছেন ডাক্তার সুমাইয়ার কাছে চিকিৎসা নিতে। কথা হলে তিনি বলেন, ডাক্তার সুমাইয়া খুব দারুণ একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। অনেক সময় বেশি টাকা দিয়েও ডাক্তারের কাছে সেভাবে সেবা পাওয়া যায় না। কিন্তু তিনি মাত্র এক টাকা দিয়ে অনেক সময় নিয়ে বেশ ভালোভাবেই সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন। চিকিৎসকদের কাছে আমরা অনেক সময় ভালো ব্যবহার পাই না। কিন্তু সুমাইয়ার সেবা ও ব্যবহার দুটোই খুব ভালো।

ফয়জুল নামে এক রোগীর ভাষ্য, এখন বেশিরভাগ ডাক্তার এমবিবিএস পাস করে ব্যবসার মতো টাকা ইনকামে নেমে যায়। কিন্তু সুমাইয়া মানুষের সেবার জন্য এক টাকায় চিকিৎসা দিচ্ছেন। এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আমি ফেসবুকে জানতে পেরে চিকিৎসা নিতে এসেছি। উনি আমার সমস্যাগুলো শুনে প্রেসক্রিপশন দিলেন। মাত্র এক টাকার ভিজিটেই ডাক্তারি পরামর্শ পেলাম। আশা করছি এলাকার হত দরিদ্ররা তার কাছে সেবা পেয়ে উপকৃত হবেন।

২০১৫ সালে রাজশাহীর নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন সুমাইয়া বিনতে মোজাম্মেল। বড় চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। কিন্তু সরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাননি তিনি। পরে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজে। সম্প্রতি এমবিবিএস পাস করে ইন্টার্নও শেষ করেছেন তিনি। রাজশাহীর প্রাইভেট একটি ক্লিনিকে চাকরির পাশাপাশি বিসিএস’র প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর এর পাশাপাশি করছেন জনসেবা।

বাংলানিউজ এ মহৎ উদ্দেশ্যের বিষয়ে কথা বলে ডাক্তার সুমাইয়ার সঙ্গে। জানান নিজের ও বাবার স্বপ্নের কথা। বলেন, আমার বাবা ‘এক টাকার চিকিৎসা’র লিফলেট ছাপিয়ে এনেছিলেন। সেটিকে আমি ফেসবুকে পোস্ট করি। এর পর থেকেই চেম্বারে রোগীদের ভিড় বাড়তে থাকে। আমার বাবার জনসেবার স্বপ্ন ছিল। তিনি নিজেও কিছু করার চেষ্টা করেন। আসলে এক টাকা তো কোনো টাকা না। আমার একটি চ্যারিটি ফান্ড আছে। সেখানে এই টাকাগুলো যাবে। এই টাকাগুলো মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের কাজেই ব্যয় করা হবে।

তিনি আরও বলেন, আমার বড় বোন ডেন্টিস্ট, মেজ বোনও ডাক্তার, এক ভাই প্রকৌশলী। আমাদের ইচ্ছে ছিল বাবার দোকানেই আমরা তিন বোন মিলে এ সেবা চালু করবো। তবে দুই বোন গর্ভবতী থাকায় তারা এখন বসতে পারছেন না। আমি শুরু করেছি।

সুমাইয়ার বাবা মীর মোজাম্মেল আলী বলেন, ইচ্ছে ছিল আমার চার ছেলে-মেয়েই ডাক্তার হবে। তিন মেয়ে ডাক্তার হয়েছে, আরেকজন ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল, তারা মানুষের সেবা করবে। যেহেতু আমরা ডাক্তার হতে পারিনি, তাই ছেলে-মেয়েদের মধ্য দিয়েই স্বপ্নটা পূরণ করার চেষ্টা করেছি।

ডাক্তারদের বদনাম আছে, তারা কসাই, মানুষের টাকা খসায়। অন্তত সেটা ঘোঁচানোর জন্য এক টাকা ভিজিটের রোগী দেখার উদ্যোগটা ভালো। আমার মেয়েরা যেন জনসেবা অব্যাহত রাখতে পারে এবং সেবার মাধ্যমে রাজশাহীর মানুষ যেন উপকৃত হতে পারে সেজন্য সবার কাছে দোয়া চাই।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৩
এসএস/এসএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।