ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নীরবে বেড়েই চলেছে কলার দাম

তানভীর আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২৩
নীরবে বেড়েই চলেছে কলার দাম

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বিশেষ করে নিত্য পণ্যের দাম বেড়েছে লাগামহীন।

সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে সবধরনের তেলের দাম বৃদ্ধিতে। ডলার সংকটসহ বেশ কিছু কারণে আমদানি পণ্যের দাম তো বেড়েছেই। নীরবে বেড়েছে দেশিয় উৎপাদিত পণ্যের। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কলা।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ট্রাকের ভাড়া বেড়েছে। এতে করে কলা পরিবহনের খরচও বেড়েছে। তাই বারোমাসি এ ফল বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এ দাবি করেছেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা।

বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোর, বরিশাল, বগুড়া, রংপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর এলাকায় কলা চাষ হয়। সারা বছর বাজারে বিভিন্ন আকার ও জাতের কলা পাওয়া যায়। ফলটি দেশে ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হলেও প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে এর দাম।

যেসব এলাকায় চাষ হয়, উৎপাদনের পর কাঁচা বা পাকা সব ধরনের কলা নিয়ে আসা হয় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে। বড় ট্রাকের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা কলা নিয়ে আসেন ঢাকা। এ ছাড়া অন্যান্য জেলা-উপজেলায়ও সরবরাহ করা হয়। ওয়াইজঘাট ও বাদামতলীতে বরিশাল, পিরোজপুর, বাগেরহাট, যশোর, ফরিদপুর থেকে কলা সরবরাহ হয়।

দাম পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জাতভেদে কলার হালি ৩০-৫০ টাকা হলেও, টং দোকানে প্রতি পিস সাগর কলা বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকায়। হালি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ছোট আকারে চম্পা কলা বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। হালি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২২ অর্থবছরে ফলের উৎপাদন বেড়েছে ১৭ দশমিক ২১ শতাংশ। এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছে কলা। সারাদেশে ৭ দশমিক ৩৪ লাখ হেক্টর জমিতে ১ দশমিক ৪৩ কোটি টন ফলন হয়েছে। যেখানে গত অর্থবছরে প্রায় ৭ দশমিক ২৯ লাখ হেক্টর জমিতে ১ দশমিক ২২ কোটি টন চাষ হয়েছিল।

চলতি অর্থবছরে প্রতি হেক্টরে গড়ে ১৯ দশমিক ৫৩ টন ফল উৎপাদিত হয়েছে। যা গত বছরে ছিল ১৬ দশমিক ৭৪ টন। ২০২২ অর্থবছরে ৮৮ হাজার ৯৩৮ হেক্টর জমিতে ২৯ দশমিক ৭৯ লাখ টন কলা উৎপাদন করেছিল কৃষকরা। বছরের ব্যবধানে কলার উৎপাদন বেড়েছে ৯ দশমিক ১৯ লাখ টন। যদিও ২০২২ অর্থবছরে কলা চাষের জমি ২ হাজার ৫২৯ হেক্টর কমেছে, তবে এর উৎপাদন আমের চেয়ে বেশি ছিল।

নরসিংদী, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ায় ১৫ দশমিক ৯১ লাখ টন কলা উৎপাদন হয়েছে, যা মোট উৎপাদনের ৫৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ৭ লাখ ৯ হাজার টন কলা উৎপাদন হয়েছে নরসিংদীতে। গত অর্থবছরে মোট ফল উৎপাদনের প্রায় ২০ দশমিক ৭৮ শতাংশ কলা ছিল। তারপর তরমুজ (১৭.৪৫ শতাংশ), আম (১৬.৪ শতাংশ), কাঁঠাল (১৩.২১ শতাংশ), এবং পেঁপে (৪.৯৮ শতাংশ)।

কলার দাম বাড়ার বিষয়ে মগবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী এহসান রফিক বলেন, আড়ত থেকে এখন দ্বিগুণ দামে কলা কিনতে হচ্ছে। আমরা বাড়তি দামে বিক্রি না করলে লাভ করতে পারব না। অবশ্য, দাম বাড়লেও কলার চাহিদা আগের চেয়ে বেড়েছে। আগে যে পরিমাণে কলা বিক্রি হতো, এখন তারচেয়ে অনেক বেশি বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি কলা ব্যবসায়ী করিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে কলার আমদানি আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে তেল-সার-যাতায়াত-লেবার খরচ বেড়ে যাওয়ায় কলার উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এ কারণে অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কলার দামও বেড়েছে। আগে চুয়াডাঙ্গা থেকে যে সাগর কলার পোন (৮০ পিস) ৫০০ টাকা দিয়ে আনতাম, তা এখন ৬০০ টাকা হয়ে গেছে। তেলের দাম বাড়ায় আমাদের যাতায়াত খরচও বাড়ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২২
টিএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।