ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বৈষম্য বিলোপ আইন পাসসহ ৬ দফা দাবি হরিজনদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২২
বৈষম্য বিলোপ আইন পাসসহ ৬ দফা দাবি হরিজনদের

ঢাকা: দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় হরিজনদের জীবনমান উন্নয়নে বৈষম্য বিলোপ আইন পাসসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ।

বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বৈষম্য বিলোপ আইন পাসের দাবি, বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার শান্তাহার শহরে হরিজন যুবক মিঠুন বাঁশফোর হোটেলে বসে খাওয়ার অধিকার চাওয়ার অপরাধে গরম তেলে ঝলসে দেওয়ার প্রতিবাদ, গোপীবাগ রেলওয়ে হরিজন কলোনীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন হরিজন কলোনি উচ্ছেদের প্রতিবাদ এবং স্থায়ী আবাসন ও আউটসোর্সিং বাতিলের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।

জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই সংবাদ সম্মেলের আয়োজন করে বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি কৃষ্ণ লাল বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন এবং পূর্ণ মানবাধিকার ও সমমর্যাদার অধিকারী। সংবিধানেও সমতা, সমান সুযোগ এবং বৈষম্য বিরোধী বিধানাবলী লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। দেশে বসবাসরত এক বিশাল জনগোষ্ঠী যারা হরিজন নামে পরিচিত, যারা জাতিপ্রথা, পেশাগত কারণে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বহুমুখী ঘৃণা-বৈষম্য-বঞ্চনার শিকার।

দেশে ১৫ লাখ হরিজন জনগোষ্ঠীর বসবাস জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ডিজিটাল যুগে মানুষ যখন বহুমুখী শিক্ষায় উন্নত শিখরে পৌঁছানোর প্রচেষ্টায় প্রতিযোগিতা করছে, ঠিক সেই সময়ে আমরা হরিজন জনগোষ্ঠী ন্যায্য অধিকার চাওয়ার কারণে আমাদের গরম তেলে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। গত ১১ ডিসেম্বর বিকেলে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার শান্তাহার শহরে এশিয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁর কর্মচারীরা হরিজন যুবক মিঠুন বাঁশফোরকে মারধর করে কড়াইয়ের গরম তেলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এতে তার ডান হাত ঝলসে যায়। মিঠুনকে প্রথমে আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়া হয়। একটা স্বাধীন রাষ্ট্রে হরিজনদের প্রতি এই বর্ণবাদী আচরণ রীতিমতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।

তিনি আরও বলন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিছিয়ে পড়া হরিজন জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকার কথা চিন্তা করে পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদের সরকারি নিয়োগে জাত হরিজনদের জন্য ৮০% কোটা বরাদ্ধ রেখে প্রজ্ঞাপন দিয়েছেন। কিন্তু নিয়োগ প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কৌশলে অর্থ বাণিজ্যের জন্য লিখিত পরীক্ষার বিভিন্ন কৌশল করে নিয়োগ বঞ্চিত করছে। ফলে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা বা সে জাত হরিজন থাকলেও নিয়োগ হচ্ছে না। নতুন করে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগে রমরমা বাণিজ্য করে চলেছে রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট কিছু দলীয় লোক। আউটসোর্সিং পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে নিয়োগ নিতে হলে গুণতে হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে লাখ টাকা।

কৃষ্ণ লাল আরও বলেন, অন্যান্য জনগোষ্ঠীর নিজস্ব মাথাগোঁজার ঠাঁই থাকলেও ভূমিহীন হরিজন জনগোষ্ঠীর নিজস্ব কোনো জায়গা-জমি বা ঘরবাড়ি নেই। হরিজন জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষ সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভার কলোনি বা রেল লাইনের পাসে বসবাস করে। ৯৬ বর্গফুটের একটি ঘরে বাবা-মা, ছেলে, ছেলের বৌ, মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনিসহ পরিবারের ৭/৮ জন মানবেতর জীবন-যাপন করে। রাষ্ট্র কর্তৃক কিছু আবাসনের কাজ চলমান থাকলেও জাত হরিজনরা শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। কারণ হরিজনরা তিন পুরুষকাল একই ঘরে জন্ম নিয়ে মৃত্যুবরণ করছে। এখন নতুন আবাসন হলে যাদের চাকরি আছে তারা আবাসন পাবে, যাদের চাকরি নেই তারা আবাসনে থাকতে পারবে না। দেশের সংবিধানের ১১ ধারায় বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে, মানবসত্ত্বার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে। কিন্তু হরিজন জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ নেই।

তিনি আরো বলেন, গোপীবাগ রেলওয়ে হরিজন কলোনী প্রায় ৫০ বছর যাবৎ প্রায় ১২০ টি পরিবার বসবাস করে আসছিল। ২০১৯ সালের দিকে রেলওয়ে সম্প্রসারণের নামে হরিজন কলোনী উচ্ছেদের করার জন্য আবাসনগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়। বর্তমানে হরিজনরা যততত্রভাবে বসবাস করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশের কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে না, আজ গোপীবাগ রেলওয়ে হরিজন কলোনীর প্রায় ৩০০ মানুষ গৃহহীন। তাদের স্থায়ী আবাসনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর আমাদের আবেদন।

তিনি বলেন, দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। এদেশের নাগরিক হিসেবে হরিজনরাও উন্নয়নের অংশিদারিত্ব হতে পারে। হরিজনরা যাতে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সম-অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারে তাই আমরা বৈষম্য আইন বিলোপসহ ৬ দফা দাবি জানাচ্ছি।

তাদের দাবিগুলো হলো- বর্ণ বৈষম্য বিলোপ আইন দ্রুত পাস করতে হবে এবং আইনটি কার্যকরী প্রচারাণার জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে; হোটেল রেস্তোরাঁয় হরিজনদের প্রতি বৈষম্য করা যাবে না, তাদের অধিকার দিতে হবে; দেশের সব জেলা শহর, উপজেলা শহর, ইউনিয়ন, বিভিন্ন হাটবাজার, গ্রাম-গঞ্জসহ সব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং বসবাসরত হরিজনদের স্থায়ী ও আধুনিক জীবন যাপনের সব সুবিধাসহ বাসস্থানের বাস্তাবায়ন করতে হবে; সরকারি-বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, সিটি কপোরেশন, পৌরসভাসহ সব প্রতিষ্ঠানে ৮০% কোটার যথাযথ বাস্তাবায়ন এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী সবকল হরিজনকে চাকরি দিতে হবে; পরিচ্ছন্নকর্মী পদের লিখিত পরিক্ষা শিথীল করতে হবে; আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ বাতিল করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের মহাসচিব নির্মল চন্দ্র দাস, সহ-সভাপতি লেবু বাশকোর, ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক বিমল ডোম, বাংলাদেশ হরিজন ছাত্র ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আকাশ বাশকোর প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০২২
এসসি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।