ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ায় সস্তা শ্রমের বাংলাদেশিরা

তামিম মজিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৮
মালয়েশিয়ায় সস্তা শ্রমের বাংলাদেশিরা কুয়ালালামপুর রেস্তোরাঁয় কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকরা। ছবি: বাংলানিউজ

কুয়ালালামপুর (মালয়েশিয়া) থেকে: হাড়-খাটুনি পরিশ্রমের জন্য পুরো মালয়েশিয়াজুড়ে বাংলাদেশিদের সুনাম থাকলেও শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছেন না শ্রমিকরা। মজুরির দিক দিয়ে সর্বনিম্ন বেতনধারী শ্রমিক হলেন প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকেরা। 

ভুক্তভোগীরা বলছেন, যেখানে ৮ ঘণ্টা কাজ করে চীন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া কিংবা ভিয়েতনামের লোকজন মাসে বেতন পান সর্বনিম্ন ৩ হাজার মালয়েশীয় রিঙ্গিত; সেখানে বাংলাদেশিরা ১২ ঘণ্টা কাজ করে পাচ্ছেন সর্বোচ্চ দেড় হাজার রিঙ্গিত। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়ায় ৩০ হাজার টাকায়।

 

তবে এ ধরনের বৈষম্যের কারণ হিসেবে ‘অদক্ষ ও অবৈধ’ভাবে বিদেশে পাড়ি জমানোকেই দায়ী করছেন তারা।  

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মালয়েশিয়ায় কতসংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক  রয়েছেন, এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে বলা হয়ে থাকে, বৈধ-অবৈধ মিলে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছেন তেরটি রাজ্য ও তিনটি ঐক্যবদ্ধ প্রদেশ নিয়ে গঠিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে। এর মধ্যে অবৈধ রয়েছেন প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি।  

তবে প্রবাসীরা বলছেন, অবৈধ প্রবাসীদের বেশিরভাগই সাগর পথে পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেন। যার কারণে এই সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।  

পড়ুন>> যেখানে অনন্য ইউএস-বাংলা

রাজধানী কুয়ালালামপুর ছাড়াও মালয়েশিয়ার পর্যটনসমৃদ্ধ এলাকাগুলোর বিভিন্ন হোটেল-মোটেল কিংবা রেস্তোরাঁয় প্রচুর বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন। তবে বাংলাদেশের বেশির ভাগ শ্রমিক নিয়োজিত নির্মাণ খাতে।  

কুয়ালালামপুরের একটি ক্যাফেতে কাজ করেন কুমিল্লার হুসাইন শান্ত। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, যারা মালয়েশিয়ায় আসেন, তাদের বেশির ভাগই অদক্ষ জনশক্তি। ফলে অন্যদেশের চেয়ে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েন বাংলাদেশিরা। এজন্যই বেশি পরিশ্রম করেও কম বেতন পান তারা।  

কুয়ালালামপুর রেস্তোরাঁয় কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকরা।  ছবি: বাংলানিউজকুয়ালালামপুরের আরেকটি ক্যাফেতে কাজ করেন মো. মুহিবুল্লাহ। বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর করে দুই বছর আগে  মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান স্টুডেন্ট ভিসায়।  

কিন্তু দেশটিতে এসে জানতে পারেন তার কলেজ কালো তালিকাভুক্ত। তাই আসার পর থেকেই অবৈধ অভিবাসী হয়ে পড়েন তিনি। অবৈধ হয়েই গত ২ বছর ধরে থাকছেন দেশটিতে।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এখানে (মালয়েশিয়া) বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি সস্তা শ্রমে কাজ করছে। কারণ এখানে শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি আসছে না। আর এ সুযোগটা নিয়ে নিচ্ছে ভারত, চায়নাসহ আরও বেশি কয়েকটি দেশের শ্রমিকরা।  

সেলানগর রাজ্যের বাতুতে ভারতীয় মালিকানাধীন একটি দোকানে কাজ করেন নারায়ণগঞ্জের রহমত আলী। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিকরা সবচেয়ে কষ্টের কাজ করেন কিন্তু বেতন পান অনেক কম। তবে আমরা যারা দোকানে কাজ করি, তারা মোটামুটি আরামেই আছি।  

কথা হয় সেলানগরে থাকা আরেক বাংলাদেশি শ্রমিক নেত্রকোণা জেলার আটপাড়ার জুবায়ের হোসেনের সঙ্গে। একটি কোম্পানিতে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি।  

তার ভাষ্য, আমরা সাগর পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ড হয়ে ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ায় আসি। এখনও বৈধ হতে পারিনি। তাই অন্যান্য শ্রমিকদের তুলনায় আমাদের বেতন কম।  

বাংলাদেশি শ্রমিকরা কেমন? এমন প্রশ্নের উত্তেরে গেনটিং হাইল্যান্ডের ক্যাফে অ্যারেনার স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ নাজমির বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশিরা অত্যন্ত পরিশ্রমী। তারা বেশির ভাগই ভালো। তবে শতকরা ২ শতাংশ আছেন যারা খারাপ কাজে জড়িত।  

তবে তাদের বেতন কম কেন? জানতে চাইলে এই মালয়েশীয় বলেন, বাংলাদেশিরা ইংরেজি জানে না। তাই ভালো পজিশনে চাকরিও পায় না। ফলে নিম্ন বেতনেই তাদের বেশি সময় কাজ করতে হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৮
টিএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ