ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

৫ সেক্টরে নিয়োগ

মালয়েশিয়ায় ৩ বছরে ১৫ লাখ কর্মী যাচ্ছে না!

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬
মালয়েশিয়ায় ৩ বছরে ১৫ লাখ কর্মী যাচ্ছে না!

ঢাকা: জিটুজি প্লাস (সরকার ও বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে) প্রক্রিয়ায় পাঁচটি খাতে কাজ করার জন্য কর্মী নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া সরকার। তবে চুক্তির আগের সমঝোতা অনুযায়ী আগামী তিন বছরে ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী দেশটিতে যাওয়ার কথা থাকলেও তা অনিশ্চয়তায় ঝুলে যাচ্ছে।

এমনকি আদৌ ১৫ লাখ কর্মী সেখানে যাবে কিনা এ নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এ সর্ম্পকিত চুক্তি সই করতে মালয়েশিয়ার সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
 
প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকছেন দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী রিচার্ড রায়ট আনক জিম। থাকছেন ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল (পলিসি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল) মোহাম্মদ সাহার দারুসমান, শ্রম বিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ জেফরি বিন জোয়াকিম, আন্ডার সেক্রেটারি (লেবার পলিসি ডিভিশন) বেটি হাসান, মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কর্মকর্তা রবার্ট দাপান, অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি (লেবার অব পলিসি ডিভিশন) সতিশ শ্রীনিভাসান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি (ফরেন ওয়ার্কাস ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন) মোহাম্মদ জামরি বিন মাত জাইন এবং ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ান রাষ্ট্রদূত নূর আশিকান বিনতি মোহাম্মদ তিয়াব।
 
এতে কুয়ালালামপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম এবং শ্রম কাউন্সিলর সায়েদুল ইসলামেরও উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব কামরুন নাহার জানান, সম্ভাব্য চুক্তি অনুযায়ী কর্মী নিয়োগের পাঁচ সেক্টর হচ্ছে- কনস্ট্রাকশন, সার্ভিস, প্লান্টেশন, অ্যাগ্রিকালচার এবং ম্যানুফ্যাকচারিং।

সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চুক্তির আগে যে সমঝোতা হয়েছে, সে অনুযায়ী আগামী তিন বছরে মালয়েশিয়ার ওই পাঁচ সেক্টরে ১৫ লাখ শ্রমিক নেওয়ার কথা। কিন্তু দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাহিদ হামিদি তার প্রায় সব মিটিংয়েই তিন বছরের বিষয়টি এড়িয়ে পাঁচ বছরের কথা বলছেন।

তার সুরে যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী খায়রী জামালউদ্দিনও বলেছেন, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতা দেওয়ার পরই বিভিন্ন শিল্পের মালিকদের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হবে।
 
দু’জনের এ কথায়ই ঝুলে যাচ্ছে তিন বছরে ১৫ লাখ শ্রমিক নিয়োগের বিষয়টি। আর ঝুলে যাওয়ার বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে দিচ্ছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র। সূত্রটি মনে করছে, বৃহস্পতিবারের চুক্তিতে তিন বছরের সময়সীমার বিষয়টি উঠিয়ে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিন বছরে ১৫ লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠাতে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারকের খসড়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এর ১০ দিনের মাথায়ই এ চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে।
 
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় (সরকার টু সরকার) মালয়েশিয়ায় পাঠানোর ক্ষেত্রে কর্মীপ্রতি অভিবাসন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ থেকে ৩৭ হাজার টাকা। এছাড়া প্লেন ভাড়া, ইন্স্যুরেন্স, স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট খরচ বহন করবেন নিয়োগকর্তা (মালয়েশিয়া) পক্ষ। নিয়োগকর্তা কর্মীর (যোগ্যতাভিত্তিক) চাহিদা জানাবে বাংলাদেশ সরকারকে।
 
বাংলাদেশ সরকার জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তালিকা অনুযায়ী কর্মী বাছাই করবে। এ বাছাই করা তালিকা পরে বিএমইটি দেবে বায়রাকে। বায়রা এ ডাটাবেজ থেকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ভিসা প্রসেসিং, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও বহির্গমন সেবা দেবে। ভিসা প্রসেসিংসহ কর্মীর ডাটাবেজ এবং অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হবে অনলাইনে। কর্মীদের বেতন পরিশোধ করা হবে ব্যাংকের মাধ্যমে।
 
কর্মী পাঠানোর এ কার্যক্রম তদারকি করবে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ। যদি কোনো কারণে এই গ্রুপ ব্যর্থ হয়, তাহলে উভয় দেশের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে তা মনিটরিং করা হবে।
 
মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, আগে মালয়েশিয়ায় প্লান্টেশন সেবা কাজে  সুযোগ পেতেন বাংলাদেশ। চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর প্লান্টেশনের পাশাপাশি উৎপাদন, কনস্ট্রাকশন ও সেবাসহ বিভিন্ন খাতে কাজের সুযোগ পাবেন বাংলাদেশিরা। তাছাড়া, আগে মালয়েশিয়ায় পুরুষ কর্মীরা যেতে পারতেন কেবল। এ চুক্তির পর নারী কর্মীরাও যেতে পারবেন।
 
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব বলেন, এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ যোগ্যতাভিত্তিক পছন্দের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব আব্দুর রউফ বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। নিজ দফতরে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো নিয়ে একের পর এক মিটিং হচ্ছে। কালই (বৃহস্পতিবার) জানা যাবে। এখন আর সময় দেওয়া সম্ভব নয়।

এদিকে, জিটুজি প্লাস প্রক্রিয়ায় সরকারের বাইরেও বেসরকারিভাবে শ্রমিক নেওয়ার সুবিধা থাকছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) অভিযোগ করেছে, এই সুবিধার বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ করেনি মন্ত্রণালয়। বরং মালয়েশিয়ার বিতর্কিত কোম্পানি সিনারফ্লাক্সকে অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে একতরফা ব্যবসা করবে কোম্পানিটি। বিষয়টি অবগত করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠিও পাঠিয়েছে বায়রা।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬
এমএন/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ