ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ায় নির্যাতিত কিশোরি রিনা

এটা সরকারের প্রতিনিধিত্বকারীদের ব্যর্থতা

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৫
এটা সরকারের প্রতিনিধিত্বকারীদের ব্যর্থতা

ঢাকা: মালয়েশিয়ায় নির্যাতিত বাংলাদেশি কিশোরি রিনার (ছদ্মনাম) রোমহর্ষক বর্ণনায় স্তব্ধ হয়েছেন দেশ ও বিদেশের মানুষ। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।



রিনা মাত্র ১৪ বছরে মালয়েশিয়ায় কাজ করতে গিয়ে যেভাবে বিকৃত ও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং বিচারহীন অবস্থায় রয়েছেন, তাতে উভয় দেশের সরকারেরই গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন মানবাধিকার সংশ্লিষ্টরা।
 
বাংলানিউজে রিপোর্ট প্রকাশের পর মেয়েটিকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনি সহায়তা এবং পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি।
 
সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী রোববার বিকেলে বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের একটি মেয়ে এভাবে বাইরে কাজ করতে গিয়ে নির্যাতিত হবে, সেটা দুঃখজনক। কিভাবে এতো ছোট একটি মেয়ে সেখানে গেল, নির্যাতনের পরেও কেন বিচার পেল না, সেসব নিয়ে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। এভাবে মেয়েরা কাজ করতে গিয়ে নির্যাতিত হওয়ার দায় রাষ্ট্রেরও রয়েছে।
 
তিনি বলেন, আমরা মালয়েশিয়ায় মেয়েটির পরিবারের খোঁজ নিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সাহায্য করবো। এবং পরে সেখানে বিচার কেনো পেল না, সেটিও অধিকতর তদন্তের জন্যে আমাদের সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলবো।
 
সালমা আলী বলেন, এভাবে একটি কিশোরী মেয়ের নির্যাতিত হওয়া এবং বিচার না পাওয়া খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়।
 
মালয়েশিয়ায় এভাবে বাংলাদেশি কিশোরীর নির্যাতিত হওয়া এবং বিচার না পাওয়া জাতীয় আত্মমর্যাদাহীনতা বলে মনে করেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন।
 
রোববার বিকেলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, একজন নারী যেভাবে দেশের বাইরে সহিংসতার শিকার হয়েছে সেটা কাম্য নয়। সেখানে আমাদের সরকারের যারা প্রতিনিধিত্ব করেছে তাদের গাফিলতি লক্ষণীয়। সরকারের প্রতিনিধিত্বকারীদের শুধু বিদেশে লোক প্রেরণের যে ইচ্ছে, সেখানে সাধারণ শ্রমিকদের নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টিতেও নজর দিতে হবে।
 
নূর খান লিটন বলেন, একজন নারীকে যখন দেশের বাইরে পাঠানো হয়, সেটা যে ভিসাতেই পাঠানো হয়, তার দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে সরকারের প্রতিনিধিত্বকারীদের।
 
রিপোর্টে দেখা যায়, মেয়েটি দীর্ঘদিন হাসাপাতালে ছিলেন, তার ওপর বর্বর নির্যাতন চালানো হয়েছে। সেখানে নিশ্চয়ই প্রতিনিধিত্বকারীরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেননি। এতে বোঝা যায়, সরকার যেভাবে নীতি নির্ধারণ করেছে, প্রতিনিধিরা সেভাবে তা কার্যকর করছে না। তারা অনেকটাই ভাবলেশহীন।
 
তিনি বলেন, যারাই দেশের বাইরে গিয়েছেন, দেশের জন্যে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন, তাদের দায়িত্বও সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিদের নিতে হবে।
 
রিনার এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বিদেশে বাংলাদেশের আত্মমর্যাদার শূন্যতার বিষয়টিও পরিষ্কার হয়েছে। যেভাবে মেয়েটির ওপর বর্বরভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তার যৌনাঙ্গে পাশবিক অত্যাচার করা হয়েছে, এ ধরনের আচরণ মানুষের সঙ্গে তো নয়ই, পশুর সঙ্গেও করা হয় না। অথচ মেয়েটি এখনো বিচারহীন অবস্থায় রয়েছে।
 
তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার জায়গা রয়েছে। এতো বর্বর কায়দায় আমাদের মেয়েকে নির্যাতন করা হয়েছে, সেখানে তার জবাবদিহিতার জায়গা রয়েছে।
 
তিনি বলেন, এখানে রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার প্রবাসী নাগরিকের প্রতি যে কোন নির্যাতনের প্রতিবাদ করা এবং বিচার চাওয়া।
 
নূর খান লিটন বর্তমানে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
 
** মালয়েশিয়ায় নির্যাতিত বাংলাদেশি কিশোরীর রোমহর্ষক বর্ণনা (ভিডিও)

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৫
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

মালয়েশিয়া এর সর্বশেষ