ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লন্ডন

স্টুটগার্টের চিঠি

প্রবাসে স্বাধীনতার ভাবনা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮
প্রবাসে স্বাধীনতার ভাবনা

স্টুটগার্ট (জার্মানি) থেকে: স্বদেশের বহু দূরে বিদেশে-প্রবাসে মহান স্বাধীনতা দিবসের মূর্ছনা প্রতিটি প্রবাসীর অন্তরাত্মা ছুঁয়ে যায়। বিরলে বসে ভাবি, কবি রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায়  কতো ঠিকভাবেই না বলেছেন, ‘'স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায় ?'’

কোনও মানুষ স্বাধীনতা ছাড়া বিকশিত হতে পারে না। খাঁচায় বন্দি পাখিটিও বন্দিত্বের ভিতর থেকে বাইরের খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।

ডানা দুটো মেলে স্বাধীন চিত্তে উড়তে না পারার কষ্ট বুকে চেপে একদিন ডানা ঝাপটিয়ে মরে পড়ে থাকে খাঁচার ভিতর।

মানুষ তো সৃষ্টির সেরা জীব। পরাধীনতা একরকম বন্দিদশার সামিল। মানুষ পরাধীনতা কখনোই মেনে নিতে চায় না। এক্ষেত্রে শান্তিকামী মহান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার একটি উক্তি মনে পড়ল:There is no easy walk to freedom anywhere.

কিন্তু পৃ্থিবীর আদি যুগ থেকেই অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী পক্ষ কম শক্তিশালী পক্ষের উপর শাসন, নিপীড়ন, শোষণ আর ক্ষমতার বাহাদুরি, কর্তৃত্ব খাটিয়ে আসছে। আবার যুগে যুগে মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে নিজেদেরকে দাসত্বের শৃঙ্খলমুক্ত করেছে।

জন্মগতভাবেই পরাধীনতার শৃঙ্খল মেনে নিয়ে মানুষ বেশীদিন বাঁচতে পারে না। অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষের ক্রোধ ফুলে ফেঁপে উঠবেই। যুগে যুগে এমনটাই ঘটেছে।

ইতিহাসের পাতায় দেখা গেছে, মানুষ নিজের জীবন বাজি রেখে পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত করেছে নিজের জাতিকে এবং শত্রুমুক্ত করেছে নিজ ভূমিকে। একথাটা বাস্তবে বোঝা সহজ। কারণ, স্বাধীন দেশে জন্ম নেওয়া কোনো মানুষের চেয়ে পরাধীন দেশে বসবাস করা মানুষ স্বাধীনতার মর্যাদা অপেক্ষাকৃত বেশি অনুভব করতে পারে।

আমাদের দেশের মানুষ যখন পরাধীন ছিল, তখনকার কষ্ট ছিল অসহনীয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগের বিভিন্ন পটভূমির রাজনৈতিক ধাপগুলোতে ফিরে তাকালেই আমাদের কারোরই বুঝতে বাকি থাকে না যে, আমরা কোথায় ছিলাম, কত কষ্টে ছিলাম!

আর এখন স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর কোথায় আছি, কি পেয়েছি, তা চোখ মেলে তাকালেই দেখা যায়, অন্তরে অনুভব করা যায়।

 জীবন বাজি রেখে বাংলার সোনার সন্তানেরা সেদিন শত্রুর মোকাবিলা করে আমাদের পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত না করলে আমরা আজ কেমন থাকতাম, কোন অত্যাচার ও বন্দিত্বে থাকতাম তা একবার চিন্তা করলে নিজের অজান্তেই শিউরে উঠি। সেদিন শত্রুর শোষণ, নিপীড়ন আর ক্ষমতার দুঃশাসনের চাপে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল সর্বস্তরের মানুষের। তাই স্বাধীনতাকামী মানুষের যন্ত্রণা ও ক্ষোভ জোয়ারের পানির তোড়ের মতো আছড়ে বাঁধ ভেঙে ফেটে পড়েছিল। লড়াকু মুক্তিযোদ্ধার বন্দুকে, লেখকের কলমে, শিল্পীর গলায় সুরে সুরে আর মমতামাখা গৃহিনীর ভালোবাসার দুর্বার গতিতে পুরো জাতি জেগেছিল স্বাধীনতার মোহন মন্ত্রে। সেদিনের সেই লড়াকু সোনার ছেলেদের আর লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা নিশ্চিন্ত, গর্বিত ও স্বাধীন।

আজ বুঝি, সেদিনের পরাধীন বাংলাদেশে প্রতিটি মানুষের নিশ্বাস নেবার স্বস্তিটুকুও ছিল না। চারিদিকের বাতাস বিষাক্ত ছিল। এজন্যই মানুষ জীবন বাজি রেখেছিল মুক্ত বাতাসে বুক ভরে নিশ্বাস নেবার প্রত্যাশায়, নির্ভিক, স্বাধীন চিত্তে কথা বলতে পারার আশায়।

কিন্তু তার কতটুকু এখন স্বাধীন দেশের মানুষ করতে বা বলতে পারছ সেটা দেখার বিষয়, ভাবার বিষয়। স্বাধীনতাকে কলুষমুক্ত রাখা আজ আমাদের দায়িত্ব। দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠি অস্থিতিশীল জীবন যাপন করলে স্বাধীনতা অর্থবহ হয় না। স্বাধীনতাকে পূর্ণতা দিয়ে সবার জীবনে অর্থবহ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

বিশেষত নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস, উদ্দেশ্য, এবং করণীয় সম্পর্কে শিক্ষাপ্রদান, চর্চা ও ধারণা দেওয়া জরুরি। তাহলে স্বাধীনতার অরুণালোকে মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্ব পালন করা এবং মানুষকে সম্মান জানানোর মূল্যবোধ সবার মধ্যে জাগ্রত করা সম্ভব হবে। সম্ভব হবে সকলের কাছে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দেওয়া।

বাংলাদেশ সময়: ২২২১ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৮
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

লন্ডন এর সর্বশেষ