ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

সুস্থ ও কর্মক্ষম জীবনের জন্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৮
সুস্থ ও কর্মক্ষম জীবনের জন্য জগিং। প্রতীকী ছবি

একবার ইংল্যান্ডে উচ্চ রক্তচাপ বোধ করায় ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার কলেস্টেরল টেস্ট করতে দিলেন। রিপোর্ট পাওয়ার পর ডাক্তার আমাকে আবার দেখা করতে বললেন। আমি গেলে ডাক্তার জানালেন, আমার কোলেস্টেরল লেভেল খুব বেশি।

ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন, আমি নিয়মিত ব্যায়াম করি কিনা। বললাম 'না' ।

জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে দৈনিক কতক্ষণ হাঁটাহাঁটি করি। আমি বললাম, কোনো প্রয়োজন ছাড়া হাঁটাহাঁটিও করি না।

ডাক্তার আশ্চর্য হয়ে বললেন, এটা কিভাবে সম্ভব!

বর্তমানে কানাডায় বসবাস করলেও আমি একজন বাঙালি। অবাক হবার কিছুই নেই! বিনা প্রয়োজনে (অন্যের পিছনে লাগা ছাড়া) আমরা কিছুই  করি না। একজন সুস্থ-সমর্থ মানুষ, অযথা কেন ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করবে! এমনই ধারণা আমাদের।

ফলে 'অযথা' ব্যায়াম করার মনোভাব এবং ব্যায়াম বা শরীরচর্চা আমাদের সামাজিক সংস্কৃতিতে নাই!

বরং সবাই ভাবে, অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে যাবো। ডাক্তার এটা-সেটা চেক করে অনেকগুলো টেস্ট করতে দেবেন। টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে গেলে, মুহূর্তেই প্রেসক্রিপশন লেখা হয়ে যাবে। রুগি জানতেও পারবে না তার কি অসুখ হয়েছে। আমাদের ডাক্তারদের তো কোনোদিন ব্যায়াম করার কথা জিজ্ঞেস করতে শুনিনি।

প্রসঙ্গক্রমে মনে পড়ছে, কয়েকজন ছোট-খাটো ডাক্তার দেখানোর পর, একবার আমি এক বড়ো ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম! ডাক্তার আমাকে দেখে সিটিস্ক্যান করতে বললেন। আমার বাবা সঙ্গে ছিলেন। তিনি সিটিস্ক্যান করতে যেতে প্রস্তুত হলেন। আমি তখন ভার্সিটিতে পড়ি। লোকজনের সাথে কথা বলতে পছন্দ করতাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ডাক্তার সাহেব, আমার মনে হচ্ছে আমার জন্ডিস হয়েছে! কারণ আমার খাবার ইচ্ছে অনেক কমে গেছে। ডাক্তার সাহেব রেগে গেলেন। বললেন, ডাক্তার তুমি না আমি?

অথচ কদিনের মধ্যেই আমার জন্ডিস ধরা পড়েছিল। বাজে ধরনের জন্ডিস হয়েছিল। আমার মা আমার খুব খারাপ অবস্থা থেকে একটা সদকাও দিয়েছিলেন। আমি আর বড়ো ডাক্তারের কাছে যাইনি। একজন ছোট ডাক্তার আমার জন্ডিসের চিকিৎসা করেছিলেন।  

আগে আমার বাবা ডাক্তার দেখিয়ে এলে তাঁকে জিজ্ঞেস করতাম, এতো ওষুধ কেন দিলো? আপনার কি হয়েছে? বাবা বলতেন, জানি না। আমি বলতাম, ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করেননি কেন? বাবা বলতেন, ডাক্তার তো আমার সমস্যার কথাই ঠিকমতো শুনতে চায়নি। কথা শেষ হবার আগেই ডাক্তার বলেন, ঠিক আছে, আর বলতে হবে না। তাই সাহস করে জিজ্ঞেস করতে চাইনি।

আমার বাবা ঢাকা ভার্সিটি থেকে অনার্স-মাস্টার্স করা লোক, যিনি একটা সরকারি সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন; তার অধীনে কত লোক কাজ করতো। তাকেও এমন ভয়ে ভয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হয়।

সব রুগিই ডাক্তারের কাছে সমান হবার কথা। কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি অন্যরকম বলেই কথাটা তুললাম।

মূলকথায় ফিরে আসি। আমার কোলেস্টেরল বেশি মাত্রায় থাকাতে ডাক্তার আমাকে বললেন, আমার জন্যে দুটো অপশন আছে: একটা হলো ওষুধ আর দ্বিতীয়টি হলো ঠিক মতো ব্যায়াম করা ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা। ডাক্তার আমাকে দ্বিতীয়টি করার পরামর্শ দিয়ে একটি খাবার চার্ট ধরিয়ে দিলেন। কিন্তু আমি কি করেছি তা এখন নাইবা বললাম!

কদিন আগে কানাডায় আমার আবার অতিরিক্ত মাত্রার কোলেস্টেরল ধরা পড়লো। ডাক্তার এবারও ব্যায়াম আর "মেডিটেরেনিয়ান ডায়েট" (ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের স্বাস্থ্যপ্রদ খাবার খেতে) করতে বললেন।

আমার স্ত্রীকে আমরা বাসায় মজা করে "গুগল ডাক্তার" ডাকি। সে গুগল করে মেডিটেররানিয়ান ডায়েটে কি কি আছে, বিভিন্ন ডাক্তার কি পরামর্শ দেন, এনএইচএস (ব্রিটিশ ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস) কি বলে ইত্যাদি পরামর্শ দিয়ে থাকে। আমাদের বাসার কার কখন কি খেতে হবে, কোন খাবারে কি খাদ্যগুণ সব আমাদের বাসার গুগুল ডাক্তারই বলে দেন।    

ক'দিন হলো আমাদের গুগুল ডাক্তার জিম করাও শুরু করেছে। জিম ট্রেইনার তাকে খাবারের লিস্ট ও নিয়ম বাতলে দিয়েছে। এতে খাবারের পরিমাণ এতই কম, শুরুতে আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না - "ট্রেইনারের লিস্টের খাবারগুলো কি আমরা আমাদের খাবারের আগে খাবো না পরে খাবো"।

ট্রেইনার রাতে হালকা খাবার খেতে বলেছেন। তার মতে, রাতে সালাদ আর একগ্লাস দুধ খেলেই চলে।

আমরা বাংলাদেশিরা কি ভাবি? ভাবি: আমরা তো খাবারের আগে সালাদ খাই। না হয় খাবারের শেষে একগ্লাস দুধ যোগ করলাম। কিন্তু আসল খাবার গেলো কোথায়?!

সে যা-ই হোক, ট্রেইনারের লিস্টটা হলো সবজি আর ফলসর্বস্ব। এতে ভাত রুটি কিছুই নাই। নাস্তা একটু ভারি হলে সমস্যা নেই। প্রতি ২/৩ ঘন্টার মধ্যে কিছু হালকা ফলমূল/বাদাম খেতে হবে। রাতে ৮ টার পর কোনো খাবার খাওয়া নাজায়েজ। খাবারের পরপরেই শোয়া হারাম! ইত্যাদি ইত্যাদি।

এখানে শিক্ষণীয় হলো, প্রথমত: কর্মক্ষম থাকতে হলে আমাদেরকে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে! নিয়মিত ব্যায়াম কর্মক্ষমতা বাড়ায়। যে পেশায় কোনো শারীরিক পরিশ্রম নেই, তাদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়ামে (হাঁটা, দৌড়ানো, শারীরিক কসরত) দেয়া দরকার। দ্বিতীয়ত, মা-বাবা বয়স্ক হয়ে গেলে আমরা তাদেরকে কোনো কাজ করতে না দেয়াকে সম্মানের মনে করি। কানাডাতে পুরুষ এবং মহিলাদের গড় আয়ু যথাক্রমে ৮০ ও ৮৪ বছর। এই বয়সের লোকজন নিজে বাজার করে, নিজে রান্না করে। আমি ১০১ বছর বয়সের একজনকে একটা ব্যাংকে আমার সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি!

সুস্থ থাকতে হলে আমাদেরকে শারীরিক কসরত করে যেতে হবে। আমাদের বয়স্ক মা-বাবা, নানা-নানী, দাদা-দাদিকেও প্রতিদিন কিছু হালকা কাজ করতে দিতে হবে। তৃতীয়ত, ডায়েট কন্ট্রোল করা সবার জন্যে অত্যন্ত জরুরি। এটি আপনাকে-আমাকে সুস্থ রাখবে।

সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকতে হলে যে সঠিক খাদ্য ও পরিশ্রমী জীবনপ্রণালী অনুসরণ করতে হবে, এ সত্যটি সবারই অনুধাবণ করা দরকার।

# লেখক, কানাডায় অধ্যাপনারত অর্থনীতিবিদ

বাংলাদেশ সময়:...ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৮

জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।