ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

ফুলের রাজ্যে একদিন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
ফুলের রাজ্যে একদিন ফুলের রাজ্যে

হ্যাঁ আপনাকেই বলছি! এড়িয়ে যাবেন না প্লিজ। জীবনের রংগুলোকে আরও রঙিন করে নিতে চান? তাহলে যশোরের বেনাপোলগামী বাসের একটা টিকেট কেটে গদখালি ঘুরে আসুন। খুঁজে পাবেন জীবনের রং, বেঁচে থাকার আশা। 

চোখ বুজে চিন্তা করুন তো, আপনি একটা গ্রামের রাস্তা ধরে হাঁটছেন। যেখানে পথের দুইপাশে নানা রং-এর ফুল ফুটে আছে আর ফুলে ফুলে উড়ছে রঙিন প্রজাপতি।

বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে নানা বর্ণের, নানা গন্ধের ফুলের ছড়াছড়ি। নাম না জানা অনেক পাখিও ওড়াউড়ি করছে গাছের ডালে।  

হেঁটে হেঁটে যতদূর পথ যাচ্ছেন ফুলের ছড়াছড়ি। ভেবে বলুন, তবুও কী মন বিষন্ন হয়ে থাকবে! এই বর্ণিল পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করবে! 

দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের জেলা নড়াইলে এসেছি বেশ কয়েক মাস আগেই। এখানে আসার আগে থেকে পরিকল্পনা ছিলো ফুলের রাজ্য গদখালি যাওয়ার। অবশেষে সময় সুযোগ মিলে গেলে একদিন বরাবরের মতো একাই রওয়ানা হলাম গদখালির উদ্দেশ্যে। নড়াইল থেকে যশোর পৌঁছে শহরে ঘুরে ফিরে বেশ দেরি হলো। শহরের প্রান্তে চাচড়া মোড় থেকে বেনাপোলগামী লোকাল বাসে উঠে বসলাম। এই বাসগুলোই ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী যাওয়ার অন্যতম বাহন। যশোর থেকে গদখালীর দূরত্ব প্রায় ১৯ কিলোমিটার।  ফুলের রাজ্যে

লোকাল বাসের ঢিমেতালের গতিতে প্রায় ৪৫ মিনিট লাগলো পৌঁছতে। স্থানীয়দের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে ভ্যানে করে রওয়ানা হলাম পানিসারা বাজারের উদ্দেশ্যে। বড় রাস্তা পেরিয়ে গ্রামের পথে ঢোকার কিছু পরেই ফুলের রাজ্যের দেখা পেলাম। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম চারপাশ। বিখ্যাত কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি যেন। পানিসারা বাজারের বেশ কিছুটা পথ আগেই নেমে পড়লাম ভ্যান থেকে। হেঁটে হেঁটে দেখছিলাম পুরো এলাকা।  

পথে পথে গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, গ্ল্যাডিউলাসসহ বিভিন্ন ফুলের মাঠের দেখা পেলাম। কোথাও খোলা মাঠে আবার কোথাওবা ছাউনী দিয়ে সারি বেঁধে নানা রঙ্গের ফুলের চাষ করা হয়েছে।  

পাশের এক গোলাপ বাগানে বেশ কয়েকজন কৃষককে ব্যস্ত দেখলাম ফুল কাটতে। স্তুপ করে রাখা এই ফুল ছড়িয়ে পড়বে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। দেশের ফুলের মোট চাহিদার একটা বড় অংশের যোগান দিয়ে থাকে ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার এই ফুল চাষীরা।  

১৯৮৪ সালের দিকে এখানে ফুলের চাষ শুরু হলেও গত দুই দশকে ফুল চাষে স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে কয়েকগুণ। বর্তমানে এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার কৃষক জড়িত রয়েছে ফুলচাষে। শুধুমাত্র গদখালী বাজারেই প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার ফুলের বেচাকেনা চলে। যা  নিরবে দেশের অর্থনীতির চাকাকে আরো সচল করছে।  

ফুলের রাজ্যেএখন ঝিকরগাছা, শার্শা ছাড়াও যশোরের মনিরামপুর, কেশবপুরেও বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে।  

আমরা বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেটে, বিদেশী সিনেমাতে ইউরোপের ফুল বাগানের ছবি দেখেছি। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এরকম ফুলের বাগান নিজের দেশেও আছে তা না দেখলে কেউ বুঝতে পারবেনা। এ যেন পৃথিবীর মাঝে এক স্বর্গ উদ্যান। বিমোহিত হয়েই কাটলো পুরোটা বিকেল। অবশেষে আবার আসার ইচ্ছে নিয়ে ফেরার পথ ধরলাম।  

ঢাকা থেকে গদখালী যেতে হলে- শহরের কল্যাণপুর থেকে বেনাপোলগামী বাসে টিকেট কাটতে হবে। সোহাগ পরিবহন, হানিফ পরিবহন, ঈগল পরিবহন ছাড়াও বেশ কিছু নন এসি / এসি সার্ভিস রয়েছে। ভাড়া পরবে ৫০০-১৪০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া যশোর হয়েও সেখান থেকে লোকাল বাসে ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী যাওয়া যায়। বাস স্ট্যান্ড থেকে ভ্যান অথবা ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সায় করে ঘুরে দেখা যেতে পারে ফুলের রাজ্য।  

রাতে থাকার জন্য যশোর শহরে ফিরে আসতে হবে। এছাড়া বেনাপোলেও মাঝারি মানের বেশ কিছু হোটেল রয়েছে।  


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।