ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

স্বপ্নই যার তাঁতী হওয়ার

শারমীনা ইসলাম, লাইফস্টাইল এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭
স্বপ্নই যার তাঁতী হওয়ার তাঁত ব্যবসায়ী আল আমিন

যেখানে সবাই ছোট বেলায় স্বপ্ন দেখে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার, কেউবা পাইলট হয়ে প্লেন ওড়াতে চান খোলা আকাশে। একটি কিশোর তখন বিভোর ঘুড়ি ওড়াতে, সে চায় তাঁতী হতে!

এটা কীভাবে? বেশ অবাক হলাম, কারণটা জানা গেল কথায় কথায়। বাবা দ্বীন ইসলাম আর দাদা সফর আলীর পেশাকেই আপন করে নেন নারায়ণগঞ্জের জামদানী পল্লীর সফল তাঁত ব্যবসায়ী আল আমিন।

জামদানী শাড়ির ঐতিহ্য আবহমান কাল ধরে বাংলার বুকে মুখ উজ্জ্বল করে টিকে আছে তো আসলে এদের অবদানের জন্যই।
 
শিক্ষায় এগিয়ে আধুনিক পেশার জন্য সবাই যখন শহরমুখী এমন হাতেগোনা আল আমিনের মতো কয়েকজন তরুণ উদ্যোক্তার জন্যই আজও টিকে আছে আমাদের আভিজাত্যের প্রতিক জামদানী শিল্প।
 
প্রতিটি বাঙালি নারীর স্বপ্নের পোশাক একটি জামদানী শাড়ি। প্রিয় মানুষটিকে খুশি করার এরচেয়ে ভালো উপহার খুব কমই আছে আমাদের হাতের নাগালে।
 
একটি শাড়ি তৈরি হতে দুইজন কারিগরের ৫-থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগে বলে জানালেন আল আমিন। নিজের ১২টি তাঁত রয়েছে। এছাড়াও সারা বছরই বেশ কিছু ভাড়া করা তাঁতেও তার অর্ডারের কাজ চলে। প্রতি মাসে তিনি গড়ে দেশ ও দেশের বাইরে প্রায় ১০০ শাড়ি বিক্রি করেন।
 
শাড়ির বাজারদর সম্পর্কে তিনি বলেন, তিন হাজার টাকা থেকে শুরু এক লাখ টাকার শাড়িও তিনি তৈরি করেন। দেশের সেরা ফ্যাশন হাউস থেকে শুরু করে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বাড়ির বিয়ে বা কোনো বিশেষ অতিথির জন্য উপহার হিসেবে শাড়ি তৈরির দায়িত্ব পড়ে আল আমিনের ওপরই। তিনিও সময় সম্পর্কে সচেতন, প্রতিটি শাড়ি সময় মতো মান ঠিক রেখে তৈরি করে পৌঁছে দিতে নিজেই ছোটেন ক্লায়েন্টের বাড়িতে বা অফিসে।
 
প্রিয় জামদানী নিয়ে চীন, ভারত, তুরস্ক ইয়েমনসহ বেশ কিছু দেশ ঘুরেছেন তিনি। বিশ্ববাজারেও আমাদের দেশি জামদানী অনেকেরই নজর কাড়ে বলেও জানালেন আল আমিন। আর প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায় তো শাড়ির এতো চাহিদা যে প্রতি মাসেই তাকে দুই-একবার যেতে হয় অর্ডারের শাড়িগুলো পৌঁছে দিতে।  
 
তিন পুরুষের ব্যবসার পরিসর আরও বাড়িয়েছেন আল আমিন। তার ছেলে মাহেরও বড় হয়ে এই ব্যবসায় আসবে, এমন ইচ্ছা বাবা হিসেবে তার আছে কি না জানতে চাইলে, হেসে বলেন, তিনি চান ছেলে তাঁত ব্যবসাটা ধরে রাখবে। তবে সে যদি বড় হয়ে আগ্রহী না হয় তবে জোর করবেন না তিনি।
 
আল অামিনের মাধ্যেমে এলাকায় বেশ কিছু লোকের কাজের সংস্থান হয়েছে, তাদের পরিবারগুলো চলছে এই টাকায়। ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে এটাই তার ভালো লাগার জায়গা বলে জানান তিনি।
 
নিজের ব্যবসা নিয়ে সুনাম ধরে রেখে অনেক দূর এগিয়ে যেতে চান তিনি।
 
বাংলানিউজের অফিস থেকে বিদায় নেয়ার আগে একটি ছোট ইচ্ছার কথা জানালেন আল আমিন, এতো শাড়ি তৈরি করেন, তার খুব ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে নিজের তাঁতের একটি শাড়ি, নিজের হাতে প্রিয় মানুষটিকে উপহার দেবেন।  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।