ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

হাজী সেলিমের এমপি পদ নিয়ে যা বললেন আইনজীবীরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
হাজী সেলিমের এমপি পদ নিয়ে যা বললেন আইনজীবীরা হাজী সেলিম

ঢাকা: অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ১০ বছর কারাদণ্ডাদেশ বহাল থাকায় আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মোহাম্মদ সেলিমের সংসদ সদস্য (এমপি) পদ ঝুঁকিতে রয়েছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবীর মতে তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।

অন্যদিকে হাজী মোহাম্মদ সেলিমের আইনজীবীর মতামত, সর্বোচ্চ আদালত তথা আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হওয়ার আগে সংসদ সদস্য পদে থাকতে পারবেন তিনি।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুদকের করা মামলায় গত বছরের ৯ মার্চ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের স্ত্রী মৃত্যবরণ করায় মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি (অ্যাবেট) দেওয়া হয়। তবে হাজী সেলিমের দুই ধারায় দেওয়া ১৩ বছরের কারাদণ্ডাদেশের মধ্যে এক ধারার (১০ বছর) দণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। অপর ধারার দণ্ড (৩ বছর) থেকে তাকে খালাস দেন। একইসঙ্গে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ড দেন। আর যেসব সম্পত্তি নিয়ে এ সাজা দেওয়া হয়েছে তা বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নিতে হবে।

এ রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। এ অবস্থায় তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বৃহস্পতিবার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

সংসদ সদস্য থাকার অযোগ্যতা সংক্রান্ত সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তাহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে।

এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে যদি কেউ নৈতিকস্খলনের দায়ে ২ বছর বা তার বেশি সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে অযোগ্য হবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তিনি যেহেতু দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তাই এটা তার নৈতিকস্খলন। তাই সাংবিধানিকভাবে তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তার সংসদ সদস্য পদ বাদ হয়ে যাবে। তবে বিষয়টি স্পিকার সিদ্ধান্ত নেবেন।

তবে আত্মসমর্পণ করে ৩০ দিনের মধ্যে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় এ সংসদ সদস্যের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, সর্বোচ্চ আদালতে এ মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাজী সেলিমের সংসদ সদস্য পদ থাকবে।

এ মামলায় আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান, হাজী সেলিমের পক্ষে ছিলেন প্রয়াত আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার ও আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তামান্না ফেরদৌস ও সাথী শাহজাহান।

২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে দুই ধারায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। তার স্ত্রীকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন।

২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম ও তার স্ত্রী। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে তার সাজা বাতিল করেন।

পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। সে অনুসারে হাইকোর্টে পুনরায় শুনানি হয়।

আরও পড়ুন:
আত্মসমর্পণ করবেন হাজী সেলিম
হাজী সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল রেখে রায় প্রকাশ
হাজী সেলিমের ১০ বছর দণ্ড বহাল

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২২
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।