ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

কর্মস্থলে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক

ল’ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০১৬
কর্মস্থলে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক ফাইল ফটো

দেশের কর্মজীবী নারীরা ছয় মাসের মাতৃত্ব-কালীন ছুটি পাওয়ার অধিকারী। কিন্তু আমাদের পোশাক ও শিল্প কারখানাগুলোর নারী শ্রমিকেরা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের মাতৃত্ব-কালীন ছুটির অধিকার থেকে বঞ্চিত হন।

শুধু পোশাক শিল্পেই নয়, অনেক কর্মক্ষেত্রেই নারী শ্রমিক অধিকারের একই চিত্র চোখে পড়ে। ৱ
কর্মক্ষেত্রে নারীর কিছু বিশেষ অধিকার আছে। এ অধিকারগুলো প্রদান করা নিয়োগকারীর আইনগত কর্তব্য। আইনে বলা আছে, একই কাজের  জন্য নারী ও পুরুষ শ্রমিক উভয়েই সমান মুজুরি পাবেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। কর্মক্ষেত্রে দেখা যায় একই কাজের জন্য নারীরা কম মজুরি পেয়ে থাকে। সাধারণত  একজন নারী শ্রমিক রাত আটটার পর কাজ করবেনা। এটাই আইনের সাধারণ বিধান। এ অন্যথা করলে তা আইনের খেলাপ। তবে আইনে এও আছে, ওই নারী শ্রমিকের সম্মতিক্রমে তাকে রাত ৮ টার পর কাজ করানো যেতে পারে। কিন্তু আমাদের অনেক শিল্প কারখানাতেই নারীরা এ অধিকার থেকে বঞ্চিত হন।

আইনে আছে, নারী শ্রমিক সন্তান প্রসবের আগে ৬ সপ্তাহ এবং প্রসবের পরে ৬ সপ্তাহ এভাবে মোট ১২ সপ্তাহ ছুটি পাবেন। এই ছুটি তিনি পূর্ণবেতনেই পাবেন। তবে, এ ক্ষেত্রে আইনানুযায়ী একটি শর্ত প্রয়োগ করা হয়েছে। তা হচ্ছে, সন্তান প্রসবের দিনের আগে ওই প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে নয় মাস তার কাজ করতে হবে। সহস কথায়, প্রসবের আগে নয় মাস চাকরি করলেই কোনো নারী ৬ মাসের ছুটি পেতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবা হচ্ছে সরকারি এসব আইন ও নির্দেশনার বাস্তবায়ন খুবই কম হয়। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যমান উদাসীনতাই এর প্রধান কারণ। অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিক সচেতনতারও অভাব রয়েছে।

গর্ভবতী নারী শ্রমিকের অফিস বা কর্মস্থলেই সন্তান প্রসবের সংবাদও মাঝে মাঝে গণমাধ্যমে আসে। যা একইভাবে নিয়োগ কর্তার গাফলতি ও শ্রমিকের অসচেতনার ইঙ্গিত দেয়। নিয়োগ কর্তা বা মালিক পক্ষরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে গর্ভবতী নারীদের ছুটি দিতে চাননা। তার ওপর আবার বেতনসহ ছুটি দেয়াতো আরো বড় বিষয়। এভাবেই নারী শ্রমিক বিশেষ করে গর্ভবতী নারী শ্রমিকরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে।
আইনানুযায়ী শিল্প কারখানার কর্ম-পরিবেশ তদারকে ও অধিকার রক্ষায় একটি সরকারি পরিদর্শকের পদ রয়েছে। তার কাজ হচ্ছে নিয়মমাফিক কল-কারখানা পরিদর্শন করা ও সে মোতাবেক সুপারিশ করা। কিন্তু বাস্তবে এ রকম পরিদর্শন কালে-ভদ্রে হয়ে থাকে। ব্যবস্থা নেয়াতো পরের কথা।

নারী শ্রমিকদের সন্তান প্রসব করার পর আরেকটি বিশেষ সুবিধা বা অধিকারের কথা বলা আছে। তা হচ্ছে, ডে কেয়ার সেন্টার। দেশের খুব কম কর্মস্থলেই শিশুদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার আছে। আইনে বিধান থাকলেও তার কোনো বাস্তবায়ন নেই। আইনানুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠানে যদি ৫০ জন এর বেশি নারী শ্রমিক থেকে থাকেন তবে সে প্রতিষ্ঠানে নারী শ্রমিকদের শিশু সন্তানদের জন্য শিশু কক্ষ বা শিশু পালন কেন্দ্র-এর ব্যবস্থা থাকতে হবে। কিন্তু ৫০ এর অধিক নারী শ্রমিক কাজ করে এরকম প্রতিষ্ঠান দেশে অনেক আছে। দেশে ডে কেয়ার আছে এমন প্রতিষ্ঠান ৫০টিও আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

মূলত ২০০৬ সালের শ্রম আইনের চতুর্থ অধ্যায়ে বর্নিত অধিকারগুলো থেকে নারীরা বিভিন্নভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন।

কর্মক্ষেত্রে নারীর সব ধরনের নিরাপত্তা বিধান করা নিয়োগকারীর আইনগত দায়িত্ব। কিন্তু শুধু নারীরা কেন কর্ম ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা একটি স্বাভাবিক বিষয়। অধিকাংশ কর্মীই মনে করেন তারা একটি ঝুকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে কাজ করছেন। শুধু শারীরিক নিরাপত্তাই মূল বিষয় নয়। শ্রমিকদের আর্থিক নিরাপত্তা তথা সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টিই আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।

কর্মক্ষেত্রে নারীর সব অধিকার প্রতিষ্ঠা করে নারী ক্ষমতায়নের পথকে প্রশস্ত করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।