ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

‘অর্থাগমের জন্য নতুন মামলায় আগ্রহী আইনজীবীরা’

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৫
‘অর্থাগমের জন্য নতুন মামলায় আগ্রহী আইনজীবীরা’ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা

ঢাকা: প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা) বলেছেন, আইনজীবীরা নতুন মামলা দায়েরে ফাইলিংকে বেশি গুরুত্ব দেন। কারণ, এতে বেশি অর্থাগম ঘটে।

পুরোনো মামলার শুনানিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা আদালতে হাজির থাকেন না। এতে বিচারপ্রার্থীদের ক্ষতি হয়।

তিনি বলেন, আগে আইনজীবীদের মধ্যে এতো দলাদলি, বিভক্তি ছিল না। এখন আইনজীবীদের মধ্যে যেমন বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি আইনের শাসনের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল নন অনেকে। রাজনৈতিক দল আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এর মধ্যে রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বৈশাখী উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) এসব কথা বলেন তিনি।

বিচারালয়ের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারপতি আছেন, আইনজীবী নেই। আবার আইনজীবী আছেন, বিচারপতি নেই। এমন নানা কারণেই বিচার বিভাগে ঝুলে আছে প্রায় তিন লাখ মামলা।

নিজে উদ্যোগী হয়ে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চাইলেও সব সময় সবার সহযোগিতা পাওয়া যায় না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
 
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টকে রক্ষার জন্য আইনজীবীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। আর সুপ্রিম কোর্টকে রাখতে হলে ‘রুল অব ল’ কে নিশ্চিত করতে হলে মামলাজট কমাতে হবে।

আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, বৈপ্লবিক কোনো পরিবর্তন না হোক, মামলাজট সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য আমরা বিচারকরা চেষ্টা করছি। আপনারা যদি সহযোগিতা না করেন তবে তা সম্ভব হবে না।

আইনের শাসন নিশ্চিত করতে বিচারকদের পাশাপাশি আইনজীবীদেরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে বলে উল্লেখ করে সে দায়িত্ব পালনেরও আহবান জানান বিচারপতি এস কে সিনহা।

তিনি বলেন, আইনজীবীদের দলাদলির কারণে তারা নিজেরাও সমস্যায় পড়ছেন। তাই দিন শেষে সবাইকে যার যার জায়গা থেকে আত্মসমালোচনা করে, পরদিনের কাজ শুরু করার পরামর্শ দেন তিনি।

তবে এ মামলাজটের পেছনে হাইকোর্টের বিচারপতিদের বেশি ছুটি থাকাকেও দায়ী করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, আমরা বছরে ১৮৬ দিন ছুটি নেই। সব ছুটি যোগ করলে বাংলাদেশে একজন বিচারক বছরে ছয় মাসের বেশি সময় ছুটি ভোগ করেন।  

বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, তিন লাখ মামলা নিয়ে আমরা বিলাসিতা করতে পারি না। আমরা বছরে ১৮৬ দিন ছুটি নিতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, বছরের প্রায় অর্ধেক সময় ছুটিতে কাটালে ভুক্তভোগী মানুষজনের কষ্ট বাড়বে ছাড়া কমবে না।

এ ছুটি নিয়ে আমরা যদি চলি তাহলে আরও দশ বছরে বর্তমানের তিন লাখ মামলা থেকে ১০ লাখ মামলা হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।

তিনি জানান, বাংলাদেশের হাইকোর্টে ১৮৬ দিন ছুটির কথা শুনে কোরিয়ার বিচারপতিরা তার কাছে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন- ‘তাহলে বাংলাদেশ চলছে কীভাবে?’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী পরিষদের সভাপতি কামরুজ্জামান কচির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বদরুদ্দোজা বাদল ও রবিউল আলম বুদু।

বছরের পর বছর কারাগারে আছেন- এমন ব্যক্তিদের জামিন শুনানি আগে করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, যিনি বছরের পর বছর জেলে রয়েছেন, তার জামিন শুনানি  আগে করবেন, না যাকে পুলিশ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তার জন্য জামিন শুনানি আগে করবেন?
তিনি বলেন, আমাদের দেশে মামলার আরজি ও লিখিত জবাবে প্রতিকার পাওয়ার কোনো যুক্তি বা বক্তব্য থাকে না। হাইকোর্টে শুধু এফিডেভিট বা হলফনামা দিয়েই আবেদন দাখিল করা হয়। এক মামলার বক্তব্য অন্য মামলার দরখাস্তে ঢুকে যায় অমনোযোগিতার কারণে।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা কনিষ্ঠদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দেবেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও আইনজীবীরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৫
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।