ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

মুসলিম আইনে নারীর অধিকার

মোঃ জাহিদ হোসেন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৫
মুসলিম আইনে নারীর অধিকার

স্বাভাবিকভাবে আমরা জানি, সম্পত্তিতে পুত্র সন্তান যা পায় কন্যা সন্তান তার অর্ধেক ভাগ পায়। কিন্তু এই নিয়ম কখন প্রযোজ্য? সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এই নিয়ম তখন প্রযোজ্য যখন তারা তাদের বাবার সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে।



কিন্তু বাবা থেকে সম্পত্তি পাওয়া ছাড়াও পুত্র সন্তানের পাশাপাশি কন্যা সন্তানেরা আরও বিভিন্নভাবে সম্পত্তি পেয়ে থাকে।

দেনমোহরের ক্ষেত্রেঃ
একজন মুসলিম নারী বিয়ে করলে সে তাঁর স্বামী থেকে দেনমোহর পেয়ে থাকে। যা স্বামীকে অবশ্যই বিয়ের আগে-পরে মুসলিম আইন অনুযায়ী দিয়ে দিতে হয়। আর মুসলিম বিয়েতে দেনমোহরের হার প্রায় সময় অনেক বেশি হয়ে থাকে যাতে স্বামী সহজে অকারণে স্ত্রীকে তালাক দিতে না পারে।

এমন কি স্বামীর মৃত্যু হলেও স্ত্রীর প্রাপ্ত দেনমোহর মাফ হয়না। স্ত্রী তা আইন অনুযায়ী আদায় করে নিতে পারে।

ভরণপোষণের ক্ষেত্রেঃ
ইসলাম ধর্মে তথা মুসলিম আইন অনুযায়ী একজন পুত্র সন্তান উপার্জনক্ষম হলে তাঁর উপর সংসারের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব এসে যায়। আর সে যখন স্বামী তখন তাঁকে স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে হয়, সে যখন বাবা তখন তাঁকে তাঁর ছেলে মেয়েদের ভরণপোষণ দিতে হয় ও মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে হয়।  

সে যখন ভাই তখন ছোট ভাই বোনদের ভরণপোষণ ও অবিবাহিত বোনদের বিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও থাকে তাঁর উপর।

সন্তান হিসেবে নিজ মা বাবার দায়দায়িত্বও পুত্র সন্তানকে গ্রহণ করতে হয়। এই বিষয়ে আমাদের দেশে পিতামাতার ভরণপোষণ নিয়ে আলাদা আইনও রয়েছে।

ইসলাম ধর্মে এই সকল দায়দায়িত্ব থেকে নারীকে অব্যাহতি দিয়ে শুধু মাত্র তা পুরুষের উপরই অর্পণ করা হয়েছে। আর পুত্র সন্তানও ওই সকল দায়দায়িত্ব পালন করতে আইনগতভাবে বাধ্য। আর কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে উল্লিখিত দায়দায়িত্বগুলো পালন করা সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক ব্যাপার। তাই সে এই সকল দায়দায়িত্ব পালন করতে না চাইলে তাকে কেউ বাধ্য করতে পারে না।

উত্তরাধিকারীর ক্ষেত্রেঃ
একজন পুরুষ স্বাভাবিকভাবে উত্তরাধিকারসূত্রে পিতা-মাতার সম্পত্তি থেকেই অংশ পায়। একজন নারী সন্তান হিসেবে পিতা-মাতার কাছ থেকে, স্বামী মারা গেলে স্ত্রী হিসেবে স্বামীর কাছ থেকে, মা হিসেবে সন্তানের কাছ থেকে সম্পত্তির অংশ পায়। সবগুলো অংশ যোগ করলে এবং উল্লিখিত সব দিক বিবেচনা করলে নারীর অংশের সম্পত্তি, পিতা-মাতার কাছ থেকে পাওয়া পুরুষের অংশের সম্পত্তির চেয়ে বেশিই হওয়ার কথা।

মোটকথা, পুরুষ উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পত্তি একটু বেশি পাওয়ার কারণে পুরুষদের সাধারণত নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে হয়ঃ ১) বাবা মায়ের দেখাশুনা ও চিকিৎসা ২) বাড়িতে কোনো আত্নীয় এলে সকল খরচ বড় ভাই বহন করে থাকে। ৩) স্ত্রীর ভরণপোষণ থেকে শুরু করে সংসারের যাবতীয় খরচ স্বামীর। কিন্তু এখানেও স্ত্রীর কোনো বাধ্যতামূলক দায়িত্ব নেই। ৪) পরিবারের ছোট ভাই-বোন থাকলে তাদের লেখাপড়ার খরচ বহন করতে হয় বড় ভাইকে। ৫) বোনের বিয়ের যাবতীয় খরচ ইত্যাদি।

তাই আগে মুসলিম আইন নারীদের সম্পত্তির উপর যে অধিকার দিয়েছে তার বাস্তবায়ন জরুরি।

কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ মুসলিম নারী আইন অনুযায়ী তাঁদের প্রাপ্য অধিকার পায় না। যেকারণে স্বামী মারা গেলে বা বিবাহবিচ্ছেদ হলে তাদেরকে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়।

এখনও অধিকাংশ গ্রামগঞ্জে এমনকি শহরেও নারীদের তাঁদের পিতৃ সম্পত্তি থেকে ব্যাপকভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কখনো বা সরাসরি বলে দেওয়া হচ্ছে যে পরিবারের কোনো নারী সদস্যকে কোনো প্রকার সম্পত্তি দেওয়া হবে না। তাই আমাদের আগে মুসলিম নারীর সম্পত্তিতে প্রাপ্য অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, রোলা বাংলাদেশ (রিসার্চ অর্গানাইজেশন ফর লিগ্যাল অ্যাওয়ারনেস অব বাংলাদেশ); এলএল.এম.(অধ্যয়নরত), আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।