ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আইন ও আদালত

আরাভ খানের মামলায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তার ভাইয়ের সাক্ষ্য

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৩
আরাভ খানের মামলায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তার ভাইয়ের সাক্ষ্য

ঢাকা: দুবাইয়ের আলোচিত ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানের মামলায় নিহত পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খাঁনের ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফয়সল আতিক বিন কাদেরের আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

এ দিন কারাগারে থাকা ছয় আসামির পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন, ফারুক আহাম্মদ, মো. পারভেজ জেরা করেন।

এর আগে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই তিনি সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। আসামিদের জেরার মধ্য দিয়ে একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলো। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৪ জুন দিন ধার্য করেন আদালত।

এই মামলার আসামিরা হলেন—মো. রহমত উল্লাহ, স্বপন সরকার, দিদার পাঠান, মো. মিজান শেখ, আতিক হাছান ওরফে দিলু শেখ, সুরাইয়া ওরফে কেয়া, মো. সারোয়ার হোসেন ওরফে ছারোয়ার হোসেন ও মো. রবিউল ইসলাম ওরফে আপন, ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয় ওরফে হৃদি।

এর মধ্যে রবিউল ইসলাম ও সুরাইয়া আক্তার কেয়া পলাতক। কারাগারে থাকা বাকি ছয় আসামি সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পলাতক রবিউল ইসলামই দুবাইয়ের আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান।

আইনজীবী মো. পারভেজ জানান, এই মামলার অপ্রাপ্ত বয়স্ক দুই আসামি মেহেরুন্নেছা স্বর্ণা ওরফে আফরিন ওরফে আন্নাফী ও মোছা. ফারিয়া বিনতে মিম। তারা জামিনে আছে। তাদের বিরুদ্ধে ভিন্ন দোষীপত্র দাখিল করা হয়। তাদের বিচার শিশু আদালতে চলমান।

এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমান ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ সিএমএম আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর মামলাটি বদলি হয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসে। ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৯ জুলাই গাজীপুরের জঙ্গল থেকে মামুন এমরান খানের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় মামুনের ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

চার্জশিটে বলা হয়, টেলিভিশনে ক্রাইম ফিকশন অনুষ্ঠানে আসামি রহমত উল্লাহর সঙ্গে অভিনয়ের সূত্র ধরেই মামুন এমরান খানের পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব। ওই দুজনের সঙ্গে অভিনয় করত কিশোরী মেহেরুন নেছা স্বর্ণা। ওই চক্রের প্রধান রবিউলের স্ত্রী কেয়াকে জানায়, রহমত উল্লাহর অনেক টাকা আছে। তাকে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করা সম্ভব। ওই কিশোরী পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রহমত উল্লাহকে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করতে জন্মদিনের কথা বলে ফোন দিয়ে আসতে বলে। ফোন পেয়ে রহমত উল্লাহ পুলিশ পরিদর্শক এমরানকেও ওই অনুষ্ঠানে আসতে আমন্ত্রণ জানায়। এমরান ও রহমত উল্লাহ ২০১৮ সালের ৮ জুলাই বনানীর ওই বাসার নিচে আসলে ওই কিশোরী দুজন মহিলাসহ নিচে আসে। সে একজনকে বোন এবং একজনকে ভাবী পরিচয় দেয়। এরপর তাদের বাসার ভেতরে নিয়ে যায়। বাসায় গিয়ে তারা দেখেন, জন্মদিনের কোনো আয়োজনই নেই।

তখন রহমত উল্লাহ ওই কিশোরীকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমাদের নাকি বার্থডে পার্টি, কিন্তু তার তো কিছু দেখছি না’। তখন চক্রের প্রধান রবিউলের স্ত্রী কেয়া বলেন, ‘প্রতিদিন তাদের বার্থডে পার্টি এ রকমই হয়। একটু পরই দেখতে পাবেন। ’ কেয়া ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আসামি স্বপন, দিদার, আতিক ও মিজান আসে। তারা মামুন ও রহমতের উদ্দেশে বলেন, ‘বাজে উদ্দেশ্য নিয়ে তোরা এখানে এসেছিস। তখন এমরান ওই কথার প্রতিবাদ করলে সঙ্গে সঙ্গে ওই চারজন এমরানকে মারতে শুরু করেন। আসামি স্বপন, আতিক ও দিদার বলেন, ‘ওদের হাত-পা বেঁধে ফেলো। মেয়েদের সঙ্গে ছবি তুলে টাকা আদায় করা হবে। ’

তখন এমরানকে চেপে ধরে স্বপন, আতিক ও দিদার। স্কচটেপ দিয়ে হাত-পা বাঁধেন দিদার ও স্বপন। আসামি মিজান মুখ চেপে ধরলে এমরান তার হাতে কামড় দেন। তখন মিজান ও দিদার পেছন থেকে এমরানের ঘাড়ে আঘাত করেন এবং আতিক সজোরে লাথি মারলে এমরান অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তখন রহমত উল্লাহকেও হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়।

চার্জশিটে বলা হয়, রাত ১২টার দিকে স্বপন বলে, এমরানের হাত-পা কেমন শক্ত মনে হচ্ছে। তখন সে প্রধান আসামি রবিউলকে ওই তথ্য মুঠোফোনে জানায়। এরপর রবিউলের পরামর্শে আসামি স্বপন, আতিক ও দিদার ধারালো অস্ত্র দিয়ে মামুনের পায়ের আঙুল কেটে রক্ত বের না হওয়ায় তাঁরা নিশ্চিত হন পুলিশ কর্মকর্তা এমরান মারা গেছেন। স্বপন আর দিদার তখন রবিউলকে ফোন দিয়ে বড় একটা ট্রলি বা বস্তা নিয়ে আসতে বলেন। সকাল সাতটায় আসামি স্বপন, দিদার ও আতিক লিফটে করে মামুনের লাশ নিচে নিয়ে এসে রহমত উল্লাহর প্রাইভেট কারের পেছনে রাখেন। রহমত উল্লাহ গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যান। গাড়িতে দিদার, আতিক, স্বপন ও মিজান ছিলেন। প্রধান আসামি রবিউল সামনে মোটরসাইকেলে ছিল। গাড়িটি বনানী থেকে আবদুল্লাহপুর যাওয়ার পথে বাঁশঝাড় দেখে আসামি স্বপন রহমত উল্লাহকে গাড়ি থামাতে বলেন। তখন গাড়ি থেকে লাশ বাঁশঝাড়ের মধ্যে নিয়ে আতিক লাশের গায়ে পেট্রোল ঢালেন এবং স্বপন আগুন দেন। এরপর রহমত উল্লাহ গাড়ি চালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন।

চার্জশিটে আরও বলা হয়, বিত্তবানদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করাই ছিল ওই চক্রের কাজ। ওই চক্রের প্রধান রবিউল ইসলাম।

আরও পড়ুন:
হত্যা মামলার আসামি রবিউল যেভাবে দুবাইতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খান
আরাভ খানের নামে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’
পুলিশ খুন হয়েছে আমার অফিসে, কিন্তু আমি জড়িত না: আরাভ খান

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৩
কেআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।