ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বায়ুদূষণ রোধের কার্যক্রমে হাইকোর্টের অসন্তোষ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩
বায়ুদূষণ রোধের কার্যক্রমে হাইকোর্টের অসন্তোষ

ঢাকা: বায়ু দূষণরোধের কার্যক্রমে অসন্তোষ প্রকাশ করে ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা দুই সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকার দুই সিটি করপোরশেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এ নির্দেশ দেন আদালত।

বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার (০৫ জানুয়ারি) এ আদেশ দেন।

আদালতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আমাতুল করিম। আবেদনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

গত ৩১ জানুয়ারি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই আদেশ অনুযায়ী রোববার পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

শুনানিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনজীবী আমাতুল করিম বলেন, আদালতের আদেশের পরেই উচ্চ পর্যায়ে মিটিং হয়েছে এবং বেশ কিছু কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর ফলে এই মূর্হতে পরিবেশ সূচক (ইনডেক্সে) অনুসারে ঢাকার অবস্থান ২৪ নম্বরে।

তখন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, এই সূচক তো ঠিক নাই। সকালে এক রকম থাকে বিকেলে আরেক রকম হয়। এটা তো সময় সময় পরিবর্তন হয়।

এ সময় আদালত বলেন, সূচকে এক নম্বরে থাকুক আর চব্বিশ নম্বরে থাকুক সব মিলিয়ে পরিবেশে সূচকে আমাদের অবস্থান তো ভালো না। মিটিং করে কী লাভ, যদি পরিবেশ দূষণ না কমে। এসব বন্ধ করেন। বায়ুদূষণে মানুষকে মেরে ফেলছেন।

আদালত আরও বলেন, আপনাদের অনেকের স্ত্রী-সন্তান বিদেশে থাকেন, আপনাদের তো সমস্যা নেই। আমাদের তো এখানে থাকতে হয়। এই দূষণে আমাদের তো সমস্যা হয়।

তখন পরিবেশ অধিদপ্তরের আইনজীবী লোকবল সংকট, অভিযান চালাতে ম্যাজিস্ট্রেট সংকটের কথা তুলে ধরেন।

এ সময় আদালত বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট না থাকলে জুডিশিয়ারি থেকে নেবেন। লোকবল সংকটের কথা কি জানিয়েছেন?

আইনজীবী জানান, গত ২৫ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করা হয়েছে।

তখন আদালত বলেন, এ সময়ের পরিবেশ দূষণের ফলে পরিবেশ এবং মানুষের যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে তো কয়েক মিলিয়ন ডলার হবে। আর আপনি বলছেন ৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন।

আদালত আরও বলেন, আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। এখন বাস্তবায়নের দায়িত্ব আপনাদের।

আদালত বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট কেন থাকবে না? আপনাদের লজিস্টিক সমস্যা বলেননি কেন? আপনাদের কাজে সন্তোষ হওয়ার মতো কিছু নেই।

এরপর আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য ২২ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন।

বায়ু দূষণরোধে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়ে ২০২০ সালে রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত। নয় দফা নির্দেশনা বলা হয়—
১. ঢাকা শহরের মধ্যে বালি বা মাটি বহনকারী ট্রাকগুলোকে ঢেকে পরিবহন করতে হবে।

২. যেসব জায়গায় নির্মাণকাজ চলছে সেসব জায়গার কনট্রাকটররা তা ঢেকে রাখবেন।

৩. এছাড়া ঢাকার সড়কগুলোতে পানি ছিটানোর যে নির্দেশ ছিল, সে নির্দেশ অনুযায়ী যেসব জায়গায় এখনো পানি ছিটানো হচ্ছে না, সেসব এলাকায় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. সড়কের মেগা প্রজেক্টের নির্মাণকাজ এবং যেসব কার্পেটিং কাজ চলছে, তা যেন আইন-কানুন এবং চুক্তির টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন মেনে করা হয়, সেটা নিশ্চিত করার নির্দেশ।

৫. গাড়ির কালো ধোঁয়া ছাড়ে সেগুলো জব্দ করতে বলা হয়েছে।

৬. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ির ইকোনোমিক লাইফ নির্ধারণ করতে হবে এবং যেসব গাড়ি পুরাতন হয়ে গেছে সেগুলো চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্দেশ।

৭. যেসব উটভাটা লাইসেন্সবিহীনভাবে চলছে, সেগুলোর মধ্যে যেগুলো এখনো বন্ধ করা হয়নি, সেগুলো বন্ধ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ।

৮. পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া টায়ার পোড়ানো এবং ব্যাটারি রিসাইক্লিং বন্ধের নির্দেশ।

৯. মার্কেট এবং দোকানের বর্জ্য প্যাকেট করে রাখতে এবং মার্কেট ও দোকান বন্ধের পরে সিটি কর্পোরেশনকে ওই বর্জ্য অপসারণ করার নির্দেশ।

এই নয় দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের নির্দেশনা চেয়ে গত ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২২
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।