ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বাতাসির বিয়ে

মহিউদ্দীন আহমেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১২
বাতাসির বিয়ে

আছে বালিহাঁস, পানকৌড়ি, শাদা বক আর হিজল গাছের ডালে মাছরাঙা। নদীর জলে দুপুরের রোদ।

ছোট ছোট শান্ত ঢেউ। কচুরিপানার নিচে সারি সারি রুই-কাতলার ঝাঁক। ইয়া বড় বোয়ালগুলো আজ শান্তশিষ্ট। পুঁটি, চ্যালা, খলশে, বাইন, ট্যাংরা, সবাই আনন্দিত।

কারণ আজ বাতাসির বিয়ে!

মৎস্যপল্লীতে আজ ধুম-ধারাক্কা উৎসব। হই হই রই রই। যে যেমন পেরেছে, মনের মতো সেজেছে। মৎস্য পল্লীর সবখানে আজ রোদের ঝিলিমিলি। ঝিকঝিক করছে চারদিক।

শত্রুদের মধ্যেও আজ বন্ধুত্ব হয়েছে। রোদের মতো নির্মল হাসি সবার মুখে। সবার মনে আনন্দ আর আনন্দ।

আর বাতাসিকে যা লাগছে না! অদ্ভূত সুন্দরী! ঠিক পরীর মতো। বাতাসিকে এতো সুন্দর লাগছে যে, কেউ ওর দিক থেকে চোখ ফেরাতেই পারছে না।
কিন্তু পানকৌড়ির মনটা বেজায় ভারী।
কেন?
বলছি। পানকৌড়ির ধারণা, সে দেখতে কালো বলে সবাই তাকে অপছন্দ করে। তাছাড়া তার ঠোঁট দুটোও ভীষণ ভয়ঙ্কর। ছোট ছোট মাছ ধরে পটপটিয়ে খায়। তাই সে আজকের এই আনন্দের দিনে মুখ গোমরা করে লুকিয়ে আছে কচুরিপানার আড়ালে।
এদিকে নাচগানের অভাব নেই। ট্যাংরা খেলা করছে চ্যাং মাছের সঙ্গে। বোয়ালের লম্বা দাড়ি ধরে ঝুলে আছে ডানকানিরা। রুই কাতলার চোখের সামনে ছলবল করে ছুটোছুটি করছে চ্যালারা। কিন্তু একটা রুই-কাতলাও তাদেরকে শিকার করছে না।
আজ যে বাতাসির বিয়ে!

হঠাৎ আনন্দ ঘণ্টায় বিরতি পড়ে।
কী হলো, কী হলে? রব পড়ে যায় সবার মুখে।
অবশেষে জানা যায় আসল কথা। ভেদা মাছ আসেনি বলে কাঁদছে বাতাসি।
হ্যাঁ, তাতো কাঁদবেই। ভেদা তাকে যা আদর করে!
এই খবরটি কানে যাওযা যাওয়ামাত্র বোয়াল ডাকলেন বাইনকে। হুঙ্কার দিয়ে বললেন, ‘এক্ষুণি যাও! খুঁজে নিয়ে আসো তাকে। ’
সবাই জানে কাদার মধ্যে লুকিয়ে থাকে ভেদা। বাইনও যেহেতু কাদার ভেতর দিয়ে দ্রুত গতিতে চলতে পারে তাই বুদ্ধিমান বোয়াল বাইনকে এই নির্দেশ দিলেন।

ওদিকে বরযাত্রী অপেক্ষা করে আছে। তাদের একদম তর সইছে না। সুন্দরী বউ বাতাসিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা বারবার শুধু উঠি উঠি করছে। কিন্তু তা কী করে সম্ভব? ভেদা না এলে যে বাতাসি কোনোভাইে শ্বশুরবাড়ি যাবে না!
অনেক খোঁজাখুঁজি শেষে ভেদাকে পাওয়া গেলো। বাইন দেখে, প্রায় আধ ফুট কাদার নিচে ভেদা ঘুমিয়ে আছেন। বাইন ভেদাকে ডেকে বলে, ‘অপনাকে খুঁজে খুঁজে আমি ক্লান্ত। আর আপনি কি-না এখানে ঘুমিয়ে আছেন?’
হাই তুলতে তুলতে ভেদা বলেন, ‘কেন কী হয়েছে?’
‘ও মাই গড! আপনি জানেন না আজকে আপনার নাতনির বিয়ে? শোনেননি আনন্দ-উল্লাসের শব্দ?’
‘ও তাই তো তাই তো! শুনেছিলাম বাপু! কিন্তু একদম ভুলে গেছি। স্যরি। আই এ্যাম ভেরি সরি!’
বাইন বলে, ‘আমার কাছে স্যরি হয়ে কোনো লাভ নেই। বাতাসির কাছে সরি হবেন। এবার আর দেরি না করে এক্ষুণি আমার সঙ্গে চলুন।
আড়মোড়া ভেঙে ভেদা বলেন, হ্যাঁ, চলো!’

কিছুক্ষণ পর আবার বেজে ওঠে আনন্দ ঘণ্টা।
কিন্তু আর একাট সমস্যা।
মাছরাঙা এতোক্ষণ হিজলের ডালে বসে ছোট মাছের ছুটোছুটি দেখছিলো। মাছগুলো এমনিতে মাছরাঙাকে ভয় পায়। কিন্তু আজ তাদের মনে কোনো ভয় নেই। মাছ মনে মনে ভাবে, কী ব্যাপার? আজ আমাকে দেখে ওরা ভয় পাচ্ছে না কেন? দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। যখন ঘাড় মটকে ধরবো তখন বুঝবে আমি কে! এই ভেবে ছোট মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে ঝাপ দেয় জলে। মুহূর্তের মধ্যে এগিয়ে আসে কালো পানকৌড়িটা। মাছরাঙার শিকারে বাধা দেয়।
পানকৌড়ি বলে, ‘জানো না আজ মাছরাঙার বিয়ে? আজকে শিকার ধরা নিষেধ। ’
মাছরাঙা অপরাধী কণ্ঠে বলে, ‘ও তাহলে এটাই হচ্ছে আসল কারণ। এইবার বুঝতে পেরেছি কেন ছোট মাছগুলো আমাকে ভয় পাচ্ছে না। আমি জানতাম না। আমাকে ক্ষমা করো ভাই!’
মুখ ভার করে পানকৌড়ি বলে, ‘ওকে। নো প্রবলেম। ’
মাছরাঙা চলেই যাচ্ছিলো। কী মনে করে ঘুরে দাঁড়ায়। বলে, ‘আচ্ছা একটা কথা বলো তো!’
‘কী কথা?’
‘ডোন্ট মাইন্ড। যদি কিছু মনে না করো তাহলে বলো, তুমি এখানে মুখ গোমরা করে বসে আছো কেন?’
পানকৌড়ি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তাকে সব খুলে বলে। সব শুনে মাছরাঙা বলে, এটা কোনো দুঃখের কথা নয়। চলো আমার সঙ্গে। আমরা দুজন যাবো বাতাসিরদের বাড়ি। তোমাকে কথা দিচ্ছি, আমাদেরকে দেখে সবাই খুশি হবে।
মাছরাঙার কথা শুনে পানকৌড়ি বলে , সত্যি বলছো?;
‘হ্যাঁ সত্যি। ’
পানকৌড়ি মনে আনন্দ পায়।
তারপর দুজনে দ্রুত যায় বাতাসিদের বাড়ি।
ওদেরকে দেখে অভিমানী কণ্ঠে বাতাসি বলে, ‘এতোক্ষণে তোমাদের আসার সময় হলো বুঝি?’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।