ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

অহংকারী মাছি ও একটি পিঁপড়ে | বিএম বরকতউল্লাহ্

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৯
অহংকারী মাছি ও একটি পিঁপড়ে | বিএম বরকতউল্লাহ্ প্রতীকী ছবি

কোন এক দুরন্ত বালক বাজার থেকে রসগোল্লা কিনে খেতে খেতে বাড়ি ফিরছিল। তার হাত গলে এক ফোঁটা রস পড়ে গেলো রাস্তার ধারে। সেই মিষ্টি রসের গন্ধে ছুটে এলো একটা কালো পিঁপড়ে। সে মনের সুখে চেটে-চুটে খাচ্ছিল রসটুকু। হঠাৎ ভন্ ভন্ করে উড়ে এসে জুড়ে বসলো একটা মাছি। পিঁপড়েটা খুব বিরক্ত হলো। বলা নেই কওয়া নেই বেয়াড়া মাছিটা রস খাওয়া শুরু করে দিল। এ কেমন আচরণ!

পিঁপড়ে বললো, ভাই মাছি, একি করছ তুমি! রসটুকু যে খেয়ে ফেলছ, আমাকে তো কিছুই বললে না। এটা কি ঠিক হচ্ছে তোমার? 

মাছিটি তার অসংখ্য চোখ লাল করে বললো, তুই কি আমাকে দাওয়াত করে এনেছিস যে তোর কাছে জিজ্ঞেস করে খেতে হবে? ভাগ এখান থেকে।

পিঁপড়ে বললো, ভদ্রতা বলতে কি কিছু নেই নাকি তোমার? বলি, তুমি ভাগবা না আমি ভাগবো? গায়ের জোর দেখাও বুঝি!

মাছি বললো, তোর চেয়ে আমার শক্তি অনেক বেশি। গায়ের জোর কি তুই দেখাবি, না আমি দেখাবো?  

পিঁপড়ে বলল, শক্তির বড়াই করা ঠিক না। শুধু শক্তি দিয়ে সব কিছু হয় না। চলো রসটুকু দু’জনে মিলেমিশে খাই। তুমি অর্ধেক খাও আর আমি খাই অর্ধেক। এবার হলো?

মাছিটি বলল, না, মোটেও হলো না। তোর কথায় যদি আমাকে তোর সমানই খেতে হয় তাহলে আমার আর মর্যাদা থাকে কই? জানিস না আমার যে শক্তি বেশি। তাই আমি খাবো গায়ের জোরে আর তুই আমার কাছে চেয়ে-চিন্তে খাবি। দিলে খাবি আর না দিলে না খাবি, বুঝলি এবার? বেশি প্যানপ্যান করবি তো পাখনা দিয়ে এমন ঝড় তুলব যে ঝড়ের তাণ্ডবে তুলোর মতো উড়ে যাবি তুই।  

পিঁপড়ে সাহস দেখিয়ে বললো, এত গায়ের জোর দেখিও না। দাও, আমাকে অর্ধেক দাও- বলেই পিঁপড়েটি রসে চুমুক দিল।  

মাছিটা পিঁপড়ের গালে গাট্টা মেরে বললো, বাঁচতে চাস তো সরে যা। নইলে এই রসের মধ্যে আস্ত পুঁতে ফেলবো তোকে।  
পিঁপড়ে মনের দুখে কেঁদে কেঁদে চলে গেলো।  


দুই.
মাছিটি পাখনা দিয়ে হাত, মুখ, চোখ, পা মুছে-টুছে খুশি মনে বেশ আয়েশ করে রসে চুমুক দিল।  

ব্যাপার কী? সেই কালো পিঁপড়েটি আবার ধেই ধেই করে এদিকে আসছে যে! তার পেছনে অসংখ্য পিঁপড়ের লম্বা বহর! রসের ফোঁটার চারপাশে এসে ওরা দল বেধে ঘুরতে লাগল। এই দেখে তো মাছিটি ভন্ ভন্ আওয়াজ তুলে মাছিটি মল্লযোদ্ধার মতো শক্তি দেখাতে লাগল।

পিঁপড়েটি টিপ্পনি কেটে বললো, তুমি যুদ্ধ বাঁধাবে নাকি?

মাছিটি তাচ্ছিল্য করে বললো, যুদ্ধ? ছেঃ ছেঃ ছেঃ! আমি পিঁপড়ে মেরে হাত কালো করবো! আমার পাখার বাড়িতে তোরা ছাইয়ের মতো উড়ে যাবি। ভালোয় ভালোয় এখান থেকে চলে যা। আমাকে শান্তিতে রসটুকু খেতে দে। এই বলে মাছিটি রস খাওয়া শুরু করে দিল। এমন সময় কালো পিঁপড়েটি দ্রুত এগিয়ে গিয়ে রসে চুমুক দিল। গোঁয়ার মাছিটি পিঁপড়েটাকে ঠেসে ধরলো রসের মধ্যে। পিঁপড়েটি গ্যাঁ গোঁ শুরু করে দিল। আর কোনো কথা নেই, ঐক্য, শৃঙ্খলা আর পরিশ্রমের নিপুণ কারিগর পিঁপড়েরা চঞ্চল হয়ে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলল মাছিটাকে। তারা চোখের পলকে চলবল করে মাছির হাতে পায়ে, বুকে-পিঠে ও পাখায় চড়ে বসে কুটুস-কাটুস কামড়াতে লাগলো। শুরু হয়ে গেলো পিঁপড়ে মাছির যুদ্ধ।

মাছিটি পালাবার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। পিঁপড়েরা মাছির সমস্ত শরীর কামড়ে ধরে আঁঠার মতো লেগে আছে। কামড় খেয়ে বেহুঁশ হয়ে গেলো মাছিটি। দেখতে দেখতে পিঁপড়েরা মাছিটিকে রসফোঁটায় চুবিয়ে দলা পাকিয়ে একেবারে মোয়া বানিয়ে ফেললো।  

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পিঁপড়ের কাছে নির্মম পরাজয় হলো অহংকারী মাছিটির। পরে পিঁপড়েগুলো মাছিশুদ্ধ রসটুকু খেয়ে বীরদর্পে চলে গেলো আপন ঠিকানায়।

...বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৯
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।