ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বেড়ানো: পানাম নগর

আরিফুল ইসলাম আরমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১১
বেড়ানো: পানাম নগর

বাংলাদেশের পুরনো ঐতিহ্যবাহী শহর ‘পানাম নগর’। ঢাকা থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে এই নগর অবস্থিত।

পুরনো এই নগরে আছে কয়েক শতাব্দীর পুরনো অনন্য স্থাপত্যশৈলী আর কারুকার্যময় অনেক ভবন।

সোনারগাঁও পৌরসভার ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই নগর গড়ে তুলেন বাংলার বার ভূঁইয়ারা।

ঈসা খাঁর আমলে পুরনো সোনারগাঁও ছিল বাংলার রাজধানী। এই সোনারগাঁওয়েরই একটি এলাকার নাম পানাম। স্থানটি পুরনো রাজ-রাজরাদের আমলে প্রসিদ্ধ এলাকা ছিল। পরে ইংরেজ শাসনামলে এখানে অভিজাত হিন্দুদের আবাস গড়ে ওঠে। ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে তৈরি এখন পর্যন্ত টিকে থাকা  ইমারতগুলো মূলত সেসময়েই তৈরি। অসাধারণ কারুকার্যময় এবং সুবিন্যস্ত একটি প্রাচীন নগরী হিসেবে পানাম এখনও সবার মন কাড়ে। এটি পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের মধ্যে অন্যতম। ২০০৬ সালে World Monument Fund পানাম নগরকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

বৃটিশ শাসনামল এ অঞ্চলের শিল্প-বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র পানাম স্থাপত্বশৈলীতে রয়েছে তৎকালীন আধুনিকতার ছোঁয়া। দু’পাশে সারি সারি একতলা দু’তলা ভবন, মাঝ দিয়ে পথ।

পানাম নগরের পরিকল্পনায় ছিল আধুনিকতার ছোঁয়া। নগরে পানি সরবাহের জন্য দু’পাশে ছিল (এখনও আছে) ২টি খাল ও ৫টি পুকুর। সুপেয় পানির জন্য পানাম নগরের প্রতিটি বাড়িতেই ছিল কূপ বা ইঁদারা।

এখন পানাম নগর ঘুরে তুমি দেখতে পাবে নিখুঁত নকশা কাটা পুরনো সব আধুনিক দালান কোঠা। তবে সময় প্রবাহে আর প্রয়োজনীয় যত্নের অভাবে ক্রমশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পানাম নগরের সৌন্দর্য। এই অভিজাত নগরের মূল বাসিন্দারা দেশভাগের পর পানাম ত্যাগ করেন। এখন অনেকেই অস্থায়ীভাবে সেখানে বসবাস করছেন।

পানাম নগর তথা সোনারগাঁওয়ের পূর্বে মেঘনা আর পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা নদী। এই নদী পথেই বিলেত থেকে আসতো থানকাপড়। আর এদেশ থেকে বিদেশ যেত মসলিন।

সেই সময় এই নগরী ছিল বস্ত্র-বাণিজ্যের রাজধানী। তবে ইংরেজরা ধীরে ধীরে একসময় ঐতিহাসিক এ ব্যবসাকেন্দ্রটির নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেয়। তারা মসলিনের কারিগরদের বৃদ্ধাঙ্গুল কেটে পঙ্গু করে দেয় যাতে তারা মসলিন কাপড় আর না বুনতে পারে। এর ফলে ইউরোপে তৈরি কাপড়ের একচেটিয়া বাজার সৃষ্টি হয় এখানে। একইসঙ্গে এদেশীয় চাষাবাদ বন্ধ করে নীলচাষের জন্য এখানে তারা স্থাপন করে নীল কুঠি।

পড়াশোনার ফাঁকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তোমরা ঘুরে আসতে পারো পানাম নগর আর সোনারগাঁও। জানতে পারবে আমাদের অতীত গৌরব আর কষ্টে গাঁথা ইতিহাসের কথা। রাজধানীর সায়েদাবাদ বাসটার্মিনাল থেকে বাসে বা সিএনজি স্কুটারে করে খুব সহজেই পানাম নগরী যাওয়া যায়।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।