ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

গল্প

একটি স্বপ্ন ও একটি বাস্তবতা

আবীর ফেরদৌস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৭ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১০

ঝড়ের রাতে জন্ম হয়েছিল বলে ছেলেটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ঝাড়–’। ঝাড়–কে এই নামটা দিয়েছিল ঝাড়–র বাবা।

পেশায় যিনি একজন বর্গাচাষী। তারা যে গ্রামে বাস করে সেই গ্রামের চেয়ারম্যানের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে ঝাড়–র বাবা। ঝাড়– ধীরে ধীরে বড় হয়। ঝাড়–র বুকে বাসা বাঁধে এক ঝাঁক স্বপ্ন। একদিন সে স্কুলে যাবে, পড়াশোনা করবে। অনেক বড় অফিসার হবে। ঝাড়– তার মাকে বলে, ‘মা দেখো আমি একদিন অনেক বড় অফিসার হবো। তখন আমাদের আর কোন দূ:খ থাকবে না। কথাগুলো শুনে ঝাড়–র মা মুচকি হাসি দিতেন। ঝাড়– তার মায়ের এই হাসির অর্থটা বুঝতো না। ’ শুধু তাকিয়েই থাকতো।

একবার খরায় জমিতে একদম ফসল হয়নি। এমনিতেই ঝাড়–দের ছিলো অভাব। তার উপর জমিতে ফলন না হওয়ায় তাদের উপর নেমে এলো সীমাহীন দুর্ভোগ।

এরই মধ্যে ঝাড়–র বাবাকে একদিন চেয়ারম্যান ডেকে বললেন, আমার ছেলে ঢাকায় থাকে। ওর বাসায় একটা কাজের ছেলে দরকার। তোমার তো অভাবের সংসার। তোমার ছেলে ঝাড়–কে দাও। আমার ছেলের সাথে থাকবে। ভালো খাবে। ঝাড়–র বাবা ভাবলো, ভালোই হবে। তবে ঝাড়–র মা ছিল পুরো বিপরীত। সে কিছুতেই ছেলেকে ছাড়বে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মা’র অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঝাড়–কে ঢাকায় পাঠানো হলো।

ঢাকায় এসে কিছুদিন যেতে না যেতে ঝাড়–র কাজ বেড়েই চলছিল। তার কাজ যেন আর শেষ হয় না। সারাদিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর জুটতো অল্প কিছু খাবার। তারপরও কাজে একটু ভুল হলে ঝাড়–র ভাগ্যে জুটতো সীমাহীন অত্যাচার আর নির্যাতন। এতকিছুর পরও ঝাড়– তার স্বপ্নের কথা ভুলে যায়নি- তার অফিসার হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু ঝাড়–র প্রতি অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন বাড়তেই থাকে। একদিন বাসা থেকে রাতের বেলায় পালিয়ে যায় ঝাড়–। রাতের অন্ধকার পথে ঝাড়– ছুটছে তো ছুটছেই।

পরদিন পত্রিকায় ঝাড়–র ছবি সম্বলিত একটি বিজ্ঞপ্তি ছাপা হলো। বিজ্ঞপ্তিটির ভাষা ছিল এরকম, এই ছেলেটি গতকাল রাতে কিছু টাকা-পয়সা চুরি করে পালিয়ে গেছে। যদি কেউ ছেলেটির সন্ধান দিতে পারেন তবে নিচের ঠিকানায়....

সেই পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় ছোট করে আরো একটি খবর ছিল। খবরটির শিরোনাম ছিল : গতকাল রাজধানীতে তিনটি পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয় এক শিশুসহ তিনজন নিহত।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৪১৬ ঘণ্টা, ২১ জুন ২০১০
আবীর/এএ/এসআরজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।