ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

সেরালি-১১

ভূতেরা যখন পাহারাদার | বিএম বরকতউল্লাহ্

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৮
ভূতেরা যখন পাহারাদার | বিএম বরকতউল্লাহ্ প্রতীকী ছবি

[পূর্বপ্রকাশের পর]
ডাকাতের ঝামেলা শেষ হলো কিন্তু সেরালির চিন্তা গেলো বেড়ে। সে সারা রাত ঘুমোয়নি। সে ভাবছে তার অসম্ভবকে সম্ভবকারী গুণধর সন্তানদের নিয়ে। কীভাবে তাদের কাজে লাগিয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় কামনার বস্তু অর্থ কামাই করা যায়!

সেরালি পেয়ে গেছি! পেয়ে গেছি! বলে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠলো।
সেরালি একটা বিরাট সাইনবোর্ড এনে টাঙিয়ে দিলো বাইরের উঠোনে।

তাতে লেখা-

আপনি কি চোর-ডাকাত-সন্ত্রাসীদের ভয়ে ভীত? আপনি কি আপনার মূল্যবান মালছামানা রক্ষা করতে পারছেন না? আপনি কি বাসা-বাড়ি, খামার, কারখানার জন্য উপযুক্ত, বিশ্বাসী, সৎ, দক্ষ ও অব্যর্থ পাহারাদার খুঁজছেন? আজই যোগাযোগ করুন। ব্যর্থতায় ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা।

সেরালির বাড়িতে টাঙানো এই অদ্ভুত সাইনবোর্ডের খবর রাতারাতি এলাকা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে গেলো।  

প্রচণ্ড আগ্রহ আর কৌতূহল নিয়ে লোকজন আসতে শুরু করেছে তার বাড়িতে। প্রতিশ্রুতি মেলে কিন্তু দরে মেলে না। তার চাহিদা অনেক বেশি। এছাড়া সেরালি প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছুই দেখতে দিচ্ছে না। খালি বলে টাকা পরিশোধ করে যান। যথাসময়ে পৌঁছে যাবে পাহারাদার।

এ কথায় কেউ ভরসাও করতে পারছে না। এমনই টানাপড়েনে পড়ে কয়েকজন শিল্পপতি ও খামার মালিক এসে ফিরেও গেছে।

কাস্টমারেরা বলে, আমার বাড়ি বা খামার পাহারা দিতে হলে ত্যাগড়া জওয়ান ও সাহসী পাহারাদার লাগবে। না দেখে বিশ্বাস করি ক্যামনে?
সেরালির সাফ জবাব, এখানে দেখাদেখির কিছু নেই। যাদের দেখার তারা দেখলেই হবে। বিশ্বাস হলে কাগজপত্র করেন, না হলে রাস্তা মাপেন।

শহর থেকে এক বাড়ির মালিক এসে তার নানা সমস্যার কথা বললো। তার বিশাল বাড়ি। প্রায়ই চুরি-ডাকাতি হয়। পাহারা বসিয়েও লাভ হয়নি।  
আরেকজন পোলট্রি খামারি। তার সমস্যা, এলাকার ছিঁচকে চোর ছাড়াও বড় সমস্যা শিয়ালের বড় উপদ্রব। রাতে শিয়ালেরা দলবেঁধে এসে বেড়া ফাঁক করে মুরগি নিয়ে খেয়ে ফেলে। এরা এতই ভয়ংকর যে কুকুরকেও পাত্তা দেয় না।  

সেরালি ওদের কথা শুনে বললো, হ্যাঁ, কাগজপত্র করেন। বাসা-বাড়ির নাম-ঠিকানা দিন। আর আপনি দিন আপনার পোলট্রি ফার্ম এর ঠিকানা। আজ রাতেই যথাসময়ে যথাস্থানে পৌঁছে যাবে পাহারাদার।

দুই ভদ্রলোক টাকা-পয়সা দিয়ে কাগজপত্র করে চলে গেলো। সেরালি সন্ধ্যার পর ছেলেদের ডেকে বাড়ি ও পোলট্রি ফার্ম পাহারা দেওয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত বলে যথাযথ দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে দিলেন।  
পিতার নির্দেশ পাওয়ামাত্র ছেলেরা মুহূর্তে উধাও হয়ে গেলো।

বাড়িওয়ালা ও খামারি অপেক্ষায় বসে আছে, কোন সময় কোনদিক দিয়ে ভাড়া করা পাহারাদার আসে তা দেখার জন্য।  

বাড়িওয়ালা তার স্ত্রীসহ কৌতূহল নিয়ে বসে আছে বাড়ির ছাদে। হঠাৎ পনপন-ভনভন শব্দে ছাদটা কেঁপে উঠলো। মনে হলো পুরো বাসাটা কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছে। তারা দৌড়ে বাসায় গিয়ে ভয়ে কাঁপতে লাগলো।  

বাড়িওয়ালার বুঝতে বাকি নেই, পাহারাদার এসে গেছে! তারা কয়েক গ্লাস পানি পান করে চুপ করে শুয়ে পড়লো। বাড়িওয়ালার স্ত্রী ভূত-পাহারাদারের কথা শুনে বারবার মাথায় পানি ঢালছে আর অস্থিরভাবে ঘরে পাঁয়চারি করছে।

চলবে…

বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৮
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।