ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বুদ্ধিজীবী-শহীদ বুদ্ধিজীবী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭
বুদ্ধিজীবী-শহীদ বুদ্ধিজীবী ফাইল ছবি

বুদ্ধিজীবীদের বলা হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তারাই একটি জাতি, দেশ বা সমাজের পথ প্রদর্শক। কিন্তু কারা এই বুদ্ধিজীবী? সহজ কথায় বললে, যারা বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় নিয়োজিত তারাই বুদ্ধিজীবী।

বুদ্ধিবৃত্তিক পেশার মানুষ বলতে বোঝায়- লেখক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, কণ্ঠশিল্পী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, নাটক-চলচ্চিত্রকর্মী প্রভৃতি পেশার মানুষকে। তবে বুদ্ধিজীবীদের অবশ্যই হতে হয় জ্ঞানী-গুণী, বিচক্ষণ, ধর্মনিরপেক্ষ ও মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন।

তারা নিজেদের বিচার, বুদ্ধি, জ্ঞান ও বিচক্ষণতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য কাজ করেন।

দেশ বা সমাজের উন্নয়ন ও সংস্কারের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেন বুদ্ধিজীবীরা। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। প্রাচীন ভারতবর্ষে সতীদাহ নামে একটি অমানবিক প্রথার প্রচলন ছিল। এ প্রথা অনুযায়ী হিন্দুধর্মাবলম্বী বিধবা নারীদের মৃত স্বামীর সঙ্গে চিতায় সহমরণে দেওয়া হতো।  

এখন এ প্রথাটিকে খুব অমানবিক মনে হলেও প্রাচীন আমলে তা খুব স্বাভাবিক বলেই মনে করতো সবাই। এ অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেন ১৮ শতাব্দীর বুদ্ধিজীবীরা। তাদের আন্দোলনের ফলেই ভারতবর্ষে সতীদাহ প্রথা বাতিল হয়ে যায়। এ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন- রাজা রামমোহন রায়।

সমাজ সংস্কারের পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মানুষের অধিকার আদায়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বুদ্ধিজীবীরা। ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশ শাসকদের বিদায় করতে বিপ্লবীদের অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তারা। পরবর্তীকালে ভাষা আন্দোলন, স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন এবং ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য।  

বাঙালি জাতির ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের চালানো অত্যাচারের বিষয়ে সাধারণ মানুষকে জানিয়েছেন বুদ্ধিজীবীরা। বাংলাদেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যাচ্ছে, এ বিষয়ে জনগণকে অবগত করেন অর্থনীতিবিদরা। বাঙালি সাংবাদিকরা পত্র-পত্রিকায় তুলে ধরেন প্রতিটি আন্দোলনের খবর। শিল্প-সাহিত্যিকরা গল্প-উপন্যাস, নাটক, গান, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের মাধ্যমে সচেতন করে তোলেন। এভাবেই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরিতে ভূমিকা রাখেন বুদ্ধিজীবীরা।  

মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা বুঝে গিয়েছিল এ যুদ্ধে তারা কখনোই সফল হতে পারবে না। আর যুদ্ধ শেষে দেশের বুদ্ধিজীবীরা বেঁচে থাকলে স্বাধীনতাবিরোধী বিশ্বাসঘাতকরা কখনোই এ দেশের মাটিতে বসবাস করতে পারবে না। তাই জাতিকে মেধাহীন ও পঙ্গু করে ফেলতে পাক-হানাদার ও তাদের এ দেশীয় অনুচর রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনী এদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।  

১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর রাতে দেশের শত শত শিক্ষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও কবি-সাহিত্যিকদের চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় বুদ্ধিজীবীদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ ফেলে রাখা হয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন মুনীর চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সার, ড. ফজলে রাব্বী, নাজিমুদ্দিন আহমেদ, শহীদ সাবের, সেলিনা পারভিন, আনোয়ার পাশা, গিয়াসউদ্দীন আহমেদ, ড. আবুল কালাম আজাদসহ অনেকে। অনেকের লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি এবং অনেকের লাশ পাওয়াও যায়নি।  

প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে পালন করা হয় ‘বুদ্ধিজীবী দিবস’। ঢাকার মোহাম্মদপুর থানার রায়ের বাজারে নির্মাণ করা হয়  ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ’।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭
এনএইচটি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।