ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

দেশের সবচেয়ে বৃহৎ শিশুতোষ গ্রন্থাগার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১০
দেশের সবচেয়ে বৃহৎ শিশুতোষ গ্রন্থাগার

চারদিকে কেবলই শিশু পাঠক। তারপরও নীরবতা।

নেই কোন কোলাহল। যে যার ইচ্ছা মত বই নিচ্ছে, পড়ছে। সামান্য কথা বলার সময়টুকুও যেন কারও নেই। বৃহস্পতিবার স্কুল শেষে এমনই ভাবে মুখরিত হয়ে উঠে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ শিশুতোষ গ্রন্থাগারটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন দোয়েল চত্বরের পাশে বাংলাদেশ শিশু একাডেমীতে অবস্থিত এই গ্রন্থাগারের নাম জোবেদা খানম গ্রন্থাগার। শিশু একাডেমী প্রতিষ্ঠার সময়ই থেকেই গ্রন্থাগারের সূত্রপাত। ১৯৯২ সালে শিশু একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জোবেদা খাতুনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে গ্রন্থাগারের নামকরণ করা হয় জোবেদা খানম গ্রন্থাগার।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর প্রশাসনিক ভবনের দোতলায় নিরিবিলি পরিবেশে অবস্থিত এই গ্রন্থাগারে রয়েছে একসাথে ২’শ শিশু-কিশোরের বসে বই পাঠের সুবিধা। শিশুতোষ গ্রন্থাগার বলে শুধু যে শিশু-কিশোরাই এই গ্রন্থাগারে আসে তা কিন্তু নয়। প্রতিদিনই নানা গবেষণার কাজে এখানে আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ গবেষকরা। কারণ এখানে রয়েছে পাঁচ শতাধিক বিশ্বকোষ ও জার্নাল। এছাড়াও রয়েছে ৩১ হাজারেরও বেশী বই। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জীবনী গ্রন্থের সমৃদ্ধ সংগ্রহ রয়েছে এই গ্রন্থাগারে। এখানে প্রতিদিনই রাখা হয় ৭টি পত্রিকা।

বর্তমানে গ্রন্থাগারের সদস্য সংখ্যা ৬ শতাধিক। প্রতিদিনই বাড়ছে সদস্যদের সংখ্যা। সাধারণত স্কুল শিক্ষার্থীরাই গ্রন্থাগারের সদস্য হাতে পারে এবং কেবল মাত্র তারাই বাসায় বই নিয়ে পড়ার সুযোগ পায়। সদস্য ফি ১০০ টাকা। তবে গ্রন্থাগারে বসে যে কেউ বই পড়তে পারে। গ্রন্থাগারটি সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য রয়েছেন একজন গ্রন্থাগারিক, গ্রন্থাগার সহকারী, ক্যাটালগারসহ আরও বেশ কয়েকজন কর্মী। দেশের সবচেয়ে বৃহৎ এই শিশুতোষ গ্রন্থাগারকে সমৃদ্ধ করতে সম্প্রতি ব্রিটিশ কাউন্সিল ইংরেজী ভাষার ২০০টি শিশুতোষ বই দিয়েছে। শিশু একাডেমীর এই গ্রন্থাগারের মত দেশের সব শিশু একাডেমীতেও রয়েছে শিশুতোষ গ্রন্থাগার। তবে সবক’টি গ্রন্থাগারের মধ্যে জোবেদা খাতুন গ্রন্থাগারটি সবচেয়ে সমৃদ্ধ বলে সূত্র জানায়।

গ্রন্থাগারের নিয়মিত পাঠক আব্দুল্লাহ হাসান জানায়, সুযোগ পেলেই সে এখানে বই পড়তে চলে আসে। বই পড়ার পাশাপাশি সাহিত্য আসর, পাঠচক্রসহ গ্রন্থাগারের প্রায় সব আয়োজনেই সে অংশ নেয়। গ্রন্থাগারের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ নিয়ে ইতোমধ্যে সে একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেছে।

শিশুদেরকে শিশুতোষ বই পাঠের প্রতি আগ্রহী করে তোলাই জোবেদা খাতুন গ্রন্থাগারের মূল লক্ষ্য নয়। পাশাপাশি এই গ্রন্থাগারের উদ্যোগে বছর জুড়ে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, সেমিনার, পাঠচক্রসহ নানা অনুষ্ঠান। গ্রন্থাগারের সদস্যরা ছাড়াও এসব অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্কুল শিক্ষার্থী ও শিশু সংগঠনের সদস্যরা স্বতস্ফুর্ত ভাবে অংশ নেয়। সম্প্রতি ঢাকার ৩২টি স্কুল নিয়ে জোবেদা খানম গ্রন্থাগারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো আন্ত:স্কুল কুইজ প্রতিযোগিতা। যেখানে অংশ নেয় ৪৫০ জন শিক্ষার্থী। সবচেয়ে মজার হলো এই গ্রন্থাগারের উদ্যোগে বাংলাদেশে প্রথম শিশু-কিশোরদের প্রশিণ ভিত্তিক চলচ্চিত্র ও অনুষ্ঠান নির্মাণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। প্রতিবছর অনুষ্ঠিত এই কর্মশালায় ২০ জন শিশু-কিশোরকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাছাই করে প্রশিণ দেয়া হয়। পরবর্তীতে তাদেরকে দিয়ে শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মান করানো হয়। গ্রন্থাগারের অনন্য এসব কাজে উৎসাহ প্রদান করেন শিল্পী মোস্তফা মনোয়ার, ড. জাফর ইকবাল, আনিসুল হকসহ দেশের বরেণ্য বক্তিরা।

বই পাঠের পাশাপাশি শিশুদেরকে প্রযুক্তিগত ভাবে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য গ্রন্থাগারটিতে মিডিয়া ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন কর্ণার গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। যেখানে শিশুদেরকে কমপিউটার, ইন্টারনেট, ব্লগিং, সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিণ দেয়া হবে জানিয়েছেন গ্রন্থাগারিক রেজিনা আক্তার।

প্রতিবেদনটি তৈরী করেছে চৈতী, আনিকা, আফিফা, সুরভী, দিপ্তী, নিশান, সাগর, রেদোয়ান, আজিজ, মেহেদী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।