ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

ইংরেজি নববর্ষের ইতিকথা

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪
ইংরেজি নববর্ষের ইতিকথা

পুরনোকে বিদায় দিয়ে স্বাগত জানানোর সময় এসেছে নতুন বছরকে। পুরনো হিসাব-নিকাশ ফেলে এবার ভাবতে হবে নতুন বছর নিয়ে।



প্রতিবছরই পুরনো বছরটাকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠি আমরা। অতীতকে ফেলে নতুনকে বরণ করে নেওয়াই পৃথিবীর নিয়ম। কিন্তু সব অতীত ভুলে গেলে চলে না। তবুও আমরা ভুলে যাই। এই যেমন ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাসটা অনেকেই মনে রাখে নি।

তোমরাও যারা সেই না মনে রাখাদের দলে, তাদের ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাসটা আরো একবার মনে করিয়ে দিচ্ছি।

সময়ের হিসেবটা সহজ করতে মানুষ চাঁদের সাহায্যে প্রথম বছর গুণতে শিখেছিল। সেটা অনেক অনেক বছর আগের কথা। এই গণনার নিয়মকে বলা হয় চন্দ্র বর্ষ। এরপর মিশরীয়রা সূর্য দেখে বছর গুণতে শিখল। সেটাকে বলা হত সৌরবর্ষ।

বছর গুণতে শিখলেও তার হিসাব না রাখতে পারলে সেটা মনে রাখা মুশকিল। তাই মনে রাখার জন্য সুমেরীয়রা আবিষ্কার করল ক্যালেন্ডার।

জানোই তো, মানবসভ্যতার উন্নয়নে গ্রিক আর রোমানদের বিরাট ভূমিকা ছিল। রোমানরা বর্ষপঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডার পেয়েছিল গ্রিকদের কাছ থেকে। তাদের হিসেবে আবার ১০ মাসে বছর হত। শীতের দুই মাসকে বছরের মধ্যে গুণত না তারা। মার্চের ১ তারিখে তাদের নতুন বছর শুরু হত। পরে রোমের সম্রাট নুমা জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মারসিডানাস- তিনটি মাসকে অন্তর্ভুক্ত করেন ইংরেজি বর্ষপঞ্জিকায়। তখন থেকে নববর্ষ পালিত হত দু’দিন, ১ জানুয়ারি ও ১ মার্চ।
সম্রাট জুলিয়াস সিজার খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে মিশরীয় সৌরবর্ষের বর্ষপঞ্জিকা সংস্কার করে নতুন এক বর্ষপঞ্জিকা তৈরি করেন। তিনি জ্যোতির্বিদদের সঙ্গে আলোচনা করে সে বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মাঝে ৬৭ দিন ও ফেব্রুয়ারির পর ২৩ দিন যুক্ত করে ক্যালেন্ডার সংস্করণ করেন। এই ক্যালেন্ডারটিকে বলা হয় জুলিয়ান ক্যালেন্ডার।

জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে ফেব্রুয়ারি মাসকে ২৮ দিন রেখে মার্চ, মে, অক্টোবর ও কুইন্টিলিস মাস ৩১ দিনে এবং জানুয়ারি ও সেক্সটিনিস মাসের সঙ্গে দু’দিন যুক্ত করে ৩১ দিন করে গণনা করা হয়। প্রতি চার বছর পর পর ফেব্রুয়ারি মাসের সঙ্গে একদিন যুক্ত করা হয়। এভাবেই আসে লিপইয়ার।

রোমানদের ফটক ও দরজার দেবতা জানুসের নামানুসারে জানুয়ারি মাস হওয়ায় এই মাসটিকেই নতুন বছরের ফটক হিসেবে বেছে নেন জুলিয়ান। তার সময় থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে নববর্ষ উদযাপন শুরু হয় ১লা জানুয়ারি।

পরে কুইন্টিলিস মাসের নাম পাল্টে জুলিয়ানের নাম অনুযায়ী রাখা হয় জুলাই। আরেক রোমান সম্রাট অগাস্টিনের নাম অনুযায়ী সেক্সটিনিস মাসের নাম রাখা হয় অগাস্ট।

কিন্তু এখানেই সমস্যার সমাধান হল না। মধ্যযুগে ইউরোপের খ্রিষ্টানরা ২৫মার্চ নববর্ষ উদযাপন করতে শুরু করল। খ্রিস্টধর্ম অনুযায়ী ২৫ মার্চ যিশুখ্রিস্টের মা তার অ্যাঞ্জেল গ্যাব্রিয়েলের কাছ থেকে তার সন্তান হওয়ার সংবাদ পান। এছাড়া খ্রিষ্টধর্মের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতেও কোনো কোনো জায়গায় ছাড়া ছাড়াভাবে নববর্ষ পালিত হত।

৫৩২ অব্দে ডাইওনিসিয়াম এক্সিগুয়াস নামক এক খ্রিস্টান পাদ্রী খ্রিস্টাব্দের প্রচলন ঘটান।
১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংস্করণ করেন। সে বছর ১লা জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং লিপইয়ারের সংজ্ঞাও তৈরি করা হয়। পোপ গ্রেগরি ঘোষণা করেন যেসব শতবর্ষীয় অব্দ ৪০০ দিয়ে বিভক্ত হবে, সেগুলো লিপইয়ার হিসেবে গণ্য হবে। এভাবে তৈরি হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার, বর্তমানে যার আধুনিক রূপ আমাদের আজকের ইংরেজি ক্যালেন্ডারটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।