ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইচ্ছেঘুড়ি

বড়দিন ও স্যান্টা ক্লজ

মীম নোশিন নাওয়াল খান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৩
বড়দিন ও স্যান্টা ক্লজ

ঢাকা: স্যান্টা ক্লজকে চেনো তো? বড়দিনের আগের রাতে লাল-সাদা পোশাকের যে বৃদ্ধ মানুষটি সারা পৃথিবীর লক্ষ্মী শিশুদের উপহার দিয়ে যান তিনিই হচ্ছেন স্যান্টা ক্লজ।

স্যান্টা ক্লজ শিশুদের অত্যন্ত প্রিয় একজন ব্যক্তি।

শিশুরা বিশ্বাস করে, সত্যিই স্যান্টা বলে কেউ আছে। আর সেজন্যই তো বড়দিনের আগে স্যান্টা ক্লজকে ঘিরে চলে অনেক জল্পনা-কল্পনা।

বলে হয়ে থাকে, যে শিশুরা সারা বছর বাবা-মায়ের কথা শোনে, লক্ষ্মী হয়ে থাকে, ক্রিসমাস ইভ অর্থাৎ বড়দিনের আগের রাতে কিংবা ৬ ডিসেম্বর ফিস্ট ডে-তে স্যান্টা ক্লজ তাদের উপহার দিয়ে যান। স্যান্টা ক্লজ পুরো পৃথিবীর শিশুদের উপহার বিতরণ করতে যান রেইন্ডার বা বল্গাহরিণে টানা স্লেজগাড়িতে চড়ে। সেগুলো কিন্তু যেনতেন হরিণ নয়, তারা আকাশে উড়ে বেড়াতে পারে। উড়ে উড়েই সব জায়গায় স্যান্টাকে নিয়ে যায় হরিণগুলো।

স্যান্টা ক্লজকে অনেক নামে ডাকা হয়। শিশুদের কাছে সবচেয়ে আদর ও ভালোবাসার নামটা হচ্ছে শুধুই “স্যান্টা”। এছাড়া সেইন্ট নিকোলাস, ফাদার ক্রিসমাস, ক্রিস ক্রিঙ্গল নামেও ডাকা হয় তাকে। আমেরিকার দেশগুলোতে “স্যান্টা ক্লজ” নামে বেশি পরিচিত হলেও কাল্পনিক এই ব্যক্তিকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ “ফাদার ক্রিসমাস” বলে ডাকে।

মূলত আজকের স্যান্টা ক্লজের চরিত্রটি এসেছে ঐতিহাসিক উপহার বিতরণকারী কিংবদন্তি চরিত্র সেইন্ট নিকোলাসের জীবন থেকে। তবে সেই কিংবদন্তি কিন্তু আজকের স্যান্টার মতো লাল-সাদা আলখেল্লা পরা কালো চামড়ার বেল্ট ও বুট জুতো পরা ব্যক্তি ছিলেন না। লোকমুখে ও বিভিন্ন উপকথা থেকে জানা যায় সেইন্ট নিকোলাসের আসল চিত্রটি ছিল বিশপের আলখেল্লা পরা সন্তের চিত্র। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ক্যারিক্যাচারিস্ট ও রাজনৈতিক কার্টুনিস্ট টমাস নাস্টের আঁকা একটি চিত্রের প্রভাবে স্যান্টা ক্লজ আজকের রূপ ধারণ করে।    

প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী স্যান্টা ক্লজ সারা পৃথিবীর শিশুদের দুই ভাগে ভাগ করেন- দুষ্টু ও ভালো। তারপর সব ভালো শিশুদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে উপহার দিয়ে যান। আর দুষ্টু শিশুদের... থাক। সেটা একটু পরে বলছি।

স্যান্টা ক্লজকে নিয়ে শিশুদের চিন্তা-ভাবনার অন্ত নেই। বিভিন্ন দেশে শিশুরা ক্রিসমাসের আগের রাতে স্যান্টার জন্য দুধ, পাউরুটি, বিয়ার সহ বিভিন্ন খাবার ও পানীয় রেখে দিয়ে তারপর ঘুমাতে যায়। ঘরের যেকোনো জায়গায় মোজা ঝুলিয়ে রাখার একটা রীতি আছে, যে মোজায় উপহার রেখে যাবেন স্যান্টা ক্লজ। কেউ কেউ আবার স্যান্টার হরিণগুলোর জন্য মোজার ভেতরে রেখে দেয় কচি গাজর। আর সকালে উঠে দেখা যায় সেই মোজার ভেতরে গাজরের বদলে রয়েছে সুন্দর কোনো উপহার!

তবে হ্যাঁ, শিশুটি যদি সারা বছর লক্ষ্মী হয়ে না থাকে, অনেক দুষ্টুমি করে, বাবা-মায়ের কথা না শোনে, সেক্ষেত্রে অনেক সময় তার জন্য উপহারের বদলে কয়লাও রেখে যান স্যান্টা!  

স্যান্টা ক্লজকে চিঠি লেখার একটা প্রচলন আছে। শিশুরা বড়দিনের উপহারের একটা তালিকা করে স্যান্টা ক্লজকে চিঠি লেখে। সেই চিঠিগুলো পাঠানো হয় নর্থ পোলে, স্যান্টা ক্লজের ঠিকানায়। শুধু উপহারের তালিকাই নয়, শিশুদের চিঠিতে থাকে আরো অনেক মিষ্টি মিষ্টি কথা। কেউ স্যান্টা ক্লজ ও মিসেস ক্লজের শরীর-স্বাস্থ্যের খোঁজ নেয়, কেউবা আবার জানতে চায় কেমন আছে স্যান্টার হরিণ ও বামনেরা।

ও হ্যাঁ, স্যান্টা ক্লজের বামনদের কথা তো বলাই হয়নি। শিশুদের উপহার তালিকা অনুযায়ী তাদের জন্য খেলনা ও অন্যান্য উপহার তৈরি করে স্যান্টা ক্লজের বামনেরা। তারা রাতদিন স্যান্টার কারখানায় খেটেখুটে সুন্দর সব উপহার তৈরি করে।
 
স্যান্টা ক্লজ আসলে কোথায় থাকেন তা নিয়ে মতভেদ আছে। একেক দেশে স্যান্টার একেক ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের মতে স্যান্টা ক্লজ উত্তর মেরুতে বাস করেন। তার একটি নির্দিষ্ট ঠিকানাও আছে, যে ঠিকানায় অসংখ্য শিশু তাকে চিঠি পাঠায়।

তবে হ্যাঁ, স্যান্টা ক্লজের উপর শিশুদের বিশ্বাস ভালো কী খারাপ- তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। অনেকেই মনে করেন শিশুদের মনে এই মিথ্যে ও কাল্পনিক বিষয়ে বিশ্বাস তৈরি করাটা অনৈতিক। অনেক খ্রিস্টান আবার মনে করেন স্যান্টা ক্লজের ব্যাপারটা খ্রিস্টানদের প্রকৃত ধর্মীয় সংস্কৃতির উৎস ও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করছে।

কিন্তু এসবকিছু মোটেও প্রভাব ফেলেনি স্যান্টা ক্লজের উপর। বর্তমানে বড়দিনের কিছুদিন আগে থেকেই পশ্চিমা দেশগুলোতে স্যান্টা ক্লজকে দেখা যায়। স্যান্টার মুখ ভর্তি থাকে সাদা দাড়ি-গোঁফ, পরনে লাল-সাদা আলখেল্লা, টুপি, চামড়ার বেল্ট ও বুট জুতো। স্যান্টা ক্লজ সাধারণত স্থূলকায় ও সদা হাস্যোজ্জ্বল হন। তার কাঁধে থাকে লালরঙা উপহারের ঝোলা। এগুলো মাথায় রেখেই স্যান্টা ক্লজ সাজতে হয়।

বড়দিনের কয়েকদিন আগে থেকে বিভিন্ন ক্রিসমাস পার্টি, দোকান, হোটেল-রেঁস্তোরায় দেখা পাওয়া যায় স্যান্টা সাজা ব্যক্তিদের। সাধারণত শিশুদের মাঝে নানা রকমের চকলেট ও লজেন্স বিতরণ করেন তারা। পশ্চিমা দেশগুলোতে আবার কিছু স্যান্টা ক্লজের কারখানার মতো দোকানও আছে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে স্যান্টা ক্লজ সাজার প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রতিষ্ঠানও আছে। সেখানে শেখানো হয় কীভাবে সত্যিকারের স্যান্টা ক্লজ সাজতে হয়।

ও, আরেকটা কথা। স্যান্টা ক্লজকে কিন্তু এখন বাংলাদেশেও দেখা যায়। বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টে বড়দিনের পার্টিতেই তার দেখা পেয়ে যাবে তুমি। এছাড়া শিশুদের বিনোদনের পার্কগুলোতেও বড়দিনের সময় কখনো-সখনো আবির্ভাব হয় স্যান্টারূপী ব্যক্তিদের।

সব তো শুনলে। এখন কী তুমিও চাও স্যান্টা ক্লজের কাছ থেকে মজার মজার চকলেট বা সুন্দর কোনো উপহার পেতে? যদি চাও, তাহলে কী করতে হবে বলো তো? তোমাকে মা-বাবার সব কথা শুনে হয়ে যেতে হবে অনেক ভালো আর লক্ষ্মী ছেলে কিংবা মেয়ে।

ইচ্ছেঘুড়িতে লেখা পাঠান এই মেইলে: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ০৪১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।