ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

কোরআন ও হাদিসের আলোকে করোনা মহামারি ও মুমিনদের করণীয়

মো. মোশাররেফ হোসেন খান, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২১
কোরআন ও হাদিসের আলোকে করোনা মহামারি ও মুমিনদের করণীয়

কোরআন-হাদিসে মহামারি ও বালা-মুছিবতকে মানুষের গুনাহের ফসল বলা হয়েছে। সে হিসেবে করোনা ভাইরাসও আমাদের গুনাহ ও অন্যায়ের ফসল।

বান্দা যখন বেপরোয়াভাবে গুনাহ করে আল্লাহতায়ালা তাকে সতর্ক করতে বিভিন্ন পরীক্ষায় ফেলেন। যেন সে গুনাহ থেকে নিবৃত্ত হয়।

মহামারির কারণ:
মানুষ পাপ করতে করতে যখন পাপের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখনই আল্লাহর শাস্তি নাজিল হয়। পাপিষ্ঠ ফেরাউনকে আল্লাহ তায়ালা তখনই ধরেছেন, যখন সে নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করেছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: ‘হে মুসা! তুমি ফেরাউনের কাছে যাও, সে অত্যন্ত উদ্ধত হয়ে গেছে। ’ (সূরা: ত্বাহা, আয়াত ২৪)।

নমরুদকে আল্লাহ তায়ালা তখনই শাস্তি দিয়েছেন, যখন সে নিজেকে প্রভু বলে দাবি করেছে। অনুরূপভাবে আদ, সামুদ প্রভৃতি জাতিকে তাদের সীমাহীন পাপাচারের কারণে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

বনি ইসরাইলরা আল্লাহর কিতাব তাওরাতকে অস্বীকার, উত্তম জিনিস তথা মান্না ও সালওয়ার পরিবর্তে খারাপ জিনিস তথা ভূমির উৎপন্ন জিনিস চাওয়া, আমালেকা সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আল্লাহর অগণিত নিয়ামত ভোগ করেও অকৃতজ্ঞ হওয়ার কারণে চির লাঞ্ছনা ও আল্লাহর ক্রোধে পতিত হয়েছে।

এভাবে পবিত্র কোরআনে যে ৬টি জাতির ধ্বংসের কথা উল্লেখ আছে তা হলো- মাদইয়ান সম্প্রদায়, হুদ (আ.)-এর আদ জাতি, লুত (আ.)-এর জাতি, সালেহ (আ.)-এর সামুদ সম্প্রদায়, নুহ (আ.)-এর জাতি ও মুসা (আ.)-এর জাতি।

আগের নবীদের এসব কাহিনী পবিত্র কোরআনে আলোচনা করে আল্লাহ তায়ালা এটিই বোঝাতে চেয়েছেন যে, যদি উম্মতে মুহাম্মদী (সা.)ও তাদের মতো পাপাচারে লিপ্ত হয়, তবে তাদের পরিণতিও অনুরূপ হবে এবং একই ভাগ্য বরণ করতে হবে।  

দুনিয়া কাঁপানো যত মহামারি:
মহামারির ইতিহাস মানব সভ্যতার মতোই প্রাচীন। বিভিন্ন সময় সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে কোনো নির্দিষ্ট এলাকায়, কখনও আবার বিশ্বব্যাপী। প্লেগ, কলেরা, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, ইনফ্লুয়েঞ্জা, গুটিবসন্ত বিভিন্ন রোগ নানা সময়ে মহামারির আকার নিয়েছে। সে রকম কিছু মহামারির তথ্য তুলে ধরা হলো-

প্লেগ অব এথেন্স (খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০ অব্দ):
গ্রিক ইতিহাসবিদ থুসিডিডিস (৪৬০-৪০০ খ্রিষ্টপূর্ব) লিখেছেন, “সুস্থ-সবল মানুষের হঠাৎ করে শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছিল। চোখ লাল হয়ে জ্বালাপোড়া শুরু হয়েছিল। জিভ ও গলা লালচে হয়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল। ” এই মহামারি আসলে কী ছিল, তা পরবর্তীতে বিজ্ঞানীদের একটি বিতর্কের বিষয় হয়ে রয়েছে।

জাস্টিনিয়ান প্লেগ (৫৪১ খ্রিস্টাব্দ):
সিএনএনের তথ্য অনুযায়ী, ৫৪১ খ্রিস্টাব্দে শুরু হলেও এই মহামারি চলে প্রায় দুই শতাব্দী ধরে। মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের প্রাণ নেয় এই মহামারি। ব্যাকটেরিয়াজনিত এই রোগ ইঁদুরের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

দ্য ব্ল্যাক ডেথ (১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দ):
ইউরোপের অন্যতম প্রাণসংহারী মহামারি ‘ব্ল্যাক ডেথ’। লাইভসায়েন্সের তথ্য মতে, এশিয়া থেকে ইউরোপে ছড়িয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যায় এই প্লেগ। অনেকের মতে, এই মহামারিতে ইউরোপের অর্ধেকের মতো মানুষ প্রাণ হারায়।

কলেরা মহামারি:
এই রোগটি প্রথম বৈশ্বিকভাবে মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে ১৮১৭ সালে। ওই বছর বাংলাদেশের যশোরে এই রোগের প্রাদুর্ভাবে মানুষের প্রাণহানি ঘটতে থাকে। কিছু দিনের মধ্যে তা বর্তমান ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ১৮২০ সাল নাগাদ থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্সে মহামারি আকারে এই রোগ দেখা দেয়। ওই সময় ইন্দোনেশিয়ার শুধু জাভা দ্বীপেই কলেরায় এক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।

স্প্যানিশ ফ্লু (১৯১৮-১৯২০):
মৃতের সংখ্যার হিসাবে আধুনিক যুগের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারির একটি হচ্ছে ১৯১৮ সালে ধরা পড়া স্প্যানিশ ফ্লু। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যেখানে পাঁচ বছরে ১ কোটি ১৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়, সেখানে স্প্যানিশ ফ্লুতে মাত্র দুই বছরে মারা যায় ২ কোটি মানুষ। লাইভসায়েন্স ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ সাগর থেকে উত্তর মেরু পর্যন্ত ৫০ কোটির মতো মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। তাদের এক পঞ্চমাংশের মৃত্যু ঘটে, অনেক আদিবাসী গোষ্ঠী বিলুপ্তির পথে চলে যায়। ১৯১৮ ও ১৯১৯ সালের মধ্যে স্প্যানিশ ফ্লুতে আনুমানিক ৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়।

এশিয়ান ফ্লু (১৯৫৭-১৯৫৮):
এশিয়ান ফ্লুতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১১ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই মারা গিয়েছিল ১ লাখ ১৬ হাজার মানুষ। পরে ভ্যাকসিন দিয়ে ওই মহামারি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছিল।

গুটি বসন্ত:
বেশ পুরনো ইতিহাস এই রোগের। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে গুটি বসন্ত ছিল এই পৃথিবীতে। ষষ্ঠ শতক থেকে অষ্টাদশ শতক নাগাদ বিশ্বজুড়ে এই রোগের দাপট ছিল। গড়ে আক্রান্তদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু ঘটে। যারা বেঁচে যেতেন তাদের শরীরের ক্ষতচিহ্ন তার আক্রান্ত হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিত। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে চলে আসা প্রাণঘাতী গুটি বসন্ত টিকার মাধ্যমে নির্মূল হয়েছে ১৯৭৯ সালে।

শতকের পর শতক বিশ্বের নানা প্রান্তে প্রাণহানি ঘটিয়ে চলা এই রোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা কলেজ অব মেডিসিনের সহকারী ডিন এবং প্রফেসর অব মেডিসিন হিসাবে কর্মরত সেজান মাহমুদ লিখেছেন, “খ্রিষ্টপূর্ব ১০ হাজার বছর থেকে মানুষের মধ্যে অস্তিত্ব ধরলে বলা যায়, এই রোগ ১২ হাজার বছর ধরে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন (৫০ কোটি) লোকের মৃত্যু ঘটিয়েছে। এখন এটি পৃথিবী থেকে একেবারে বিদায় নিয়েছে টিকার কারণে। ”

এইচআইভি:
(১৯৮১ থেকে চলমান) হিউম্যান ইমিউনোডিফিসিয়েন্সি ভাইরাস-এইচআইভি প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৮০-এর দশকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বর্তমানে আনুমানিক তিন কোটি ৬৯ লাখ মানুষের দেহে এই ভাইরাস রয়েছে। বিশ্বজুড়ে এইডসে প্রাণ হারিয়েছেন তিন কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ, যাতে এখনও চিকিৎসা আবিষ্কার না হওয়া এই রোগ ইতিহাসের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক মহামারির একটিতে পরিণত হয়েছে।

সার্স:
একুশ শতকে প্রথম যে সংক্রামক রোগ আতঙ্ক হয়ে এসেছিল তার নাম ‘সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম’- সার্সও; এটিও এক ধরনের করোনা ভাইরাস।

প্রথম সার্স আক্রান্ত রোগী মিলেছিল চীনেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। ফ্লু উপসর্গের এই রোগে প্রায় ২৬টি দেশে আক্রান্ত হয়েছিল ৮ হাজারের বেশি মানুষ; মারা গিয়েছিল অন্তত আটশ জন। তবে মানব শরীরে কী করে এই জীবাণুর সংক্রমণ ঘটেছিল সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ইবোলা:
প্রাণঘাতী ইবোলা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ দেখা দেয় ১৯৭৬ সালে, একইসঙ্গে কঙ্গো ও দক্ষিণ সুদানের দুটি অঞ্চলে। পরে ইবোলা নদীর তীরবর্তী একটি গ্রামে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে ভাইরাসটি ইবোলা নাম পায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ভয়াবহ এই রোগে মৃত্যু হার ৫০ শতাংশের মতো। ইবোলার টিকা দেওয়া হলেও  এখনো এই রোগ নির্মূল করা যায়নি।

কোভিড-১৯:
২০২০ সাল শুরুর আগ মুহূর্তে চীনের উহানে যে নতুন ভাইরাস বাসা বেঁধেছিল মানুষের শরীরে, সেই ভাইরাস লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল বছরজুড়ে। বছরব্যাপী দুনিয়াজুড়ে আতঙ্ক হয়ে থাকা এই ভাইরাস নাম পেয়েছে নভেল করোনা ভাইরাস (সার্স সিওভি-২), আর রোগের নাম হয়েছে কোভিড-১৯।

এ যাবৎ পৃথিবীতে যত মহামারি এসেছে তার মধ্যে করোনা ভাইরাসই বর্তমানে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়েছে। এরই মধ্যে (১৫/০১/২০২১ খ্রি: পর্যন্ত) বিশ্বে এই রোগে ৯১.৬ মিলিয়নের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ১.৯৬ মিলিয়নের বেশি মানুষের। সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে সাত লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত এবং প্রায় সাড়ে ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়া মারাত্মক সংক্রামক এ রোগে স্থবির হয়ে পড়ে পুরো বিশ্ব। মহামারি আকারে যা চলছে এখনও। স্বস্তির খবর এই নতুন করোনা ভাইরাসের টিকা এরইমধ্যে কয়েকটি দেশে প্রয়োগ করা শুরু হয়েছে। তবে যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসের নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে, যা আবার বিজ্ঞানীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

করোনা ভাইরাস মহামারি বছর পার করলেও জীবাণুটি এখনও দুর্বল হয়নি জানিয়ে কেমব্রিজের পিএইচডি ডিগ্রিধারী এই গবেষক বলেন, “ভাইরাস থেকে যেসব রোগ মহামারি আকারে ছড়ায় সেগুলো বিভিন্ন কারণে এক সময় দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে করোনা ভাইরাস দুর্বল হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। ”

দুনিয়াবি এসব মহামারি বা বিপর্যয় ও বিভিন্ন বিপদ-আপদ সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা বলেন, 

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

‘স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। ’ (সূরা: রূম, পারা: ৩০, আয়াত: ৪১)।

قُلْ سِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِينَ مِن قَبْلُ كَانَ أَكْثَرُهُم مُّشْرِكِينَ

‘বলুন, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং দেখ তোমাদের পুর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছে। তাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিক। ’ (সূরা: রূম, পারা: ৩০, আয়াত: ৪২)।

হাদিস শরিফে প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: 

…لَمْ تَظْهَرْ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلَّا فَشَا فِيهِمْ الطَّاعُونُ وَالْأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلَافِهِمْ

...যখন কোনো কওমের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে এবং তারা তা প্রকাশ্যেও করতে শুরু করে তবে তাদের মাঝে দুর্ভিক্ষ ও মহামারি ব্যাপক আকার ধারণ করে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিল না। ’ (ইবনু মাজাহ, আসসুনান : ৪০১৯)।

রোগের মহামারি নিয়ে পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনে বেশ কিছু আয়াত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি আয়াত নিম্নে দেওয়া হলো-

সুরা আহযাব: আয়াত-৯: আর তারপর আমি তোমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলাম এক ঝঞ্ঝা বায়ু এবং এক বাহিনী। এমন এক বাহিনী যা তোমরা চোখে দেখতে পাওনি।

সুরা আন‌আম: আয়াত-৪২: তারপর আমি তাদের ওপর রোগব্যাধি, অভাব, দারিদ্র্য, ক্ষুধা চাপিয়ে দিয়েছিলাম, যেন তারা আমার কাছে নম্রতাসহ নতি স্বীকার করে।

সুরা ইয়াসিন: আয়াত-২৮-২৯: তারপর (তাদের এই অবিচারমূলক জুলুম কার্য করার পর) তাদের বিরুদ্ধে আমি আকাশ থেকে কোনো সেনাদল পাঠাইনি। পাঠানোর কোনো প্রয়োজন‌ও আমার ছিল না। শুধু একটা বিস্ফোরণের শব্দ হলো, আর সহসা তারা সব নিস্তব্ধ হয়ে গেল (মৃত লাশ হয়ে গেল)।

সুরা আ’রাফ: আয়াত-১৩৩: শেষ পর্যন্ত আমি এই জাতিকে পোকামাকড় বা পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ, রক্ত, প্লাবন ইত্যাদি দ্বারা শাস্তি দিয়ে ক্লিষ্ট করি।

সুরা বাকারা: আয়াত-২৬: নিশ্চয়ই আল্লাহ মশা কিংবা এর চাইতেও তুচ্ছ বিষয় (ভাইরাস বা জীবাণু) দিয়ে উদাহরণ বা তার নিদর্শন প্রকাশ করতে লজ্জা বোধ করেন না।

সুরা আ’রাফ: আয়াত-৯৪: ওর অধিবাসীদের আমি দুঃখ, দারিদ্র্য, রোগব্যাধি এবং অভাব-অনটন দ্বারা আক্রান্ত করে থাকি। উদ্দেশ্য হলো তারা যেন, নম্র এবং বিনয়ী হয়।

সুরা মুদ্দাসসির: আয়াত-৩১: তোমার রবের সেনাদল বা সেনাবাহিনী (কত প্রকৃতির বা কত রূপের কিংবা কত ধরনের) তা শুধু তিনিই জানেন।

সুরা আল-আনআম: আয়াত-৬৫: তুমি তাদের বলো যে, আল্লাহ তোমাদের ঊর্ধ্বলোক হতে বা ওপর থেকে এবং তোমাদের পায়ের নিচ হতে শাস্তি বা বিপদ পাঠাতে পূর্ণ সক্ষম।

সুরা আল আ’রাফ: আয়াত-৯১: তারপর আমার ভূমিকম্প তাদের গ্রাস করে ফেলল। ফলে তারা তাদের নিজেদের গৃহেই মৃত অবস্থায় উল্টো হয়ে পড়ে রইল।

সুরা আল কামার: আয়াত-৩৪: তারপর আমি এই লুত সম্প্রদায়ের ওপর প্রেরণ করেছিলাম প্রস্তর বর্ষণকারী এক প্রচণ্ড ঘূর্ণিবায়ু।

সুরা বাকারা: আয়াত-১৪৮: নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিটি বস্তুর ওপর (অর্থাৎ আরশ, পঙ্গপাল কিংবা ভাইরাস) সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান, সব‌ই তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন।

সুরা বাকারা: আয়াত-১৫৫: আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা, জান-মালের ক্ষতি এবং ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে পরীক্ষা করব। তবে তুমি ধৈর্যশীলদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও।

মুমিনদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই:
মুমিনের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সে সর্বদা আল্লাহর ফায়সালা ও সিদ্ধান্তের ওপর সমর্পিত থাকে। বিশেষ করে বান্দা যখন আল্লাহ তায়ালার হুকুম মেনে চলে তবে তার জীবন হয় চিন্তামুক্ত।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘জেনে রাখো, আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সূরা ইউনূস : ৬২)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি মহামারিতে পতিত হয় এবং নেকির আশায় সে ধৈর্য্যসহকারে সেখানে অবস্থান করে এবং এ বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ তাআলার হুকুম ব্যতিত কিছুই হয় না, তাহলে সে শহীদের সওয়াব পায়। (বুখারী শরীফ : ৫৪০২)।

করোনার প্রতিকার ও প্রতিরোধ:
মানুষ কীভাবে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাবে? হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এমন কোনো রোগ নেই যা আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেননি। আর তিনি এর প্রতিষেধকও সৃষ্টি করেছেন। ’

তাছাড়া আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে যে কোনো বিষয়ে ‘তাক্বওয়া’ বা তাকে ভয় করা এবং ‘তাওয়াক্কুল’ তথা তার ওপর ভরসা করার কথা বলেছেন। কেননা এমন কিছু জিনিস আছে যা আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া কোনো মানুষই তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক মাসে তিন দিন সকালবেলা মধু পান করবে, সে কোনো মারাত্মক মৌসুমি রোগে আক্রান্ত হবে না। ’ (ইবনে মাজাহ)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কালোজিরা ব্যবহার কর। কালো জিরায় রয়েছে ‘শাম’ ছাড়া প্রত্যেক রোগের প্রতিষেধক। আর ‘শাম’ হলো মৃত্যু। ’ (বুখারি)

হাদিসে কালোজিরাকে শুধু মৃত্যু ছাড়া সব রোগের প্রতিষেধক বলা হয়েছে। সুতরাং করোনাসহ সব মহামারিতেও কালো জিরা হতে পারে রোগ ও ভাইরাসের প্রতিষেধক।

এছাড়া ২ হাজার বছর ধরে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণাও দেখা গেছে যে, কালোজিরায় বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও এন্টি ভাইরাসের উপাদান বিদ্যমান।

সুতরাং মহামারি করোনা থেকে মুক্তি পেতে হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত মধু ও কালোজিরা খাওয়ার পাশাপাশি মুয়াব্বিজাতের আমল করা করা যেতে পারে। তাতে করোনাসহ মারাত্মক সব মহামারি থেকে মানুষ থাকবে নিরাপদ, ইনশাআল্লাহ।

করোনা ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকতে হাদিসে ঘোষিত নিম্নরিখিত এ দোয়াগুলোর আমলও করা যেতে পারে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবে-
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিসসামায়ি, ওয়া হুয়াসসাম উল আলিম। ’

সকাল হওয়া পর্যন্ত ওই ব্যক্তির ওপর আকস্মিক কোনো বিপদ আসবে না। আর যে ব্যক্তি সকালে তিনবার এ দোয়া পড়বে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর কোনো বিপদ আসবে না। (তিরমিজি, আবু দাউদ)

অর্থ: ‘আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী। ’

اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাচি ওয়াল জুনুনি ওয়াল ঝুজামি ওয়া মিন সায়্যিয়িল আসক্বাম। ’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ وَ الْاَدْوَاءِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি। ’ (তিরমিজি)

এছাড়া কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা পেতে ইসলামের দৃষ্টিতে তাহারাত অর্জনের পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্দেশিত কিছু নিয়মও আমরা মানতে পারি, যেমন- সাবান দিয়ে বারবার হাত ধুতে হবে, হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু বা রুমাল দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে ফেলতে হবে, হাঁচি-কাশি দেওয়ার পরপরই হাত ধুয়ে ফেলতে হবে, পারতপক্ষে নাক, মুখ ও চোখে হাতের স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পবিত্র কোরআন-হাদিসের নির্দেশনা মেনে করোনাসহ যে কোনো মহামারিমুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: প্রভাষক (দর্শন), আলহাজ হযরত আলী ডিগ্রি কলেজ, কামারখালী, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।