ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ক্রাইস্টচার্চ হামলায় মুসলিম বিশ্বের নিন্দা

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৯
ক্রাইস্টচার্চ হামলায় মুসলিম বিশ্বের নিন্দা ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে বর্বরোচিত হামলার পর বাইরের আঙিনায়...

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুই মসজিদে বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে মুসলিম বিশ্ব। ইতোমধ্যেই ‘মুসলিম প্রধান’ দেশগুলোর নেতারা বিবৃতিতে বলেছেন, মুসলমানদের ওপর এ হামলার বিরুদ্ধে যাথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হোক। একইসঙ্গে তীব্র ক্ষোভ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনাও প্রকাশ করেন তারা।

সৌদি আরব
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিউজিল্যান্ডে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা জানিয়েছে, সৌদি সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করেছে।

সন্ত্রাসবাদের কোনো ধর্ম ও কোনো দেশ নেই।

সংযুক্ত আরব আমিরাত
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনোয়ার গারগাশ এ হামলার পর ‘আন্তরিক সমবেদনা’ জানিয়ে টুইট করেছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, সহিংসতা ও ঘৃণার বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম সবসময়। হতাহতদের পরিবারের জন্য আমাদের দোয়া ও সহমর্মিতা।

তুরস্ক
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন হামলাটিকে ‘বর্ণবাদী ও ফ্যাসিস্ট’ আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি টুইটারে লিখেছেন,‘মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, এই হামলা প্রমাণ করে। ইসলামভীতি কেমন বিকৃত ও খুনে মানসিকতার জন্ম দেয় তা আমরা এর আগেও দেখেছি । বিশ্বব্যাপী এ ধরনের মতাদর্শের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। ইসলামবিরোধী ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে সবার এগিয়ে আসা উচিত।

জর্ডান
জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুমানা গনিমত বলেন, দেশগুলোর উচিত সন্ত্রাসবাদ প্রত্যাখ্যান এবং শান্তিতে ও ইবাদত-উপাসনায় মগ্ন মানুষের ওপর হামলার আক্রমণ প্রতিহত করা।

মিশর
মিশরের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও আল-আজহার ইউনিভার্সিটির প্রধান শায়খ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি এক বিবৃতিতে সতর্ক করে বলেন, এই আক্রমণ ঘৃণ্য ও জঘন্য। এটি বিদেশীদের সম্বন্ধে তাদের অহেতুক ভয় এবং ইউরোপীয় দেশগুলোতে ইসলামফোবিয়ার বিস্তারের পরিণতির তুলে ধরে। এই ধরনের ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত বর্ণবাদী গোষ্ঠীগুলিকে কঠোরভাবে দমন করা উচিত।

ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি এই হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এমন ঘটনায় ইন্দোনেশিয়া তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। বিশেষ করে ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটেছে, যখন জুমার নামাজ আদায় করছিলেন সবাই।

মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ার ক্ষমতাসীন জোটের সবচেয়ে বড় দলের নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম এই হামলার ঘটনাটিকে ‘মানবতা ও সার্বভৌম বিশ্ব শান্তিবিরোধি কালো ট্রাজেডি’ আখ্যা দিয়ে বলেন, বর্বর এই হামলার ঘটনায় আমি গভীরভাবে ব্যথিত। মানবিক মূল্যবোধের বিরোধী এ মর্মন্তুদ ঘটনায় সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আমি আক্রান্তদের পরিবার ও নিউজিল্যান্ডের মানুষের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানাচ্ছি।

আফগানিস্তান
নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ফিজিতে নিযুক্ত আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত ওয়াহিদউল্লাহ ওয়াইসি টুইটারে জানিয়েছেন, এতে তিনজন আফগান আহত হয়েছেন। ‘যেসব আফগান-পরিবার এ ঘৃণ্য ঘটনায় হতাহতের শিকার হয়েছেন, আমরা তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। ’

পাকিস্তান
এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ ফয়সাল। #PakistanAgainstTerror (সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান) হ্যাশট্যাগ করে টুইটারে তিনি এই হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।

ভারত
মুসলিম প্রধান দেশের না হলেও এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ভারতের ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড–এর সদস্য কামাল ফারুকি। তিনি বলেন, মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকা এই ঘৃণ্যকর্ম বেশ ভাবনার। সারাবিশ্বে মুসলিমবিদ্বেষ ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। অন্য ধর্মাবলম্বীরা ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত।

কাতার
কাতারের আমির শেখ তমিম বিন হামাদ আল-থানি এই সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের গভর্নর প্যাটসি রেড্ডিকে পাঠানো একটি টেলিগ্রাফে তিনি সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে তার দেশের অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। পাশাপাশি হতাহতদের পরিবারের প্রতি তিনি শোক জানিয়েছেন।

মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ
মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ এই নিশৃংস সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় গভীর দুঃখ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে তরা বলেছেন, ঘটনাটি ইসলামের প্রতি বিশ্বের কিছু মানুষের ঘৃণা উসকে দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছে। এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ভালবাসা, সৌহার্দ্য ও শান্তি।

ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব মুসলিম স্কলার্স
ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব মুসলিম স্কলার্সের সেক্রেটারি জেনারেল ও চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল করিম আল ইশা বলেন, এই বর্বর কাজে আইএস ও আল-কায়েদার কর্মসূচির সমান্তরাল রূপরেখা যোগ হয়েছে। কাউন্সিল সবসময় চরমপন্থী ও পাল্টা চরমপন্থার প্রতিহত করার প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেয়।

ইসলামি অর্গানাইজেশন ইন ইউরোপ
ইসলামি অর্গানাইজেশন ইন ইউরোপ-এর প্রধান সামির ফালেহ এ হামলার নিন্দা করে বলেন, নিউজিল্যান্ডের মসজিদে গণহত্যা সবার জন্য বেদনাদায়ক। বিশ্বব্যাপী সংখ্যালঘু মুসলিমদের রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে মুসলিমবিশ্বের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নিউজিল্যান্ড সরকারকে এই অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে এবং সন্ত্রাসী হিসেবে তার বিচার নিশ্চিত করতেও আহ্বান জানিয়েছেন।

শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১টা ৩০ মিনিটে ক্রাইস্টচার্চে হ্যাগলি ওভাল মাঠের খুব কাছে অবস্থিত ডিনস অ্যাভ মসজিদ ও লিনউড মসজিদে এবং আরেকটি স্থানে এ হামলা হয়। এতে অন্তত ৪৯ জন নিহত হন। এদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি। আহত হয়েছেন আরও ৪৯ জন। এদের মধ্যেও একাধিক বাংলাদেশি। তবে বর্বরোচিত হামলা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যান দেশটিতে সফররত বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।