ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

উত্তম চরিত্র ও ভালো ব্যবহার মানব জীবনের অমূল্য সম্পদ

মাহমুদা নওরিন, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
উত্তম চরিত্র ও ভালো ব্যবহার মানব জীবনের অমূল্য সম্পদ উত্তম চরিত্র ও ভালো ব্যবহার মানব জীবনের অমূল্য সম্পদ

আসমা বেগম একজন গৃহবধূ। তিনি একজন বিবেকবান মহিলা। সর্বদা তিনি আল্লাহকে ভয় করে জীবনযাপন করেন, সব সময় সত্য কথা বলেন, সকল ভালো ও বৈধ কাজে স্বামীর আনুগত্য করেন, শশুর-শাশুড়ীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন।

আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন, পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করেন, যথাসম্ভব তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেন। তাদের বিপদে দুঃখিত হন, তাদের খুশিতে আনন্দিত হন।

বিপদে-আপদে ধার-কর্জ দেন। সবার সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বলেন। মন্দ কাজ ঘৃণা করেন। মানুষকে সৎ পরামর্শ ও উপদেশ দেন।

এই আসমা বেগম একজন উত্তম চরিত্রের মহিলা। আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন, মানুষও তাকে ভালোবাসে। সবাই তার জন্যে দোয়া করে।

আবদুল হালিম একজন ব্যবসায়ী। তিনি কখনও মাপে হেরফের করেন না। মন্দ জিনিসকে ভালো বলে ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করেন না। ভেজাল মিশিয়ে ধোকা দেন না। সঠিক মাপ দেন, সত্য কথা বলেন। আমানতের খেয়ানত করেন না। লেনদেনে গড়িমসি করেন না।

লোকসান হলেও সততা বজায় রাখেন। তিনি একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি। তিনি একজন সৎ ও চরিত্রবান ব্যবসায়ী। মানুষ তাকে বিশ্বাসী মনে করে।

রফিকুল ইসলাম একজন ছাত্র। সে পড়ালেখায় খুবই মনোযোগী। সে সবার সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বলে, সত্য কথা বলে, ওয়াদা রক্ষা করে। রীতিমতো নামাজ-রোজা করে। কারও প্রতি অন্যায় আচরণ করে না, মন্দ ছেলেদের সঙ্গে চলে না। কখনও মন্দ কথা বলে না, মিথ্যা কথা বলে না, কাউকে গালিও দেয় না।

সে কোনো নিষিদ্ধ কাজ করে না, ওয়াদা খেলাফ করে না। কারও নিন্দা করে না, কারও হক নষ্ট করে না, কারও জিনিসে হাত দেয় না। মানুষের সেবা করে, উপকার করে। ন্যায় কাজে সহযোগিতা করে, অন্যায় কাজ ঘৃণা করে। বড়দের সম্মান করে, ছোটদের স্নেহ করে। এই রফিকুল ইসলাম একজন চরিত্রবান ছেলে। সবাই তাকে ভালোবাসে।
 
বর্ণিত ৩টি চরিত্রই কাল্পনিক হলেও এটা সত্য যে, সমাজে এমন প্রচুর আসমা বেগম, আবদুল হালিম ও রফিকুল ইসলাম রয়েছেন। তারা তাদের উত্তম চরিত্র ও ভালো ব্যবহার দিয়ে সমাজে নিজেদের প্রাসঙ্গিক করে তুলেছেন। আর এই প্রাসঙ্গিকতাকেই ইসলাম শিক্ষা দেয়।

ইসলাম মনে করে, উত্তম চরিত্র ও ভালো ব্যবহার মানব জীবনের এক অমূল্য সম্পদ। এই সম্পদ দ্বারা মানুষ দুনিয়াকে জয় করতে পারে। এর দ্বারা সে আখেরাতেও অর্জন করবে সাফল্য। আল্লাহ এবং তার রাসূল হজরত মুহাম্মদ (সা.) উত্তম চরিত্র ও ভালো ব্যবহারের প্রতি অত্যাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

এ প্রনসঙ্গে কোরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহতায়ালা বলেন-
১. ‘তোমরা মানুষের সঙ্গে উত্তম কথা বলো। ’
২. ‘তোমরা সহজ-সরলভাবে কথা বলো। ’
৩. ‘মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। ’
৪. ‘আল্লাহ সত্যবাদীদের ভালোবাসেন। ’
৫. ‘আল্লাহ সুবিচারকদের ভালোবাসেন। ’
৬. ‘আল্লাহ উপকারীদের ভালোবাসেন। ’

এ বিষয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন হাদিসে ইরশাদ করেন- 
১. ‘মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ উত্তম চরিত্র। ’
২. ‘বাবা-মা সন্তানকে উত্তম চরিত্রের তুলনায় ভালো কিছু দান করতে পারে না। ’
৩. ‘আমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা সাধন করার জন্য প্রেরিত হয়েছি। ’

যারা সত্যিকার মুসলিম তাদের চরিত্র হতে হয় ভালো। যার চরিত্র ভালো তাকে বলা হয় চরিত্রবান। যারা মন্দ লোক তাদের চরিত্র হয় খারাপ। তাদেরকে বলা হয় চরিত্রহীন। কথা, কাজ ও ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের ভালো ও মন্দ চরিত্র প্রকাশ পায়।

যে নিজের কথা, কাজ ও ব্যবহারকে ভালো বানাতে পারেম, সেই চরিত্রবান। একজন মুসলমানকে অবশ্যই উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হবে এবং মন্দ কথা, কাজ ও ব্যবহার বাদ দিতে হবে।

উত্তম চরিত্রের অধিকারীরা সর্বদা সত্য কথা বলেন, ন্যায়ের পথে চলেন, ওয়াদা রক্ষা করেন, ভালো কথা বলেন, বড়দের সম্মান করেন, ছোটদের প্রতি স্নেহ-মমতা ও দয়া প্রদর্শন করেন, আমানত রক্ষা করেন, মানুষের উপকার করেন, মানবিকতা থাকে তার ব্যবহারে, শালীনতা ও শিষ্টতা বজায় রাখেন। উদারতা, কৃতজ্ঞতা, নিঃস্বার্থপরতা, লজ্জাশীলতা বজায় রাখার সঙ্গে সঙ্গে অন্যের সঙ্গে ভালো ব্যবহার ও মানুষের কল্যাণ কামনা করেন সর্বদা। তারা পবিত্র ও সৎ জীবনযাপন করেন, ন্যায়- বৈধ ও সৎ উপায়ে উপার্জন করেন এবং আচরণে ভদ্রতা দেখান।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।