ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

সুলতান সুলেমান আমলের মসজিদ কালের সাক্ষী

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
সুলতান সুলেমান আমলের মসজিদ কালের সাক্ষী সুলতান সুলেমান মসজিদ

স্থাপত্য শিল্প নগর সভ্যতার অলংকার। দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যকলা নন্দনতত্ত্ব বা সৌন্দর্য বিদ্যার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

মনোহর এ শিল্প যুগে যুগে মানুষের মনকে করেছে বিমুগ্ধ, অভিভূত এবং জয় করেছে সৌন্দর্য পিয়াসী মানুষের মন। স্থাপত্য শিল্পে সুলতান সুলেমানের রয়েছে গর্ব করার মতো অবদান।  

তার শাসনামলে নির্মিত বিভিন্ন স্থাপনা বিশ্বের অন্যতম সেরা স্থাপত্য হিসেবে বিবেচিত। বলা চলে, তিনি মসজিদ, মাদরাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনার ডিজাইনে নতুনত্ব অানেন, সৃষ্টি করেন ভিন্ন একটি ধারা।  

সুলতান সুলেমানের পরিচয় নতুন করে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। সুলতান সুলেমান এখন বাংলাদেশে বহুল পরিচিত একটি নাম।  

সুলতান সুলেমান ১৪৯৪ সালের ৬ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। সাত বছর বয়সে তিনি তোপকাপি প্রাসাদের স্কুলে বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য থিওলজি ও সামরিক বিদ্যা বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।  

সুলতান সুলেমান উসমানীয় খেলাফতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও পরাক্রমশালী শাসক ছিলেন। পাশ্চাত্যে তিনি ‘মহৎ সুলেমান’ হিসেবে পরিচিত। দৈনন্দিন জীবনে তিনি ইসলামের অনুশাসনগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিপালন করতেন। সকল মুসলিম নাগরিক যাতে নিয়মিত নামাজ ও রোজা পালন করে সেদিকে তার সজাগ দৃষ্টি ছিল।
 
সাহসিকতা, মহানুভবতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং বদান্যতা তার চরিত্রের ভূষণ ছিল। তিনি নাগরিকদের করভার লাঘব করেন। কখনও তার বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতা ও প্রজা নিপীড়নের কোনো অভিযোগ ওঠেনি।  

সুলতান সুলেমান ছিলেন একজন প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, দৃঢ়চেতা, আত্মপ্রত্যয়ী ও ধার্মিক মানুষ। ১৫৬৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ৭১ বছর বয়সে সুলতান সুলেমান অভিযানে থাকা অবস্থায় হাঙ্গেরির সিগেতভার শহরে নিজ তাবুতে ইন্তেকাল করেন। তার এই মৃত্যু ছিল স্বাভাবিক এবং বার্ধক্যজনিত। তাকে দাফন করা হয়েছিল অটোমান তুর্কি সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল বা আজকের ইস্তাম্বুলে।  

রাষ্ট্রের সর্বত্র বহু মসজিদ, মাদরাসা, ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, গোসলখানা ও সেতু ইত্যাদিসহ বিভিন্ন স্থাপত্য তৈরি করেন। যা এখনও কালের সাক্ষী হিসেবে রয়ে গেছে। সুলতান সুলেমানের আমলে নির্মিত অধিকাংশ স্থাপনার স্থপতি ছিলেন সিনান।

স্থপতি হিসেবে সিনানের বেশ সুনাম রয়েছে। জানা যায়, সিনান প্রায় ৩৭৪টি স্থাপনার নকশা করেছিলেন। যার মধ্যে বড় মসজিদ ৯২টি, ৫৫টি স্কুল, মাদরাসা সাতটি, ২০টি সমাধিক্ষেত্র, ১৭টি পাবলিক রেস্তোরাঁ, তিনটি হাসপাতাল, ছয়টি জল সরবরাহ ব্যবস্থা, ১০টি সেতু, ২০টি সরাইখানা ও ৩৬টি প্রাসাদ আছে। সিনানের নকশা করা মসজিদগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শেহজাদে মসজিদ আর সুলেমানিয়া মসজিদ, যা সুলতান সুলেমান মসজিদ নামে বেশি পরিচিত।  

সুলতান সুলেমান মসজিদ
ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে বড় মসজিদ এটি। সুলতান সুলেমানের হুকুমে সিনান ১৫৫০ সালে এ মসজিদের কাজ শুরু করেন। শেষ হয় ১৫৫৭ সালে। সিনান বাইজান্টাইন চার্চ হাজিয়া সোফিয়ার অর্ধেক গম্বুজের ধারণা ব্যবহার করেন, কাজে লাগান এ মসজিদের নির্মাণশৈলীতে। মসজিদের মিনারগুলো পেনসিলের মতো। এতে রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গম্বুজ। সুলতান সুলেমান মসজিদের ভেতরের শৈলীও দৃষ্টিনন্দন। শব্দ নিয়ন্ত্রণের জন্য থাম আর দেয়ালগুলোর ভেতরে অনেক অনেক ঘড়া ব্যবহার করা হয়েছে।  

শেহজাদে মসজিদ
১৫৪৩ সালে হাঙ্গেরির অভিযান থেকে ফেরার পথে সুলতান সুলেমান ও হুররাম সুলতানের ছেলে শেহজাদে মেহমেদ (শাহজাদা মাহমুদ) গুটিবসন্তে মারা যান। সুলতান তার প্রিয় সন্তানের শোকে প্রায় ৪০ দিন ছেলের কবরের পাশে কাটিয়ে দেন। সুলেমান তখন সিনানকে দায়িত্ব দেন শাহজাদার নামে একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ তৈরি করতে। সেই মসজিদটিই শেহজাদে মসজিদ হিসেবে এখনও পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।