ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

সিরাতে ইবনে কাসির: সিরাত শাস্ত্রের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ

আতাউর রহমান খসরু, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৫
সিরাতে ইবনে কাসির: সিরাত শাস্ত্রের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ

আবুল ফিদা ইমামুদ্দিন ইসমাইল ইবনে আমর ইবনে কাসির রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে বাংলাভাষী মুসলমানরা একজন তাফসিরবিদ হিসেবেই বেশি চেনেন। তার অমর তাফসির গ্রন্থ তাফসিরে ইবনে কাসিরই তাকে সর্বত্র এই উচ্চতা দান করেছে।



তাফসিরে ইবনে কাসিরের বাইরে আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াও জ্ঞানী ও প্রাজ্ঞমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। কিন্তু সিরাত শাস্ত্রেও যে তার অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য একটি গ্রন্থ রয়েছে তা হয়তো অনেক প্রাজ্ঞজনেরও অজানা। আরব বিশ্বে সিরাতের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ হিসেবে সিরাতে ইবনে কাসির ব্যাপকভাবে সমাদৃত।

মূলত এই গ্রন্থটি তার রচিত বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়ার সিরাত অংশের পরিশীলিত ও পরিশুদ্ধ রূপ। আল বিদায়া ওয়ান নিহায়ার সিরাত অংশকে ভিত্তি ধরে ইমাম ইবনে কাসির রহমাতুল্লাহি আলাইহি গ্রন্থটি রচনা করেছেন। কিছু সংযোজন ও বিয়োজনের মাধ্যমে তিনি তাকে একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থের রূপ দান করেছেন।

সিরাতে ইবনে কাসিরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ইবনে কাসির রহমাতুল্লাহি রেওয়াত ও সনদের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। যথাসম্ভব তিনি বিশুদ্ধ সূত্র থেকেই গ্রহণ করেছেন এবং দুর্বল সূত্র ও বর্ণনা এড়িয়ে গেছেন। তিনি বিরল ও হারিয়ে যাওয়া অনেক গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। যেমন- সিরাতে ইবনে ইসহাক (প্রাচীন সংস্করণ), সিরাতে উকবা ইত্যাদি। তিনি মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকদের থেকে সমানভাবে তথ্য, উপাথ্য ও জ্ঞান গ্রহণ করেছেন এবং সঙ্গে সঙ্গে তার সূত্রও উল্লেখ করেছেন।

তিনিই সর্বপ্রথম গুরুত্বের সঙ্গে ঐতিহাসিক ও সিরাত গবেষকদের মতামতের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছেন অর্থাৎ সিরাতশাস্ত্রে সমালোচনার সূত্রপাত করেছেন। যা পরবর্তীতে অনেকেই অনুসরণ করেছে এবং ব্যাপকভাবে তা থেকে উপকৃত হয়েছে।

সিরাতে ইবনে কাসিরের আধুনিক সংস্করণটি চার খণ্ডে বিভক্ত। যার প্রথম খণ্ডে প্রাচীন আরবের অবস্থা, তার গোত্রসমূহ এবং তাদের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শৈশব, কৈশর, নবুওয়তপ্রাপ্তি এবং দাওয়াতি জীবনের প্রাথমিক দিনগুলো সম্পর্কে আলোচনা এসেছে।

দ্বিতীয় খণ্ডে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদিনায় হিজরত, সেখানকার পরিবেশ ও পরিস্থিতি, হিজরত পর মদিনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কার্যক্রম এবং প্রথম দিকের যুদ্ধ ও অভিযান সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে।

তৃতীয় খণ্ডে অবশিষ্ট যুদ্ধ, বিভিন্ন রাষ্ট্রে চিঠি প্রেরণ, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত প্রতিনিধি দল এবং বিজীত অঞ্চলে প্রশাসক ও প্রতিনিধি নিয়োগ সম্পর্কে আলোচনা এসেছে।

চতুর্থ খণ্ডে বিদায় হজ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত, তার স্ত্রীদের আলোচনা, ওহি সংরক্ষণ, প্রিয় নবীর দৈহিক ও আচরণগত বৈশিষ্ট্যের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। এ ছাড়াও নবুওয়তের দলিল ও প্রমাণ সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে।

সার্বিক বিচারে বলা যায়, সিরাতে ইবনে কাসির বিশুদ্ধতম এবং পূর্ণাঙ্গ একটি গ্রন্থ। গ্রন্থটি বাংলাভাষায় অনুবাদ করেছে আল কোরআন একাডেমী লন্ডন। সীরাতগবেষকরা এ গ্রন্থ থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়ে থাকেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।