ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

সিরাত কাকে বলে?

মাওলানা শোয়াইব মাহমুদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
সিরাত কাকে বলে?

সিরাত একটি আরবি শব্দ। এর বহুবচন হচ্ছে সিয়ার।

অর্থ চাল-চলন, গতি ইত্যাদি। আরবি ভাষার বিখ্যাত অভিধান ‘আল মুজাম আল আজম’ ও ‘মিসবাহুল লুগাত’-এ সিরাত শব্দের অর্থ করা হয়েছে-

১. যাওয়া, প্রস্থান করা, চলা।
২. গতি, পথ, পদ্ধতি, ধারা।
৩. আকার, আকৃতি, মুখাবয়ব।
৪. চেহারা, আকৃতি।
৫. অবস্থা।
৬. কর্ম-নৈপুণ্য, ঢঙ, চাল।
৭. সুন্নত।
৮. জীবন চলার ধরণ, প্রকৃতি, কাজকর্ম করার ধরণ, জীবন পরিচালনার ঢঙ।
৯. অভ্যাস।
১০. কাহিনী, পূর্ববর্তীদের গল্প বা কাহিনী এবং ঘটনাবলীর বর্ণনা ইত্যাদি।

অন্যদিকে ‘ইসলামী বিশ্বকোষ’ সিরাতের অর্থ লিখেছে-
১. যাওয়া, যাত্রা করা, চলা।
২. মাজহাব বা তরিকা।
৩. সুন্নাহ।
৪. আকৃতি।
৫. অবস্থা।
৬. কীর্তি।
৭. কাহিনী, প্রাচীনদের জীবন ও ঘটনাবলীর বর্ণনা।
৮. নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর গাজওয়ার (যুদ্ধের) বর্ণনা।
৯. অমুসলিমদের সঙ্গে সম্পর্ক, যুদ্ধ এবং শান্তির সময়ে মুহাম্মদ (সা.) যা বৈধ মনে করতেন তার বর্ণনা কিংবা মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন চরিত; সম্প্রসারিত অর্থে বীর পুরুষদের কীর্তির বর্ণনা।

পবিত্র কোরআনে কারিমে সিরাত শব্দটি শুধুমাত্র একবারই ব্যবহৃত হয়েছে। সূরা ত্বহার ওই আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তুমি তাকে ধরো এবং ভয় পেয়ো না। আমি তাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেব, যেরূপ প্রথমে এটি ছিল। ’

এখানে সিরাত শব্দটি আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। মোটকথা, সিরাতের আভিধানিক অর্থ হলো, কোনো ভালো মানুষের বা নেককার মানুষের চাল-চলন, ওঠাবসা, কাজ, মেজাজ-মর্জি। এককথায় জীবন পদ্ধতি বা জীবন চরিত।

আর সিরাত শব্দের পারিভাষিক অর্থ বোঝানো হয়েছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লামের সার্বিক জীবন চরিতকে।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লামের বিখ্যাত জীবনী গ্রন্থগুলোর নামের সঙ্গে এই সিরাত শব্দটি সম্পৃক্ত দেখা যায়। যেমন- সিরাতে ইবনে ইসহাক, সিরাতে ইবনে হিশাম, সিরাতে হালবিয়া, সিরাতে রাসূল, সিরাতে মুগলতাই, সিরাতে খাতিমুল আম্বিয়া, সিরাতে সারওয়ারে আলম, সিরাতে মুহাম্মদিয়া, সিরাতে মোবারক মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.), সিরাতে মুহসিনে কায়েনাত (সা.), সিরাতুন্নবী ও সিরাতে মোস্তফা প্রভৃতি।

সিরাত চর্চায় সাধারণত কোরআনে কারিম, হাদিস, মাগাজি গ্রন্থাবলী, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লামকে নিবেদিত কবিতা, প্রাচীন ইতিহাসমূলক (যেসব মক্কা-মদিনার ইতিহাস), সাহাবিদের শামায়েল প্রভৃতি সহায়ক হিসেবে বিবেচিত।

ইসলামের পঞ্চম খলিফা হিসেবে খ্যাত হজরত ওমর ইবন আবুদল আজিজের পরামর্শক্রমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পঁচাশি বছর পর ইমাম শিহাব আল যুহরি (জ. ৫১ হি. মৃত-১২৪ হি.) সিরাত চর্চা শুরু করেন। তিনি যে সংক্ষিপ্ত জীবনীটি রচনা করেন সেটিই সীরাত বিষয়ক প্রথম গ্রন্থ।

তবে প্রথম সিরাতকার হিসেবে বর্তমান বিশ্বে যার নামটি সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হয় তিনি হলেন, ইবনে ইসহাক (জ. ৮৫ হি.-মৃ-১৫১ হি.)।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের মাত্র ৭৪ বছর পর মদিনায় জন্মগ্রহণকারী ইবন ইসহাকের রচিত ‘সিরাতু রাসূলুল্লাহ’ সিরাত বিষয়ক সর্বাধিক প্রাচীনতম এবং পূর্ণাঙ্গ প্রামাণ্য গ্রন্থ।

আমরা ধারাবাহিকভাবে বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য বিশ্ববিখ্যাত কিছু সিরাত গ্রন্থের পরিচিতি তুলে ধরবো। কারণ, সিরাতবিষয়ক গ্রন্থসমূহ পাঠ করারও একটি ইবাদত বিশেষ।



বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৫
এমএ/

**  নবী মুহাম্মদ (সা.) শৈশব ও যৌবনে কেমন ছিলেন
**  ফেসবুকে মহানবীর মর্যাদা ও পরিচয় বিষয়ক ক্যাম্পেইন
**  নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ
** আল্লাহকে পেতে হলে সুন্নত পালন ও রাসূলকে ভালোবাসতে হবে
** পরিবেশ রক্ষায় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পদক্ষেপ ও নির্দেশনা
** স্বাগতম রবিউল আউয়াল মাস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।