ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

বাংলানিউজকে মাওলানা নুরুল আলম নছিরী

আল্লাহকে পেতে হলে সুন্নত পালন ও রাসূলকে ভালোবাসতে হবে

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫
আল্লাহকে পেতে হলে সুন্নত পালন ও রাসূলকে ভালোবাসতে হবে মাওলানা নুরুল আলম নছিরী

চট্টগ্রামের বিশিষ্ট আলেম মাওলানা নুরুল আলম নছিরী। তিনি জামিয়া আরাবিয়া নাছিরুল ইসলাম নাজিরহাট বড় মাদরাসায় দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে হাদিসের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।

ওয়ায়েজ হিসেবেও তার বেশ খ্যাতি রয়েছে। তিনি নাজিরহাট বড় মাদরাসা জামে মসজিদের খতিব। চলতি রবিউল আউয়াল মাস উপলক্ষে নবী জীবনের নানা দিক নিয়ে তিনি কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে।

বাংলানিউজ: কারো আনুগত্য-অনুসরণের ক্ষেত্রে তার প্রতি বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার পাশাপাশি ভক্তি এবং ভালোবাসা অন্যতম একটি নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে। তাই আমরা জানতে চাই, হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) ভালোবাসার আবশ্যিকতা কতটুকু?

মাওলানা নুরুল আলম নছিরী : আল্লাহ ও হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) প্রতি ভালোবাসা অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নবীপ্রেম (এশকে রাসূল) ও আল্লাহ প্রেম (এশকে এলাহি) ছাড়া কোনো মানুষ প্রকৃত মোমিন-মুসলমান হতে পারে না। সহিহ বোখারি শরিফের এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, এক সাহাবি রাসূলুল্লাহকে (সা.) যখন বললেন, আমি বেশি কিছু আমল করতে পারি না, তবে আল্লাহতায়ালা ও তার রাসূলকে (সা.) ভালোবাসি, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, তুমি তার সঙ্গি হবে, যাকে তুমি ভালোবাস। অর্থাৎ তুমি যেহেতু আল্লাহ ও তার রাসূলের ভালোবাসায় আমল করেছ, সুতরাং তুমি আমার সঙ্গে জান্নাতে থাকবে। আল্লাহতায়ালা তোমাকে জান্নাত দান করবেন। তিরমিজি শরিফের আরেক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসল, সে জান্নাতে আমার সঙ্গে অবস্থান করবে। বর্ণিত হাদিসের আলোকে বলা যায়, এশকে রাসূল ও এশকে এলাহি অর্জন করতে হলে, রাসূলের আনুগত্য করতে হবে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি কাজে রাসূলের নীতিমালা ও কর্মপন্থা অবলম্বন করতে হবে। এ ছাড়া রাসূলের এশক ও মহব্বত অর্জিত হতে পারে না।

বাংলানিউজ: আমরা কীভাবে এই আনুগত্য ও এশকে রাসূল অর্জন করতে পারি?

মাওলানা নুরুল আলম নছিরী: ঘরে বসে থাকলে এশকে রাসূল জন্ম নিবে না। এশকে রাসূল অর্জন করার প্রধান শর্ত হলো- আল্লাহ ও রাসূলের শ্রেষ্ঠত্ব অন্তরে সৃষ্টি করা। জীবনে প্রকৃত সুন্নতের অনুসারী হওয়া। মনেপ্রাণে রাসূলের অনুসরণ ও অনুকরণ করা। অন্তরে রাসূলের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নিলেই কেবল, আল্লাহর প্রতি নিরন্তর ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘হে নবী! আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে তোমরা আমার আনুগত্য করো, আমাকে অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহতায়ালাও তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন। ' -সূরা আলে ইমরান : ৩১

বর্ণিত আয়াতে আল্লাহর ভালোবাসার জন্য রাসূলের আনুগত্যকে শর্তাধীন করা হয়েছে। বস্তুত আল্লাহতায়ালার ভালোবাসা পেতে হলে সর্বাগ্রে রাসূলকে ভালোবাসতে হবে। রাসূলের অনুসরণ করতে হবে। এ ছাড়া আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করা আদৌ সম্ভব নয়।

বাংলানিউজ: তাহলে কী আপনি বলতে চাচ্ছেন, আল্লাহ ও রাসূলের ভালোবাসা অর্জন করতে হলে রাসূলুল্লাহর (সা.) সুন্নত মতে আমল করতে হবে?

মাওলানা নুরুল আলম নছিরী: অবশ্যই। কোরআনে কারিম ও হাদিস শরিফে এর প্রমাণ আমরা দেখতে পাই। এক সাহাবির ঘটনা। হজরত হুজায়ফা (রা.) পারস্যের রাষ্ট্রীয় মেহমানখানায় খেতে বসে পড়ে যাওয়া গোশতের টুকরা উঠিয়ে পরিষ্কার করে খেয়েছিলেন। এটা দেখে একজন বলেছিল, এটা রাষ্ট্রীয় মেহমানখানা। এখানে পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খাওয়া নিচুতা ও অভদ্রতা প্রকাশ পায়। সাহাবি হজরত হুজায়ফা (রা.) বলেছিলেন, ‘আমি কি আমার প্রিয় রাসূলের সুন্নত এ সব বেকুবের কারণে ছেড়ে দেব?' এরা আমাকে যা কিছুই বলুক না কেন, আমি রাসূলের (সা.) সুন্নতকে ছেড়ে দিতে পারব না। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) দস্তরখানা থেকে খানা তুলে খেয়েছেন। আমিও তুলে খাব। তাতে এ সব বেকুবরা আমাকে যা বলে বলুক। আমি আমার রাসূলের সুন্নত ছেড়ে দিতে পারব না। ’

হজরত আবদুর রহমান ইবনে আবি কারা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) অজু করলে সাহাবায়ে কেরাম অজুর পানি নিয়ে কাড়াকাড়ি করতেন। কেউ মাথায় লাগাতেন, কেউ বুকে, কেউ বা আবার চেহারায় মাখতেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা অজুর পানি নিয়ে কাড়াকাড়ি করছো কেন? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, 'ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার ভালোবাসা ও আল্লাহর ভালোবাসার কারণে আপনার অজুর পানি নিয়ে কাড়াকাড়ি করছি। ' এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালোবাসতে চায় এবং এ আশা করে যে, আল্লাহ এবং নবীও তাকে ভালোবাসুক, তাহলে তাকে তিনটি গুণ অর্জন করতে হবে-

এক. সব সময় সত্য কথা বলতে হবে। জীবনে কখনও মিথ্যার আশ্রয় নেয়া যাবে না।

দুই. কেউ আমানত রাখলে তার আমানত আদায় করতে হবে। কখনও আমানতের খেয়ানত করা চলবে না।

তিন. কাউকে কষ্ট দেয়া যাবে না।

বর্ণিত তিনটি গুণ যদি কেউ অর্জন করতে পারে, তাহলে আল্লাহতায়ালা ও রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে ভালোবাসবেন।

মোট কথা, আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালোবাসতে হলে এবং তাদের ভালোবাসা পেতে হলে রাসূলুল্লাহর (সা.) অনুসরণ করতে হবে। সত্য কথা বলতে হবে। আমানতের খেয়ানত করা যাবে না। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব কাউকে কষ্ট দেয়া যাবে না। উপকার করতে না পারলেও তাদের কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের অধিকারসমূহ আদায় করতে হবে। তবেই আল্লাহতায়ালার ভালোবাসা অন্তরে জন্ম নিবে। রাসূলের মহব্বত সৃষ্টি হবে। যে ভালোবাসার প্রত্যাশী সব মুসলমান।

সাক্ষাতকার গ্রহণ : কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক



বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।