ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

আল্লাহতায়ালার দরদমাখা আহবান আজান

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৫
আল্লাহতায়ালার দরদমাখা আহবান আজান

ইসলামের প্রথম দিকে মানুষকে নামাজের দিকে আহবান করার জন্য কোনো বিধিবদ্ধ নিয়ম ছিল না। তাই মানুষকে নামাজে ডাকার উপায় বের করার নিমিত্তে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে পরামর্শ সভায় বসেন।

পরামর্শ চাইলেন কিভাবে মানুষকে নামাজের দিকে ডাকা যায়। কেউ পরামর্শ দিলেন আগুন জ্বালাতে। কেউ পরামর্শ দিলেন ঘণ্টাধ্বনি বাজাতে। আবার কেউ পরামর্শ দিলেন শিঙ্গায় ধ্বনি দিতে। পরামর্শ অনেক হলো, কিন্তু সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গেল না। অমীমাংসিত অবস্থায় সভা শেষ করতে হয়।

সভাশেষে চিন্তাযুক্ত মনে ঘুমিয়ে পড়েন সাহাবারা। গভীর রাত। অনেকেই স্বপ্ন দেখেন। এক আশ্চর্য স্বপ্ন। ঘুম থেকে উঠে সবার চোখে আনন্দের রেশ। পরের দিন একে একে সবাই জমায়েত হলো। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) পরামর্শ সভার মধ্যমণি। সালাম বিনিময়ের পর আনুষ্ঠানিক অালোচনা শুরুর আগে সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ (রা.) স্বপ্নের কথা নবীজীকে (সা.) জানালেন। তারপর হজরত ওমর (রা.) সভায় এসে একই স্বপ্নের কথা নবীজীকে শোনালেন। নবীজীর আর বুঝতে বাকি রইল না এ কোনো সাধারণ স্বপ্ন নয়। এ নিশ্চয় মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে পাওয়া সত্য স্বপ্ন। তিনি বিলম্ব না করে হজরত বিলালকে (রা.) ডেকে স্বপ্নের কথাগুলো শিখিয়ে দিলেন। এর পরেই ওই সব স্বপ্নকথার মাধ্যমেই চালু হয় আজানের রীতি।

আজানের বাণীগুলো এক শক্তিশালী কথামালা। কী এক রহস্যময়তা এসব শব্দে! কী এক জাদুময়তা এসব বাক্যে! কী আকর্ষণ লুকিয়ে আছে এ আজানে! যে আওয়াজ শোনে ঘুমন্ত হৃদয়ে আলোর প্রদীপ জ্বলে ওঠে। মনপ্রাণ ছুটে যায় বিজলীর গতিতে। মোয়াজজিনের ডাকে মসজিদ পানে। একই ধ্যান একই চিন্তা বারবার তাড়া করে ফিরে ঈমানদারদের। তাই তো দেখা যায়, মোয়াজজিনের আজানের সঙ্গে সঙ্গে মনের অজান্তে তার বলা বাক্যগুলো জপ করে মুসলমানরা।

আজান মূলত বান্দাদের জন্য আল্লাহতায়ালার দরদমাখা এক আহবান। সত্য ও সুন্দরের বার্তাবাহী চিরন্তন এক ধ্বনি। যে আওয়াজ শ্রবণে মানুষ আবেগাপ্লুত হয়। মসজিদের যেতে অক্ষম অনেক নামাজি যার শ্রবণে, অশ্রু ঝড়ায় সকালের শিশিরের মতো। যে ডাকের ধ্বনিতে জেগে উঠে ভোরের পাখি। যে আওয়াজ কানের কাছে গুণগুণ করে বলে উঠে, তুমি এখনো নিদ্রায় নিরুদ্দেশ? এখনো ঘুমে বিভোর? ঘুম থেকে উঠো, শোনো- নিদ্রা থেকে নামাজ ভালো। এটা কল্যাণের পথ। মঙ্গলের বার্তাবাহী। সাবধান হও। মনে রেখ, নিদ্রায়ই একমাত্র শান্তি নয়। মহান আল্লাহর জিকিরের মাঝেই মুমিনের প্রশান্তি। আল্লাহ তোমায় ডাকছে, তার শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিতে। তার রহমতের ভাগি হতে। শীতের কুয়াশাও তার নির্মলতা ঝরিয়ে মাতম করে, প্রভুর শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দেয়।

এ আজান শুভ সংবাদবাহী। এই আজানের ধ্বনি শোনে ইবলিশের তাবৎ দম্ভ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। তার দেহ অনলে দগ্ধ হয়। আজানের এমনই অলৌকিক শক্তি। এমনই ক্ষমতা। সদ্য নবজাত শিশুরা এ মাটির বুকে পদার্পণ করে হাউমাউ করে চিৎকার দিতে থাকে। কেউ যখন তার কানে আজান শোনায় তখন তার ক্রন্দনধ্বনি বন্ধ হয়। আজান তাকে সান্ত্বনা দেয়। আজান এমন এক মহৌষধ। মায়ের স্নেহের মতন।

এ আজানের ধ্বনি শোনার জন্য অপেক্ষায় থাকে আল্লাহপ্রেমিকরা। যারা মনকে বেঁধে রাখে মসজিদের সঙ্গে। তারা প্রতিক্ষায় থাকে কখন আজান হবে। কারণ আজান জানিয়ে দেয়, এখন সময় হয়েছে প্রভুর দরবারে হাজিরা দেওয়ার। বস্তুত আজান এমন এক আহবান যা মুমিনকে সাহসী হতে শেখায়, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করতে শেখায়।

এই আজানের ধ্বনি বিশ্বের প্রতিটি দেশের মসজিদের মিনারে মিনারে ধ্বনিত হয়। যে ধ্বনি প্রতিনিয়ত আহবান জানায় মানুষকে কল্যাণের। চলতে থাকবে এ আহবান ফেরেশতা হজরত ইসরাফিলের শিঙ্গাধ্বনি দেওয়ার আগ পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।