ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

সম্প্রীতির ধর্ম

মোহাম্মদ মাকছুদ উল্লাহ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৫
সম্প্রীতির ধর্ম

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবেই বিশ্ব দরবারে পরিচিত। এ দেশের মাটি যেমন নরম ও উর্বর তেমনি মানুষের অন্তরও কোমল ও সহানুভূতিপূর্ণ।

এ দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাস বহু পুরনো। আমাদের ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্যবোধ কখনও সামাজিক সহাবস্থানে ফাটল ধরাতে পারেনি। মানবিক বোধকে কাবু করতে পারেনি।

সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের সাংবিধানিক গ্রন্থ, পবিত্র কোরআনে কারিমে হয়েছে, ‘তারা অন্য ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহ ছাড়া যাদের উপাসনা করে সেসব দেব-দেবীকে তোমরা গালি দিও না। তাহলে তারা সীমালংঘন করে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দেবে। ’ -সূরা আনআম : ১০৮

আলোচ্য আয়াতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মূলনীতি বিবৃত হয়েছে। ইসলাম অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপাস্যকে গালি দিতে মুসলমানদের নিষেধ করেছে। অর্থাৎ ভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তাদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই হল ইসলামের আদর্শ। আর ইসলামের এ মূলনীতির আলোকেই হজরত মুহাম্মদ (সা.) একটি আদর্শ মুসলিম সমাজ গঠন করেছিলেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক গঠিত মুসলিম প্রজাতন্ত্রের সংবিধান যা মদিনা সনদ নামে ইতিহাসে খ্যাত এবং পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম লিখিত গঠনতন্ত্র হিসেবে স্বীকৃত। ঐতিহাসিক মদিনা সনদের প্রথম ধারা ছিল, ‘বনু আওফের ইহুদিরা মুসলমানদের সঙ্গে মিলিত হয়ে একই উম্মত হিসেবে বিবেচিত হবে। ইহুদি ও মুসলমানরা নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। বনু আওফ ছাড়া অন্য ইহুদিরাও একই ধরনের অধিকার লাভ করবে। ’ -আর রাহিকুল মাখতুম

৯ম হিজরিতে নাজরানের (মক্কা ও ইয়েমেনের মধ্যবর্তী এক বিশাল জনপদের নাম নাজরান) ষাট সদস্যবিশিষ্ট এক প্রতিনিধি দল হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে মদিনায় আগমন করে। মসজিদে নববীতে তাদের অবস্থানকালে সন্ধ্যাবেলায় নামাজের সময় হলে তারা রাসূলের (সা.) মসজিদে রাসূলের উপস্থিতিতে পূর্বদিকে নামাজ পড়ে আর রাসূল (সা.) পশ্চিম দিকে সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে নামাজ আদায় করেন। -তাফসিরে ইবনে কাসির

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ অনুসারী খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার অনেক দৃষ্টান্ত ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে। হজরত উমর (রা.)-এর খেলাফতকালে ইসলামী খেলাফতের ব্যাপক বিস্তারের সময়েও যাতে অন্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকার ক্ষুন্ন না হয় সে জন্য হজরত উমর (রা.) বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। হজরত উমর (রা.) ভিন্নধর্মী নাগরিকদের নাগরিক ধর্মীয় ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে লিখিত চুক্তি সম্পাদন করতেন এবং সে চুক্তি পুরোপুরি রক্ষা করতে প্রাদেশিক শাসন কর্তাদের কঠোর নির্দেশ দিতেন। তার খেলাফতকালে কিছু গির্জা মুসলমানদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হলে হজরত উমর (সা.) সেগুলো পুনর্নির্মাণ করে দেন।

বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ড. মফিজুল্লাহ কবিরের তথ্য মতে, ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে হজরত উমর (রা.) জেরুজালেম পরিদর্শনে গেলে, নামাজের সময়ে সেখানকার ধর্মাধ্যক্ষ (পাদ্রি) তাকে গির্জায় নামাজ পড়ার অনুরোধ করলে, পরে হজরত উমরের (সা.) অনুসারীরা গির্জা দখল করে নিতে পারে এ আশংকায় অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে সেখানে নামাজ আদায় করা থেকে বিরত থাকেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘন্টা, মার্চ ২২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।