ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অগ্রনায়ক হজরত মুহাম্মদ সা.

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৫
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অগ্রনায়ক হজরত মুহাম্মদ সা.

হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পৃথিবীতে আবির্ভাবের পর মানব ইতিহাসে দেখা দেয় বৈপ্লবিক পরিবর্তন। তিনি যে সমাজে জন্ম লাভ করেছিলেন; ওই সমাজের মানুষ গয়রহ অত্যাচার-অনাচারে লিপ্ত হয়ে আল্লাহর দেয়া বিধান ভুলে গিয়ে নিজেদের মনগড়া আইনে চলছিল।

সামাজিক অনাচার, ব্যভিচার, মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি ইত্যাদি ছিল তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আল্লাহতায়ালার বিশেষ অনুগ্রহে তিনি সবচেয়ে ভদ্র, নম্র ও চরিত্রবান ব্যক্তি হিসেবে গড়ে উঠেছিলেন এবং আরবদের সবাই তাকে ‘আল-আমীন’ বলে ডাকতো।

৪০ বছর বয়সে তিনি নবুওয়ত লাভ করেন এবং তার ২৩ বছরের নবুয়তি জীবনে নাজিল হয় মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআনে কারিম। এর ফলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা হলো। বিশ্ববাসীকে বাস্তব প্রমাণ উপস্থাপন করে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলে গেলেন, ‘তোমরা যতদিন আল্লাহর দেয়া জীবন বিধান কোরআন ও আমার উপস্থাপিত জীবনাদর্শ আঁকড়ে ধরবে ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না। ’

বস্তুত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ দুনিয়ার মানুষকে একই আল্লাহর অস্তিত্বে প্রত্যয়শীল করে তুলে তাদের মধ্যে ঐক্য ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছিলেন। ভাষা, বর্ণ, রক্ত ভৌগোলিক অবস্থান প্রভৃতি কারণের ওপর কোনো স্বজাতিকতার ভিত্তি স্থাপন করেননি। এর পরিবর্তে আল্লাহর অস্তিত্বের স্বীকৃতির ভিত্তির ওপর তিনি একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।

আসলে দ্বীন এসেছিল বিভিন্ন কওমের হৃদয়ে ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য। এই দ্বীনের মধ্যে এখন ভাই থেকে ভাই পৃথক হয়ে যাচ্ছে। কারণ, এদের মধ্যে কোনো আদর্শিক ঐক্য নেই। তারা নানা পার্থক্য সৃষ্টিকারী মতবাদে দীক্ষা গ্রহণ করেছে। মুসলিম জাতি যখনই ব্যক্তিগত পর্যায় হতে শুরু করে, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বত্র ঈমান ও নেক আমলের শর্তগুলো পূরণ করবে, জীবনের প্রতি পদক্ষেপে রাসূল (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করবে, আল্লাহতায়ালার ইবাদত-বন্দেগি করবে, তার সাথে কোনো কিছুকে অংশী স্থাপন করবে না, জীবন চলার পথে আল্লাহর নেয়ামতসমূহের শোকর আদায় করবে, যখন ত্যাগী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে, তখন পরম কৌশলী আল্লাহ মুসলিম জাতিকে দুনিয়ার বুকে দান করবেন, ক্ষমতা, অধিকার, আধিপত্য, সম্পদ, প্রাচুর্য, সাফল্য, ভয়-ভীতিহীন নিরাপত্তা এবং ইসলামের সার্বিক প্রতিষ্ঠা। এর ফলে শুধুমাত্র আখেরাতের জীবনেই নয়, বরং দুনিয়ার জীবনের সকল অঙ্গনে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তাদের ওপর বর্ষিত হবে অজস্র রহমতের বারিধারা।

হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা হলো, মানুষে মানুষে ঘৃণা বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী সব কিছু থেকে বিরত থাকতে হবে। পরস্পরে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্র সৃষ্টি করার লক্ষ্যে সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। এ জাতীয় সম্প্রীতি ও জাতীয় ঐক্য রক্ষার জন্য হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেন, ‘হে লোকসকল! তোমরা শোন; কোনো আরবের ওপর অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, আবার কোনো অনারবের উপরও আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কোনো কালোর ওপর সাদার এবং সাদার ওপর কালোর শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কেননা, সবাই আদম থেকে এবং আদম মাটি থেকে সৃষ্ট। শ্রেষ্ঠত্ব যাচাইয়ের মাপকাঠি হচ্ছে তাকওয়া। ’

৪০ বছর বয়সে নবুওয়তপ্রাপ্তির পর নবী করিম (সা.)-এর পরিচিতি জন্মভূমির ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে নয় সমগ্র আরব তথা সভ্য জগতের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। নিস্কলুষ চরিত্র মাধুর্য নিয়ে কালেমার দাওয়াত প্রচারের সময় পদে পদে তিনি প্রচণ্ড বিরোধীতার মোকাবেলা করেন এবং তেইশ বছরের নবুওয়তি জীবনে শতধা-বিভক্ত আরব জাতিকে এক ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী বিশ্বজয়ী জাতিতে পরিণত করলেন। প্রচলিত সমাজের ধর্ম, সভ্যতা, সংষ্কৃতি, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, শিক্ষা, সামাজিক, নৈতিক তথা সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার ও পরিবর্তন সাধন করে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এক নতুন জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এটা সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য, স্থায়ী ও তাৎপর্যময় সফল বিপ্লব।

আসলে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, যিনি সর্বশেষ ও পূর্ণতম জীবন বিধান কোরআনে কারিম নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন। দুনিয়ার মানুষকে তিনি উদাত্ত কণ্ঠে ইসলামের দিকে আহ্বান জানিয়ে- সারা দুনিয়ার মানুষকে একই কাতারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন মিলেমিশে শান্তিতে বসবাস করতে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই- রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে নেই সম্প্রীতি, নেই শান্তি। উল্পো দেখা যায়- আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, বর্ণবাদ ও শ্রেণী বৈষম্য প্রকটা আকার ধারণ করে আছে। নোবেল বিজয়ীরা শান্তির জন্য পদক পেলেও কোথাও কিঞ্চিৎ শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারেননি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শান্তির এ দূতদের হাতই রক্তে রাঙানো।

অথচ ইতিহাস বলে, পৃথিবীর মানুষের জন্য রহমত, বরকত ও শান্তির জন্য আবির্ভূত হয়েছেন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)। আল্লাহতায়ারা তাকে রাহমাতুল্লিল আলামীন হিসাবে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, রাসুলের জন্য রয়েছে মানবজাতির জন্য সুন্দরতম আদর্শ।

রাসূলেই সেই আদর্শেই রয়েছে শান্তির নির্দেশনা। সে সব নির্দেশনা মুসলিম গবেষকরা দীর্ঘকাল পর্যন্ত হাদিসের বর্ণনা ও নবী (সা.)-এর জীবনীগ্রন্থসমূহ থেকে চয়ন করে পৃথিবীবাসীর জন্য রেখে গেছেন। বর্তমান সময়ে তা অনুসরণ-অনুকরণ করলেই বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমাদের কর্তা ব্যক্তিরা বিষয়টি হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন কিনা?

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘন্টা, মার্চ ১৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।