ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

জ্ঞানার্জন সম্পর্কে মুসলিম বিদ্বানদের উক্তি

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৫
জ্ঞানার্জন সম্পর্কে মুসলিম বিদ্বানদের উক্তি

জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব ইসলাম ধর্মে অপরিসীম। ইসলাম জ্ঞানবানদের দিয়েছে ভিন্ন সম্মান ও মর্যাদা।

ইসলামের ইতিহাসে দেখা গেছে, কোরআন-হাদিসের বাইরে ইসলামী পণ্ডিতরাও সর্বদা জ্ঞানার্জনের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। এখানে  জ্ঞানার্জন সম্পর্কে তেমনই কিছু বিদ্বানদের উক্তি উল্লেখ করা হলো-

১. হজরত লোকমান (আ.) তার সন্তানকে বলেন, ‘হে বৎস! তুমি এ জন্য জ্ঞানার্জন করো না যে তুমি জ্ঞানীদের সাথে অহংকার করবে কিংবা মূর্খদের ওপর নিজেকে জাহির করবে অথবা বিভিন্ন মজলিসে নিজেকে বিশেষভাবে উপস্থাপন করবে। তুমি জ্ঞানকে উদাসীনতায় পরিত্যাগ করো না বা মূর্খতার মাঝে নিক্ষেপ করো না। হে বৎস! তুমি আপন চোখ দিয়ে দ্বীনী মজলিস বাছাই করে নাও। যখন কোনো দলকে আল্লাহর স্মরণ করতে দেখবে তখন তাদের সাথে যোগ দিবে। তুমি যদি আলোচ্য বিষয়ে জ্ঞান রাখ তাহলেও তা তোমার জ্ঞানবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। আর যদি তা তোমার অজানা থাকে তবে তোমার নতুন কিছু জানা হবে। হতে পারে আল্লাহ তাদের ওপর রহমত নাজিল করবেন যার একটি অংশ তুমিও প্রাপ্ত হবে। আর যে দল আল্লাহকে স্মরণ করে না তাদের সাথে বসবে না। কেননা যদি আলোচ্য বিষয়টি সম্পর্কে তোমার জ্ঞান থাকে তাহলে তা তোমাকে কোনো ফায়দা দেবে না। পক্ষান্তরে যদি তা তোমার অজানা থাকে তাহলে তারা তোমাকে পথভ্রষ্ট ও অক্ষম করে ফেলবে। হতে পারে আল্লাহ তাদের ওপর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন যা তোমাকেও স্পর্শ করবে। ’ –আহমাদ, হাদিস নং : ১৬৫১

২. হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘জ্ঞান অর্থ-সম্পদের চেয়ে উত্তম। কেননা জ্ঞান তোমাকে পাহারা দেয়, কিন্তু অর্থকে উল্টো পাহারা দিতে হয়। জ্ঞান হলো শাসক, আর অর্থ হলো শাসিত। অর্থ ব্যয় করলে নিঃশেষ হয়ে যায় কিন্তু জ্ঞান বিতরণ করলে আরো বৃদ্ধি পায়। ’ -ইমাম গাজ্জালি, এহইয়াউল উলুম : ১/১৭-১৮

৩. হজরত মোয়াজ বিন জাবাল (রা.) বলেন, ‘তোমরা জ্ঞানার্জন কর। কেননা আল্লাহর উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জনের অর্থ তাকে ভয় করা। জ্ঞানের আকাঙ্খা করা- ইবাদত বিশেষ। জ্ঞান চর্চা করা হলো তাসবিহ পাঠতুল্য। জ্ঞানের অনুসন্ধান করা জেহাদের আওতাভুক্ত। অজ্ঞ ব্যক্তিকে জ্ঞান দেওয়া সদকা। উপযুক্ত ক্ষেত্রে তা ব্যয় করা আল্লাহর নৈকট্য লাভের কারণ। আর তা হালাল-হারাম জানার মানদন্ড, একাকিত্বের বন্ধু, নিঃসঙ্গতার সঙ্গী, সুখ-দুঃখের সাথী, চরিত্রের সৌন্দর্য, অপরিচিতের সাথে পরিচিত হওয়ার মাধ্যম। আল্লাহ জ্ঞানের দ্বারা মানুষকে এমন মর্যাদাবান করেন যা স্থায়ীভাবে তাকে অনুসরণীয় করে রাখে। ’ -আখলাকুল উলামা : ৩৪-৩৫

৪. হজরত আবু দারদা (রা.) বলেন, ‘জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে উপার্জিত হয় যেমন ধৈর্য ধৈর্যধারণের মাধ্যমে অর্জিত হয়। যে ব্যক্তি কল্যাণের খোঁজে ব্যতিব্যস্ত হয় সে কল্যাণ লাভ করে। যে অকল্যাণ থেকে বাঁচার চেষ্টা করে সে অকল্যাণ থেকে রক্ষা পায়। ’ -কিতাবুল ইলম : ২৮

হজরত আবু দারদা (রা.) অারও বলেন, কোনো মানুষ জ্ঞানী হয়ে জন্ম নেয় না। তাকে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। ’ –প্রাগুক্ত

৫. হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেন, অজ্ঞ আমলকারী পথহারা পথিকের ন্যায়। সে কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই বেশি করে। অতএব তুমি জ্ঞানার্জন কর এমনভাবে যাতে তা ইবাদতকে ক্ষতিগ্রস্থ না করে, আবার ইবাদত কর এমনভাবে যেন তা জ্ঞানার্জনকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। একদল লোক এমনভাবে ইবাদতে ডুবে থাকে যে তারা জ্ঞানার্জনের সুযোগ পায় না, অথচ তারা উম্মতে মুহাম্মাদীর ওপর তরবারী চালিয়ে দেয়। যদি জ্ঞান থাকত তাহলে তারা এরূপ কর্মে লিপ্ত হতে পারত না। -তারিখে ইসলাম : ১৫৩

৬. হজরত মুজাহিদ বিন জুবায়ের (রহ.) বলেন, লজ্জা ও ভয় হলো জ্ঞানার্জনের প্রতিবন্ধকতা। ’ –ইবনে হাজার, ফতহুল বারী : ১/২২৮

৭. হজরত সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, ‘যে বিষয় আমি জেনেছি তা যদি আমল করি তবেই আমি মানুষের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী, আর যদি প্রাপ্ত জ্ঞান অনুযায়ী আমল না করি তবে দুনিয়ার বুকে আমার চেয়ে অজ্ঞ আর কেউ নেই। ’ –প্রাগুক্ত 

৮. হজরত ইবনে মাসঊদ (রা.) বলেন, ‘মুনাফিক জ্ঞানের পরিচয় দেয় মুখে আর মুমিনের জ্ঞানবত্তা প্রকাশ হয় তার আমলের মাধ্যমে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি জ্ঞানের অধিকারীগণ জ্ঞানকে সংরক্ষণ করতেন এবং যথার্থ স্থানে তাকে রাখতেন তবে তারা দুনিয়াবাসীর ওপর জয়লাভ করতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, তারা জ্ঞানকে দুনিয়াদারদের কাছে সমর্পণ করেছেন দুনিয়াবী স্বার্থ হাসিলের অভিপ্রায়ে। ফলে তারা অপদস্ত হয়েছেন। -কিতাবুল উম : ১/১৫৬

বাংলাদেশ সময় : ১৭৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।