ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ইসলামে শিক্ষকের মর্যাদা 

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২৪
ইসলামে শিক্ষকের মর্যাদা 

শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ রূপে গড়ে ওঠার পেছনে মা-বাবার যেমন অবদান থাকে; শিক্ষকেরও তেমন থাকে বৃহৎ ভূমিকা।

আল্লাহ তাআলা শিক্ষকদের আলাদা মর্যাদা দিয়েছেন। তাদের সম্মানে ভূষিত করেছেন। ফলে মুসলিমসমাজে শিক্ষক মাত্রই বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের ব্যক্তি।

শিক্ষাকে যাবতীয় উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হলে, শিক্ষকের ভূমিকার গুরুত্ব অপরিসীম। বলতে গেলে এর বিকল্প নেই।

পবিত্র কোরআনে নাজিলকৃত প্রথম আয়াতে জ্ঞানার্জন ও শিক্ষাসংক্রান্ত কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পড়! তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একবিন্দু জমাট রক্ত থেকে। পড়! আর তোমার প্রতিপালক পরম সম্মানিত। যিনি কলমের দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না। ’ (সুরা আলাক, আয়াত ১-৫)
প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন করো এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব-শিষ্টাচার শেখো। এবং যার কাছ থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন করো, তাকে সম্মান করো। ’ (আল-মুজামুল আওসাত, হাদিস ৬১৮৪)

সমাজে শিক্ষকদের সম্মানের দৃষ্টিতে দেখার ঐতিহ্য ও রীতি বেশ প্রাচীন। শিক্ষা অনুযায়ী মানবচরিত্র ও কর্মের সমন্বয় সাধনই হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তাগিদ। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহর পরে, রাসূলের পরে ওই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা মহানুভব যে জ্ঞানার্জন করে ও পরে তা প্রচার করে। ’ (মিশকাত শরিফ)

জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) একবার তার সওয়ারিতে (বাহন) ওঠার জন্য রেকাবে (সিঁড়িতে) পা রাখলেন। তখন ইবনে আব্বাস (রা.) রেকাবটি শক্ত করে ধরলেন। এ সময় জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) বললেন, হে রাসুল (সা.)-এর চাচাতো ভাই, আপনি হাত সরান। উত্তরে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, না, আলেম ও বড়দের সঙ্গে এমন সম্মানসূচক আচরণই করতে হয়। (আল ফকিহ ওয়াল-মুতাফাক্কিহ ২১৯৭)

খেলাফতের যুগেই ইসলাম প্রত্যেকের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। শিক্ষাকে সহজলভ্য করতে তখন শিক্ষকের জন্য সম্মানজনক পারিশ্রমিকও নির্ধারণ করা হয়েছিল। যদিও দ্বীনি শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষকরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জ্ঞান বিতরণ করতেন।

আর তারা যেহেতু নিজেদের জীবিকার পেছনে ব্যতিব্যস্ত সময় পার না করে, শান্ত-সৌম্য মস্তিষ্কে জ্ঞান বিতরণের পবিত্র কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন, তাই তৎকালীন খেলাফত ব্যবস্থা বা সরকার তাদের সম্মানে অভিষিক্ত করেছিলেন। তাদের জ্ঞান বিতরণের এ মহৎ কাজকে সম্মান জানিয়ে তাদের পরিবার-পরিজনের যাবতীয় আর্থিক খরচ বহন করেছিলেন। যেন জীবনের তাগিদে শিক্ষকদের ভিন্ন কোনো পথে পা বাড়াতে না হয়।

উমর (রা.) ও উসমান (রা.) তাদের শাসনামলে শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তারা শিক্ষক ও ধর্মপ্রচারকদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন। আবদুর রহমান ইবনুল জাওজি (রহ.) তার বিখ্যাত ‘সিরাতুল উমরাইন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) হজরত ওসমান ইবনে আফ্ফান (রা.)-এর যুগে মুয়াজ্জিন, ইমাম ও শিক্ষকদের সরকারি ভাতা দেওয়া হতো। (কিতাবুল আমওয়াল, পৃষ্ঠা ১৬৫)

উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.)-ও তার যুগে ইয়াজিদ ইবনে আবি মালেক ও হারেছ ইবনে ইউমজিদ আশারি (রহ.)-কে ওই অঞ্চলে দ্বীন শেখানোর কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। বিনিময়ে তাদের জন্য সম্মানজনক পারিশ্রমিকও নির্ধারণ করা হয়েছিল। অবশ্য ইয়াজিদ (রহ.) তা গ্রহণ করলেও হারেছ (রহ.) তা গ্রহণ করেননি। (কিতাবুল আমওয়াল, পৃষ্ঠা ২৬২)

বস্তুত ইতিহাসে যুগ যুগ ধরে ইসলাম ও ইসলামের মনীষীরা শিক্ষক ও গুরুজনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা দিয়ে আসছেন। নিঃস্বার্থভাবে জ্ঞান বিতরণের দীক্ষাও দিচ্ছেন নিরন্তর ভাবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২৪
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।