ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

ইসলামে পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪
ইসলামে পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব

পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ইসলামে বেশ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে পরিচ্ছন্নতার অনুশীলন দেয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআন ও রাসুল (সা.)-এর হাদিসে পরিচ্ছন্নতা বিষয়টির ক্ষেত্রে আরও ব্যাপক শব্দ ‘তাহারাত’ বা পবিত্রতা ব্যবহার করা হয়েছে।

 

‘তাহারাত’ শব্দটি কুফরি ও আল্লাহর নাফরমানিসহ আভ্যন্তরীণ যাবতীয় পাপাচার ও নোংরামি থেকে মুক্ত হওয়ার যেমন জোর দেয়, তেমনি সবরকমের বাহ্যিক অপরিচ্ছন্নতা থেকেও মুক্ত রাখতে গুরুত্ব দেয়।

ইসলামী ফিকহ শাস্ত্রের প্রতিটি গ্রন্থের শুরুতেই ‘কিতাবুত তাহারাত’ বা ‘পবিত্রতা অধ্যায়’ স্থান পেয়েছে।


মুমিনকে যেমন অবস্তুগত (হাদছ) অপরিচ্ছন্নতা থেকে পবিত্র হতে হয়, অজু বা গোসলের মাধ্যমে। তেমনি বস্তুগত অপরিচ্ছন্নতা (খুবুছ) থেকেও পবিত্র হতে হয়, দেহ-বস্ত্র ও স্থান ইত্যাদি পরিষ্কারের মাধ্যমে। তাছাড়া প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য পবিত্র ও পরিচ্ছন্নতার কথা তো বলাই বাহুল্য।
মদিনার নিকটবর্তী কোবা এলাকার লোকজনের প্রশংসা করে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ্ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন। , (সুরা আত-তাওবা, আয়াত  ১০৮)

মহান আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত  ২২২)

হাদিসেও বিভিন্ন উপায়ে পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং নানাবিধ শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এমনকি পরিচ্ছন্নতা রক্ষাকে ঈমানের অংশ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবু মালেক আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক। ’ (মুসলিম, হাদিস নং ২২৩)

ইসলামে ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা ও গৃহের পরিচ্ছন্নতা কোনোটাই বাদ যায়নি। ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় অন্তত জুমাবারে গোসলের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এমনকি হাদিসে এ ক্ষেত্রে ওয়াজিব বা অত্যাবশ্যক বলা হয়েছে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, জুমার দিন (শুক্রবার) গোসল করা প্রতিটি সাবালক ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব। ’ (বুখারি, হাদিস নং  ৪৭৯)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর জন্য প্রতিটি মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য হলো (অন্তত) প্রতি সাত দিনের মাথায় তার মাথা ও শরীর ধৌত করা। ’ (বুখারি, হাদিস নং  ৮৯৭; মুসলিম, হাদিস নং  ৮৪৯)

কারো ওপর গোসল ফরয না হলেও শরীরে ঘাম ও ধুলাবালু ইত্যাদি লাগার কারণে দুর্গন্ধ হতে পারে, তাই অন্তত সাতদিনে একবার গোসলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার মানে সাত দিন পর গোসলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা নয়। অন্যদিকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পরিচ্ছন্ন রাখতেও হাদিসে সবিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।  

দাঁত ও মুখের যত্নের জন্য হাদিসে মিসওয়াকের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মিসওয়াক ব্যবহারকে গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি না আমার উম্মত অথবা (তিনি বলেছেন) মানুষের জন্য কঠিন হত তবে আমি তাদের প্রত্যেক সালাতের সঙ্গে মিসওয়াকের নির্দেশ (ওয়াজিব ঘোষণা) দিতাম। ’ (বুখারি, হাদিস নং  ৮৮৭; মুসলিম, হাদিস নং  ২৫২)

চুলের পরিচ্ছন্নতা রক্ষায়ও ইসলামে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জাবির (রা.) বলেন, একদিন রাসুল (সা.) আমাদের ঘরে বেড়াতে এলেন। আসার পর তিনি এলোকেশী এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন। তার সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘এ ব্যক্তি কি এমন কিছু জোটাতে পারেনি, যা দিয়ে সে তার মাথার চুল বিন্যস্ত করবে’ ময়লা কাপড় পরিহিত আরেকজনকে দেখে তিনি বলেন, ‘এ ব্যক্তি কি এমন কিছুর ব্যবস্থা করতে পারেনি, যা দিয়ে সে তার কাপড় পরিষ্কার করবে’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস নং  ১৪৮৫০; বাইহাকি, হাদিস নং  ৫৮১৩)

মানুষের পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য এবং সুস্থতা ও কমনীয়তার নেয়ামত রক্ষায় শরীয়তে কতটা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা হাদিস ফিকহের গ্রন্থগুলোর পবিত্রতা অধ্যায় পড়লে সহজে বোঝা যাবে। নখ কাটা, গোঁফ ছোট করা, বাহুর নিচের চুল উপড়ানো এমনকি গুপ্তাঙ্গের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করাসহ কোনোটিই বাদ যায়নি।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন,  দশটি বিষয় ‘ফিতরাত’র অন্তর্ভুক্ত গোঁফ কাটা, দাড়ি লম্বা রাখা, মিসওয়াক করা, নাকে পানি দেওয়া, নখ কাটা, চামড়ার ভাঁজের জায়গাগুলো ধোয়া, বগলের নিচের চুল তুলে ফেলা, নাভির নিচের চুল মুণ্ডানো, (মলমূত্র ত্যাগের পর) পানি দ্বারা পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা। বর্ণনাকারী বলেন, দশম বিষয়টি আমি ভুলে গেছি, সম্ভবত কুলি করা। ’ (মুসলিম, হাদিস নং  ২৭৫৭)

ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখতেও হাদিসে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আবাস স্থানকেও নোংরা, আবর্জনা ও দৃষ্টিকটু উপাদান থেকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নিজের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা রক্ষায় এর বিকল্প নেই। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রা.) থেকে। তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্রকে পছন্দ করেন। আল্লাহ পরিচ্ছন্ন। তিনি পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। আল্লাহ মহৎ, তিনি মহত্ত্ব পছন্দ করেন, আল্লাহ বদান্য, তিনি বদান্যতা পছন্দ করেন। অতএব তোমরা তোমাদের (ঘরের) উঠোনগুলো পরিচ্ছন্ন রাখবে। [তিরমিজি, হাদিস নং ২৭৯৯)

পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারেও হাদিসে নির্দেশনা এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা লানতকারী (অভিশাপে আক্রান্ত হতে হয় এমন) দুইটি কাজ থেকে বেঁচে থাকো। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, লানতকারী  কাজ দুইটি কী তিনি বলেন, যে মানুষের চলাচলের রাস্তায় কিংবা গাছের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস নং ২৫; মুসনাদ আহমদ, হাদিস নং ৮৮৫৩) 

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।