ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইসলাম

জিনেরা কি মারা যায়? কী বলছে ইসলাম

মুফতি আরিফুর রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪
জিনেরা কি মারা যায়? কী বলছে ইসলাম

জিন শব্দের অর্থ গুপ্ত, অদৃশ্য, লুক্কায়িত, আবৃত প্রভৃতি। এক হাদিস থেকে জানা যায়, জিন তিন প্রকার—এক. যারা শূন্যে উড়ে বেড়ায়।

দুই. কিছু সাপ ও কুকুর। তিন. যারা মানুষের কাছে আসে ও চলে যায়। (সহিহ আল জামে আস-সগির, হাদিস : ৩১১৪)

জিন আল্লাহ তাআলার অন্যতম সৃষ্টি। জিনজাতির সৃষ্টি হয়েছে উত্তপ্ত অগ্নিশিখা থেকে। জিনদের বিবেক, বুদ্ধি ও অনুভূতির শক্তি আছে। তাদের আছে ভালো-মন্দ পার্থক্য করার ক্ষমতা। তাদের মধ্যে রয়েছে ভালো জিন ও মন্দ জিন। পবিত্র কোরআনে জিনদের বক্তব্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমাদের কিছু সৎকর্মশীল ও কিছু এর ব্যতিক্রম। আমরা ছিলাম বিভিন্ন মত ও পথে বিভক্ত। ’ (সুরা : জিন, আয়াত : ১১)

আসমানি কিতাবে যারা বিশ্বাস করে, যেমন—ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমান, তারা সবাই জিনের অস্তিত্বে বিশ্বাসী।

পৌত্তলিক, কিছু দার্শনিক ও বস্তুবাদী গবেষক জিনের অস্তিত্ব স্বীকার করে না। দার্শনিকদের একটি দল বলে থাকে, ফেরেশতা ও জিন রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। ভালো চরিত্র ফেরেশতা আর খারাপ চরিত্র জিন বা শয়তান শব্দ দিয়ে বোঝানো হয়। তাদের বক্তব্য কোরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী। জিনের অস্তিত্ব স্বীকার করা ঈমান বিল গায়েব বা অদৃশ্যের প্রতি ঈমান আনার অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে প্রায় ৫০ বার জিন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। জিনজাতির সৃষ্টি, তাদের ইসলাম গ্রহণ, মানুষের আগে তাদের সৃষ্টি ইত্যাদি বিষয়ে একাধিক আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। সুরা আর-রাহমানে জিন ও মানুষকে একসঙ্গে সম্বোধন করা হয়েছে। সোলায়মান (আ.)-এর আমলে জিনদের কাজকর্ম করার তথ্য কোরআনে উল্লেখ আছে। জিনজাতি সম্পর্কে মহান আল্লাহ ‘সুরা জিন’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সুরা নাজিল করেছেন। তাই জিনের অস্তিত্ব অস্বীকার করা কোরআন অস্বীকার করার নামান্তর।

প্রশ্ন হলো, জিনেরা কি মানুষের মতো মৃত্যুবরণ করে? এর জবাব হলো, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা ও বিশ্বাস মতে, জিনেরা মৃত্যুবরণ করে। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘হে আল্লাহ! আপনি চিরঞ্জীব, যিনি কখনো মৃত্যুবরণ করেন না। অথচ মানুষ ও জিন মৃত্যুবরণ করে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৭৩৮৩)

তবে জিনদের মৃত্যুর উপলক্ষ মানুষের মৃত্যুর উপলক্ষের সঙ্গে মিল না-ও থাকতে পারে। সাধারণত জিনেরা জ্বলন্ত অগ্নিশিখায় পুড়ে মারা যায়। হত্যা ও লড়াইয়েও অনেকের মৃত্যু ঘটে। তাদেরও অসুখ হয়। অসুখেও অনেকের মৃত্যু হয়। আবার অনেকে সাগরে ডুবে মরে। সাগরের তলদেশে চলে গেলে তারা আর ফিরে আসে না। কেউ কেউ মহাশূন্যে হারিয়ে যায়। জিনেরা যেহেতু বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে পারে, তাই ধারণ করা আকৃতিতেও তাদের মৃত্যু হতে পারে।

শয়তানও জিনজাতির অন্তর্ভুক্ত; কিন্তু অন্য জিন তার মতো নয়। তাকে কিয়ামত পর্যন্ত হায়াত দেওয়া হয়েছে। এ সুযোগ অন্য কোনো জিনকে দেওয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, আরেকটি প্রশ্ন এসে যায়। প্রশ্নটি হলো, মৃত জিনদের কোথায় দাফন করা হয়? এর জবাব হলো— যেহেতু রাসুল (সা.)-কে জিনজাতির জন্যও প্রেরণ করা হয়েছে, অতএব তারাও কবর দেওয়ার ইসলামী রীতি অবশ্যই মেনে চলতে বাধ্য। তবে তার ধরণ মানুষের অজানা।

লেখক: ইসলামী গবেষক

বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৪
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।