ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সাক্ষাৎকার

প্রশিকা নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে, সরকারের সহযোগিতা চাই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২২
প্রশিকা নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে, সরকারের সহযোগিতা চাই

বাংলাদেশের ড. কাজী ফারুক। নামটির সঙ্গে কাউকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই।

দেশের প্রথম এনজিওর চেয়ারম্যান তিনি। মুক্তবুদ্ধির প্রসার, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করে তোলা, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই, নারীশিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়তন, মানুষকে অধিকার সচেতন করা,  ভোটাধিকারের পক্ষে মানুষকে সংগঠিত করা, প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো----এই সব নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আপসহীন সংগ্রামের এক কিংবদন্তি হয়ে উঠেছেন তিনি। ৭৫ বছর বয়সে এখনও তারুণ্যে টগবগ।

বাংলানিউজের পক্ষ থেকে গত ১৬ জুন বিপুল প্রতিভা ও অভিজ্ঞতার অধিকারী সংগ্রামশীল এই মানুষটির একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। টানা পাঁচ ঘণ্টার এই দীর্ঘ সাক্ষাৎকার, আড্ডা ও আলাপচারিতায় কাজী ফারুকের জবানীতে উঠে আসে তাঁর জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা। উঠে আসে তার জনবান্ধব কর্মসূচি, দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম ও ভবিষ্যতের নানা স্বপ্ন ও রূপকল্পের কথা।  

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলানিউজ সম্পাদক জুয়েল মাজহার, প্রধান প্রতিবেদক ইসমাইল হোসেন ও জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক গৌতম ঘোষ। সঙ্গে ছিলেন জ্যেষ্ঠ ফটো সাংবাদিক জিএম মুজিবুর।  

 

তৃতীয় পর্ব
১৯৯১ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচিত হয় তখন আমরা দেখতে পাই, এই রাজনৈতিক দলগুলো প্রকাশ্যে এনজিওবিরোধী কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে প্রশিকাবিরোধী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে থাকে।  তাদের সমর্থিত পত্রপত্রিকাতে এনজিওবিরোধী নানা অপপ্রচার শুরু হয়। তারা বলতে শুরু করে, এনজিওগুলো মুসলমানদের খ্রিস্টান বানাচ্ছে, মেয়েদের বেপর্দা বানাচ্ছে, এনজিও-পরিচালিত স্কুলগুলোতে ইসলামবিরোধী শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।

বাংলানিউজ: বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার প্রশিকাবিরোধী আর কি কি অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল?

ড. কাজী ফারুক: আমি যখন এনজিওগুলোর সংগঠন এডাব-এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি, তখন এডাবসহ আরো ৫০টি এনজিওর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে দেন-দরবার করেও কিছুই হলো না। এনজিওদের পরিচালিত শত-শত স্কুল পোড়ানো হলো, প্রশিকার রোপিত গাছ কেটে ফেলা হলো, নারীকর্মীদের মোটর সাইকেল থেকে টেনে-হিঁচড়ে ফেলে দেওয়া হতো। পথেঘাটে লাঞ্ছিত করা হতো। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফতোয়া দিয়ে নারীদের নির্যাতন করা শুরু হলো।

মূলত ১৯৯২ সালে আমাদের ওপর নির্যাতন শুরু হয় এবং ১৯৯৫ সালে জামায়াত ও হেফাজতের হরতালের মধ্য দিয়ে তা সহিংস রূপ পেতে থাকে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, এনজিওগুলো যাতে বাংলাদেশে কাজ করতে না পারে। নারীরা যেন উৎপাদনশীল কাজে যুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হতে না পারে।

 

 

১৯৯৫ সালে হেফাজতে ইসলাম ও ধর্মান্ধ,উগ্রবাদী দলগুলো এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে হরতাল ডাকল। সেই সহিংস হরতালে অনেক এনজিওর অফিস, হাসপাতাল, স্কুলঘর পোড়ানো হয়। তখন সিলেটের ফুলতলী পীরের ছেলেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ফোন করে তাঁকে ছাড়িয়ে দেন। আসলে এসব কিছুই বিএনপি ও তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার নির্দেশেই হয়েছে। তখন প্রধানমন্ত্রীর (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করে সমস্যাগুলো তুলে ধরার জন্য এডাবের সবাই আমাকে তাগিদ দিলেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব কামাল সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে মুখের ওপর বলে দিলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনার সঙ্গে দেখা করবেন না। জামায়াতে ইসলামীর মানা আছে।

তখন আমি বললাম, বিএনপি সরকার তাহলে বাংলাদেশে এনজিওগুলোকে কাজ করতে দেবে না? কামাল সিদ্দিকী বললেন, ধরে নিন তা-ই। আপনারা লোকজনকে খ্রিস্টান বানাচ্ছেন, নারীদের বেপর্দা বানাচ্ছেন। এসবের মধ্য দিয়ে তো মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগছে।

আমি বললাম, আমি একটা বড় ভেন্যুতে সবাইকে ডাকব। যদি তারা আসে তাহলে বুঝব তারা আমাদের চায়। আর যদি না আসে বা অল্প সংখ্যায় আসে, তাহলে বুঝব সরকারও আমাদের চায় না, জনগণও চায় না। যদি তেমনটাই হয়, তাহলে আমরা আর কাজ করব না।

আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, ১৯৯৬ সালে পহেলা জানুয়ারি মানিক মিয়া এভিনিউতে একটা মহাসমাবেশ করব। তখন ঢাকার মেয়র ছিলেন হানিফ সাহেব। তিনি সমাবেশের অনুমোদন দিলেন। পুলিশ প্রশাসন মাইক ব্যবহারের অনুমতি দিল। কিন্তু ১৯৯৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর একটা চিঠিতে এডাবকে জানানো হয়, এই সমাবেশ বেআইনি। তাই এটা করতে দেওয়া হবে না। এই সমাবেশ বন্ধ করতে হবে।

তখন আমরা হাইকোর্টে রিট করি। সমাবেশ বন্ধের এই নির্দেশ হাইকোর্ট স্থগিত করে দেন। তারপর যুবদল ও পুলিশের বাধা উপেক্ষা করেই ৩১ ডিসেম্বর রাতে মঞ্চ তৈরি করা হলো। পরদিন পহেলা জানুয়ারি সারাদেশ থেকে চার লাখেরও বেশি নারী-পুরুষের মহাসমাবেশ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের এতদিনের জুলুম-নির্যাতনের সমুচিত জবাব দিতে পারলাম আমরা।

বাংলানিউজ: ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ও ১২ জুনের নির্বাচনের বিষয়ে প্রশিকার ভূমিকা কী ছিল? বিএনপির ‘নেক নজরে’ মানে ‘বদ নজরে’ পড়ার কারণ কী ছিল?

ড. কাজী ফারুক: ১৯৯৬ সালের ১৫ জানুয়ারি বিএনপির মহাসচিব মান্নান ভুঁইয়া আমাকে তাঁর বাসভবনে ডাকলেন। তিনি বললেন, আপনারা খুব খারাপ কাজ করেছেন, আমাদের বিরুদ্ধে নেমেছেন। যাকগে, যা হওয়ার হয়েছে। এখন আপনারা আমাদের সহযোগিতা করেন। আমরা ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন ডেকেছি সেখানে অন্য দলগুলো আসবে না। শিক্ষক সমিতিও ঘোষণা দিয়েছে তারা এ নির্বাচনে কোনো সহযোগিতা করবে না (তখন মাগুরায় একটি নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সে ইস্যুতে আন্দোলন করে বলেছিল যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। বিএনপি তখন ঘোষণা দেয়, ১৫ ফেব্রুয়ারি তারা নির্বাচন করবেই করবে। তা না হলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। )।  

মান্নান ভুঁইয়া আমাকে আরো বললেন, সারাদেশে আপনাদের এডাবের তো অনেক কর্মী আছে। তাদের দিয়ে আমাদের নির্বাচনটা উঠিয়ে দেন।

আমি বললাম, এভাবে নির্বাচন করলে তো দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। দেশে দুর্ভিক্ষ হবে এবং সামরিক শাসনও চলে আসতে পারে। এতে দেশে সোমালিয়ার মতো খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এটা আপনারা করতে যাবেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বরং একটা নির্বাচন দিন।

তখন তিনি বললেন, আমরা তো সেটা করবো ৫ বছর পরের নির্বাচনে। আমি তাঁকে সাফ জানিয়ে দিলাম, আমরা আপনাকে এহেন প্রহসনের নির্বাচনে কোনো ধরনের সহযোগিতা করব না। করতে পারব না।

তিনি আমাকে হুমকি দিয়ে বললেন, দেইখেন আমরাই কিন্তু ক্ষমতায় থাকব! আমি তাঁকে বললাম, বুঝেছি। তবে আমরা কোনোভাবেই সহযোগিতা করতে পারব না।

একথা বলে আমি বেরিয়ে এলাম। উল্লেখ্য,  ১৯৯৫ সালে আমি ব্র্যাক, প্রশিকাসহ কয়েকটি এনজিও নিয়ে ‘ফেমা’ (ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্স) গঠন করলাম। এটাই বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচন পর্যবেক্ষক।

১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হলো। নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে দিলো, দেশে কোথাও ৮০ শতাংশের নিচে ভোট হয়নি। আর পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনে প্রকাশিত-প্রচারিত খবরে বলা হলো, কোথাও মাত্র ১০ শতাংশ, কোথাও ১৫ শতাংশ এবং কোথাও ২০ শতাংশ ভোট পড়েছে।

আর ফেমার পর্যবেক্ষণে দেখা গেল, কোথাও ১০ শতাংশের ওপরে ভোটারই আসেনি। তখন আমরা এডাবের সাধারণ সভা ডেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নিলাম, এই পাতানো নির্বাচন কোনোভাবেই আমরা মানব না। মেনে নেওয়া যাবে না। এ নির্বাচন বাতিল করতেই হবে। তিন মাসের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে।

 

 

এই দাবি আদায়ে এনজিওসহ পেশাজীবী ও নাগরিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে আন্দোলনে নেমে পড়ি। পাশাপাশি এফবিসিসিআই সভাপতি সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিলাম, ১৯৯৬ সালের ১৬ মার্চ মতিঝিলের শাপলাচত্বরে একটা নাগরিক সমাবেশ করব। এটাই বোধহয় ইতিহাসে প্রথম প্রফিট ও নন-প্রফিট খাতের উদ্যোগে যুগপৎ গণতান্ত্রিক আন্দোলন। বিশাল ওই সমাবেশে এনজিও, ব্যবসায়ী সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ছাত্র সংগঠন, আইনজীবী সমিতি, শিক্ষক সমিতি এবং আমলাদের সংগঠনসহ সব স্তরের শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। তখন আন্দোলনে একটা গণজোয়ার আসে। আমরা বঙ্গবভন ঘেরাও করলাম এবং স্মারকলিপি দিলাম।

এরপর অনেকেই আমাকে বললেন, আপনি বিএনপির ‘নেক নজরে’ পড়ে গেছেন! ডিজিএফআই আপনাকে ধরবে। তখন বিপদ আঁচ করতে পেরে আমি সাবধান হয়ে গেলাম। বাসায় না ফিরে এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে উঠলাম। আমার বাসায় আমার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা থাকে। একদিন মেয়র হানিফ সাহেব আমার বাসায় টেলিফোন কল করে আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমাকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বললেন। আমার স্ত্রী টেলিফোনে আমাকে বিষয়টি জানান। আমি হানিফ সাহেবকে কল দিলাম। তিনি আমাকে তখনই দেখা করতে বললেন।

আমি বললাম, রাত ১২টার পরে দেখা করব৷ কারণ আমার ও আপনার পেছনে ডিজিএফআই আছে। যেমন কথা তেমন কাজ।  ২১ মার্চ রাত ১টার দিকে রিকশায় পুরান ঢাকায় হানিফ সাহেবের বাসায় গেলাম। অনেক কথা হলো। তিনি বললেন, আমি দেখেছি আপনি ১ জানুয়ারি, ১৬ মার্চ সমাবেশ করেছেন। আসলে একদিন বা একবার সমাবেশ করে কাজের কাজ কিছুই হবে না। এক জায়গায় লাগাতার অন্তত ৭/৮ দিন সমাবেশ করতে হবে। তাহলেই কিছু একটা হবে।

হানিফ সাহেব আরো বললেন, আমি ঠিক করেছি প্রেসক্লাবের সামনে ৭ থেকে ১০ দিনের লাগাতার একটা সমাবেশ করব। লোক সমাগমের দায়িত্বটা আপনাকেই নিতে হবে।

আমি বললাম, নিশ্চয় নেব। তিনি বললেন, তাহলে মঞ্চের নাম কী দেওয়া যায়? আমি বললাম, নামটা নাগরিক মঞ্চ দেওয়া যেতে পারে। তিনি বললেন, নাগরিক মঞ্চ না, ‘জনতার মঞ্চ’ হলে সব স্তরের নাগরিকদের নিয়ে আসা যাবে।

সেদিনই সিদ্ধান্ত হলো, ২৩ মার্চ ‘জনতার মঞ্চ’-র মাধ্যমে লাগাতার আন্দোলন শুরু হবে। যেমন কথা তেমন কাজ। সেদিনই আবার দেশব্যাপী ১৫শ’ কিলোমিটার মানববন্ধন করলাম এডাবের নেতৃত্বে। পরের দিন পুলিশ ও বিডিআর এসে ‘জনতার মঞ্চ’ ভেঙে দিল।

তখন আমি ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন থানা থেকে হাজার-হাজার মানুষকে রাজধানীতে আসতে এবং অবস্থান করতে বলি। বিপুল-বিশাল জনস্রোত দেখে বিডিআর ও পুলিশ চলে যায়। তখন জনতার মঞ্চ উদ্ধার করা হয়। এই আন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেবেন বলেও ঘোষণা দিলেন। তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলো। তাদের অধীনে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলো ১২ জুন।

বাংলানিউজ: ১২ জুনের নির্বাচনে জনগণের ভোটের অধিকার ও ভোটের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে এবং  এ বিষয়ে নাগরিক সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রশিকা যে ভূমিকা পালন করেছে, সে সম্পর্কে জানতে চাই

ড. কাজী ফারুক: এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এডাব, প্রশিকাসহ অন্য এনজিগুলো মিলে একটা ভোটার সচেতনতা তৈরির প্রচারণা চালায়। সেখানে দুটি স্লোগান নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। একটা হলো, ‘‘আমার ভোট আমি দেব, যাবে খুশি তাকে দেব’’। আরেকটা হলো, ‘‘আমার ভোট আমি দেবো, দেখে শুনে বুঝে দেব’’।

এর পাশাপাশি ১১শ গণনাট্য দলকে নিয়োজিত করে গ্রামে-গ্রামে, বস্তিতে-বস্তিতে ভোটার সচেতনতামূলক নাটক ও গণসংগীত পরিবেশেন করা হয়। আমরা পোস্টারও তৈরি করেছিলাম। কীভাবে ভোট দিতে হবে তার ওপর একটা বিজ্ঞাপন তৈরি করে টেলিভিশনে দেশব্যাপী প্রচার চালানো হয়। এর ফলে মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ-উদ্দীপনা ও আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কেননা এর আগে অনেক মানুষ জানতই না যে, ভোট একটা ক্ষমতা এবং পবিত্র আমানত। একে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হয়।  এনজিও এবং নাগরিক সমাজের হার-না-মানা ভূমিকার জন্য এটা সম্ভব হয়েছে।

এর ফলে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন তারিখের নির্বাচনে ৭৬ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। এর মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যাই বেশি ছিল। নারীরা দলে দলে দীর্ঘ কিউতে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়। ১৩ জুন বিএনপির প্রেসসচিব আনোয়ার জাহিদ সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, প্রশিকা ও কাজী ফারুকের জন্যই বিএনপি হেরেছে।

বাংলানিউজ: বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিদায় নিল। ক্ষমতার পট পরিবর্তন হলো। এরপর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলো। তবু প্রশিকার উপর নির্যাতন থামল, না কি থামল না?

ড. কাজী ফারুক: আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আস্তে আস্তে আমাদের কাজের সব বাধা দূর হয়। কিন্তু ১৯৯৮ সালে আমরা সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধ-মেলার আয়োজন করি। তখন থেকেই বিপত্তি শুরু হয়। যে জেলাগুলো ১৬ ডিসেম্বরের আগেই মুক্ত হয়েছে সেখানে আগেই মুক্তিযুদ্ধ-মেলা করব।

তেমন একটা জেলা হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যা ৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয়। আমরা ঠিক করলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৮ ডিসেম্বর থেকে ৩ দিনব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের মেলা করব। সেখানে আলোচনাসভা হবে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। তৃণমূল পর্যায়ের পুরুষ ও নারীরা হাতে-তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় অংশ নেবেন। এতে করে তৃণমুল পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রসারিত হবে।

আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মেলা করার জন্য এক মাস আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে রাখলাম। এ বিষয়ে আমাদের সকল আয়োজন এগিয়ে চলছিল। কিন্তু আমাদের হতবাক করে দিয়ে অনুষ্ঠানের মাত্র ৩/৪ দিন আগে ডিসি অনুষ্ঠান না করার নির্দেশ দিলেন। তখন আমি বললাম, কেন বন্ধ করব? তিনি বললেন, এটা বন্ধ না করলে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। আপনি সেদিন আসবেন না।

আমি তখন বললাম, এই মুহুর্তে আমি কী করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে খবর পাঠাব? আমি সেদিন আসবই আসব। আমাদের যাবতীয় সুরক্ষা, প্রোটেকশন আপনাকেই দিতে হবে।

তিনি বললেন, আমি সেটা দিতে পারব না। আমি বললাম, তবু আমি যাবই। এরপর ডিসি ১৪৪ ধারা জারি করে দেন। তখন ১৪৪ ধারার আওতার বাইরের একটা স্কুলে আমরা সমাবেশ করি। তখন একজন ম্যাজিস্ট্রেট এসে বলেন, আপনি চলে যান। আমরা পুলিশ সাপোর্ট দিতে পারব না। ১০ মিনিটের মধ্যে বক্তব্য দিয়ে চলে যান।

 

 

আমি বক্তব্য শুরু করার পরপরই দেখি ঢাল-তলোয়ার, লাঠিসোটা নিয়ে মাথায় টুপিপরা হাজার হাজার লোক সমাবেশের দিকে ধেয়ে আসছে। আমার কর্মীরা আমাকে ও অন্যসব নেতাকে ঘিরে বেষ্টনী তৈরি করে একটা নিরাপদ জায়গায় রেখে এলো। কিন্তু হেফাজতের নেতাকর্মী-সমর্থকেরা এসে নারীদের বেধড়ক লাঠিপেটা করতে শুরু করে দিল। এমনকি তলোয়ার দিয়ে কোপাতে শুরু করলো। বোমা-ককটেল ছুড়তে শুরু করলো। সে ছিল এক ভয়াবহ বীভৎস, নারকীয় তাণ্ডব। তারপর সেখানে প্রশিকা, ব্র্যাকসহ অন্যান্য এনজিওর ১২/ ১৩টা অফিস পুড়িয়ে দিল, এমনকি তারা থানাও পুড়িয়ে দিল।

আমরা ভাবছিলাম, সেখান থেকে বের হবো কীভাবে? আমরা ডিআইজির সহযোগিতা চাইলাম। তিনিও সাফ বলে দিলেন, আমরা কোনো সাপোর্ট দিতে পারব না। আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু সাহেবের অনুমতি এনে দিতে হবে। কারণ তাঁর সাথে ধর্মভিত্তিক অনেক রাজনৈতিক দলের সুসম্পর্ক ছিল। তিনি চাচ্ছিলেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁদের একটা যোগসূত্র স্থাপিত হোক ( এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত অনুমান)। যাই হোক, মাগরিবের নামাজের সময় সেখান থেকে বেরিয়ে চলে আসি।

পরদিন ঢাকায় শহিদমিনারে কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে বিশাল প্রতিবাদসভা করি। এরপর সরকার একটা বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেই তদন্তের নামেও চললো গড়িমসি। তখন আমি ২০০১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি একটা সমাবেশ ডাকি জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে। সমাবেশে প্রায় ৫ লাখের মতো লোক-সমাবেশ হয়। ওই দিন ফজলুল হক আমিনী হরতাল ডাকেন।

ফজলুল হক আমিননীসহ শেখ আজিজুল হক, শাইখুল হাদিস আজিজুল হককে গ্রেফতার করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলাকারী প্রায় ১০ হাজার মাদ্রাসাছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। এই সমাবেশের মাধ্যমে সমুচিত জবাব দেওয়া হলো। এটা ছিল ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা এক দশক ধরে চলতে থাকা বিএনপি-জামায়াত ও তাদের প্রতিক্রিয়াশীল দোসরদের হামলা-আক্রমণ প্রতিহত করার লড়াই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌরমঞ্চ থেকে ২০০০ সালে ফজলুল হক আমিনী ঘোষণা দিলেন,  ‘প্রশিকার কাজী ফারুককে যেখানে পাওয়া যাবে হত্যা করা হবে’। আমি মামলা করলাম। সে মামলা ১০ বছর ধরে চলার পর আমিনী হেরে যান।

বাংলানিউজ: বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর প্রশিকাবিরোধী নিপীড়নের ধরনটা কেমন ছিল? প্রশিকার অর্থায়নই-বা বন্ধ হতে শুরু করলো কীভাবে?

ড. কাজী ফারুক: ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপি ক্ষমতায় এলো। এসেই প্রথম ১০০ দিনের কর্মসূচি দিলেন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে তাতের প্রধান এজেন্ডা হলো, প্রশিকা ও এডাবের বিরুদ্ধে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন। ১৯ অক্টোবর এই ঘোষণা দেন তিনি। এরপর প্রশিকার ওপর নেমে আসতে থাকলো একের পর এক দমন-পীড়ন আর নির্যাতন।

এদিকে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্র্যাকের আবেদ ভাই (ফজলে হাসান আবেদ) এবং আশা-র শফিক চৌধুরী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। এরপর তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, প্রশিকা ও এডাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে তাঁরা সহায়তা করবেন। এঁদের কূটচক্রে এনজিওদের সংগঠন এডাবে ফাটল ধরল। পাশাপাশি তাঁরা একটি বিকল্প সংগঠনও দাঁড় করিয়ে ফেললেন। নাম দেওয়া হলো ‘এফএনবি’ (ফেডারেশন অব এনজিওস অব বাংলাদেশ)। এরপর প্রশিকার বিরুদ্ধে এনজিও-ব্যুরো তদন্ত শুরু করে। দুর্নীতি দমন ব্যুরোকে দিয়ে নোটিশ পাঠানো হয়। তাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করবেন।

তদন্ত করে কিছু না পাওযায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কমিটি বিলুপ্ত করে দিয়ে নতুন করে কমিটি করে দেওয়া হয়। তাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে ৫৬টি মিথ্যা অভিযোগ সাজালেন।

এর ভিত্তিতে অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান প্রশিকার দাতাসংস্থাগুলোকে ডেকে এনে ৫৬টি অভিযোগের কথা জানালেন। তাঁরা বললেন, গত ১০ বছর ধরে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান অডিট ফার্ম ‘প্রাইস ওয়াটার হাউজ অ্যান্ড কুপার্স’-কে দিয়ে প্রশিকার অডিট করা হয়েছে। সেখানে এরকম কোনো অভিযোগ বা অনিয়মের কিছুই আমরা দেখতে পাইনি। আপনারা যে ৫৬টি অভিযোগের কথা বলছেন, একটা আন্তর্জাতিক অডিট-সংস্থা দিয়ে সেগুলোর তদন্ত করা হোক। তখন সাইফুর রহমান বুঝে গেলেন, এটা করলে কোনো অভিযোগই আর ধোপে টিকবে না। তখন দায়সারাভাবে মিটিং করে শেষ করে দেওয়া হয়।

 

 

বাংলানিউজ: নারীর আয়বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জামানতমুক্ত ঋণের প্রচলন করার মতো জনহিতকর, নারীবান্ধব কর্মসূচির পরও কেন আপনাকে গ্রেফতার করা হলো?

ড. কাজী ফারুক: বিএনপির দেওয়া ৫৬টি মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে ১৫টি মামলা করা হয়। এর আগে ২০০১ সাল থেকেই এনজিও ব্যুরোর মাধ্যমে দাতাদের বরাদ্দকৃত ৩০০ কোটি টাকা ছাড় বন্ধ করে দেওয়া হয়। যুবদল-ছাত্রদল মিলে সারাদেশে প্রশিকার অফিস ভাংচুর করে। প্রশিকার প্রায় এক হাজার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। একই সঙ্গে ঘোষণা দেওয়া হয়, প্রশিকার ঋণের টাকা কাউকে আর ফেরত দিতে হবে না। আমাদের ওপর দ্বিতীয়বার নির্যাতনের পালা শুরু হলো। ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে তা ২০০৬ সাল পর্যন্ত চলে।

বিএনপি-জামায়াতের এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে তখন আমি হাইকোর্টে রিট করি। রিটের শুনানির দিন ধার্য হলো কিন্তু সেদিন আর শুনানি হলো না। আমি যখন হাইকোর্ট থেকে বের হচ্ছি, ডিবি পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে। প্রথমে দুটি মামলা দিয়ে আমাকে কোর্টে তোলা হয়। নিম্ন আদালত আমাকে জামিন না দিয়ে জেলে পাঠান। জেলে থাকা অবস্থায় আরো দুটি মামলায় আমাকে শোন অ্যারেস্ট দেখানো হলো। এভাবে একটি-দুটো করে ১৫টি মামলা হলো। তবে আমার আইনজীবীরা অনেক কুশলী ছিলেন। তাঁরা নিম্ন আদালতের কয়েকটি মামলা সরাসরি হাইকোর্টে নিয়ে যান।

যখন ১৫টি দুর্নীতি মামলায় আমার জামিন হয়ে গেল তখন দুটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেওয়া হয়। মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়। সৌভাগ্যবশত সেদিনই হাইকোর্ট রিমান্ড স্থগিত করে দেন।

এদিকে, ২০০৪ সালে বিএনপি সরকার প্রশিকার নামে ৪০০ কোটি টাকা ও আমার নামে ২০ কোটি টাকার ট্যাক্স ধরলো। কিন্তু একটা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের ওপর তো এভাবে ট্যাক্স ধরা যায় না!  প্রশিকা ও আমার নামে বিএনপি জামায়াতের ১৯টি ফৌজদারি মামলা হলো। আর আমার ওপর ২০ কোটি ও প্রশিকার ওপর যে ৪০০ কোটি টাকা ট্যাক্স ধার্য করা হলো, তার বিরুদ্ধে আমি হাইকোর্টে ৩৫টি আইটিআর মামলা করি।

বাংলানিউজ:  প্রশিকার বিরুদ্ধে কুচক্রী মহল কীভাবে ষড়যন্ত্র করলো? এই ষড়যন্ত্র কি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ পৃষ্ঠপোষকতায় হলো?

ড. কাজী ফারুক:  বিএনপি-জামায়াতের সময়ে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্র্যাকের ফজলে হাসান আবেদ এবং আশা-র শফিক চৌধুরী প্রশিকার বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে নামলেন। এবং এরই মধ্যে প্রশিকার ভেতরেও তিনজন ‘মীর জাফর’ তৈরি হলো। এরা হলেন গর্ভনিং বডির মেম্বার আবদুল ওয়াদুদ, মাহাবুবুল করিম ও মাসরুল ইসলাম। আমি জেলে থাকা অবস্থায় এই তিনজন গিয়ে তারেক জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেন।

আমি ২০০৪ সালের ২৬ জুলাই জেল থেকে মুক্তি পাই। প্রশিকাভবনে আমাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। কিন্তু তাঁরা তাতে যোগ দেননি। এভাবে এনজিওদের মধ্যে ওই তিনজন (ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্র্যাকের ফজলে হাসান আবেদ এবং আশা-র শফিক চৌধুরী) ও প্রশিকার ভেতরে তিন কুচক্রী চিহ্নিত হয়।

বাংলানিউজ: দাতা সংস্থার অর্থায়ন বন্ধ, বিএনপি-জামায়াত সরকারের লাগাতার হয়রানি-নিপীড়ন---এতকিছুর পরও প্রশিকাকর্মীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার কাজটা কীভাবে সম্ভব হলো?

ড. কাজী ফারুক: প্রশিকার বিশাল কর্মীবাহিনী। অথচ সব টাকা আটকে রাখা হয়েছে। ফলে কর্মীদের বেতন-ভাতা দেওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আমাদের যে ঋণ দিয়েছিল, তারাও ঋণের টাকা ছাড় করছে না। তারা ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে শর্ত আরোপ করে বলে যে, ‘প্রশিকাকে পুনঃঅর্থায়ন করা হবে যদি আমাদের ১২ কোটি টাকা দেন’।

এটা ছিলো মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। আমার জেলে থাকা অবস্থায় অফিস ভাঙচুরের কারণে আমাদের ঋণ আদায় কমে গিয়েছিল। তবে আমি জেল থেকে মুক্ত হওয়ার দুই মাসের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে।

তখন পিকেএসএফ-এর শর্ত অনুযায়ী ১২ কোটি টাকা দিয়েছিলাম। তবু তাঁরা আমাদের পুনঃঅর্থায়ন আর করেনি। এতে বুঝলাম, তারা আমাদের কাছ থেকে টাকা নিতেই থাকবে কিন্তু ঋণ আর দেবে না। এদিকে মাইক্রো ক্রেডিটের (ক্ষুদ্রঋণ) নিয়ম হচ্ছে, পুনঃঅর্থায়ন না করলে চাকা ঘুরবে না। ফলে কোনো কর্মসূচিই আমরা আর চালাতে পারব না।

তবে আমাদের কিছু আয়বর্ধক কাজ ছিলো। যেমন চারটা পোলট্রি ফার্ম ছিল, মাছের হ্যাচারি ছিল, আর ছিল পিসিএস (প্রশিকা কম্পিউটার সিস্টেম)। এসব থেকে বছরে ৯/১০ কোটি টাকা আয় হয়। যা দিয়ে অতিকষ্টে কর্মীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছিল। এরইমধ্যে অনেক কর্মী ঠিকমত বেতন-ভাতা না পেয়ে চলেও গেছেন।

আমরা এরকম একটা মুসিবতের মধ্যে পড়ে গেলাম যে, একদিকে মামলা-জেল-জুলুম, অন্যদিকে আর্থিক অবরোধ। আমরা বলেই টিকে আছি। আমি জানি না, অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান হলে টিকে থাকতে পারতো কীনা। কিন্তু এখানেই শেষ হলো না আমাদের উপর আক্রমণ।

বাংলানিউজ: খালেদা জিয়ার পদত্যাগের পর প্রশিকার উপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়েও কি নির্যাতন-নিপীড়নের ধারবাহিকতা চলছিল?

ড. কাজী ফারুক: ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর যখন খালেদা জিয়া পদত্যাগ করলেন তখন শেখ হাসিনা একটা আন্দোলনের ডাক দিলেন। বিচারপতি কে এম হাছানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার পাঁয়তারার অংশ হিসেবে আপিল বিভাগের বিচারকদের অবসরে-যাওয়ার-বয়স দুই বছর বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

এরপর আমি যেটা করলাম সেকথা বলি। একদিকে ১৪ দল আন্দোলন করছে, অপরদিকে আমি নাগরিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে নিয়ে আলাদাভাবে আন্দোলন করছি। এই আন্দোলনের ফলে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলো। ১/১১-এর প্রথম রাতে প্রশিকার একজন  পরিচালক ও এডাবের একজন পরিচালককে গ্রেফতার করা হলো। এতেই আমি বুঝে গেলাম, এরা আমাদের ওপর আরো বেশি আগ্রাসী ভূমিকায় নামবে। কেননা প্রফেসর ড. ইউনূস ও ফজলে হাসান আবেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের মনোনয়ন দিয়েছিলেন।

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়, এরপরই ডিজিএফআই আমাকে তাদের অফিসে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে ব্রিগেডিয়ার বারী কোনও রাখঢাক না করেই বলে দিলেন, আমরা শেখ হাসিনাকে কনভিক্ট করবো। আপনি কোনো প্রতিবাদ করতে পারবেন না। আপনি আমাদের মনোনীত রাজনৈতিক দলকে অর্থায়ন করবেন। পাশাপাশি আমাদের সমর্থন করে আপনাকে বক্তব্যও দিতে হবে।

জবাবে আমি বললাম,  জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আপনারা যদি ফেয়ার ও ট্রান্সপারেন্ট (স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ) বিচার

প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কনভিক্ট করতে পারেন, তবে তা আমি মেনে নেব। কোনও আপত্তি করব না। কিন্তু বিচারের নামে প্রশ্নবিদ্ধ গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে যা-যা চলছে, তাতে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন না বলেই আমার আশংকা। সেক্ষেত্রে মানবধিকারের স্বার্থেই আমাকে এর প্রতিবাদ করতে হবে। তাছাড়া আমি কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য অর্থায়ন করতে পারব না। কেননা রাজনৈতিক দলকে অর্থায়ন করার বিধান প্রশিকার গঠনতন্ত্রে নেই।

আমি তাঁকে আরও বললাম, ২ বছরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। আর ছবিযুক্ত ভোটার আইডি কার্ড করেই নির্বাচন দিতে হবে। তাহলেই কেবল আমি আপনাদের সমর্থন করবো।

এর তিনদিন পরে আমার বাড়িতে ও প্রশিকাভবনে ১০০ জন মিলে রাতভর তল্লাশি করলো। কিন্তু কিছুই না পেয়েও তিনটা মামলা দিলো। আগে করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার চার্জশিটও করে দিলো। আমি তখন জরুরি অবস্থার কারণে দেশের ভেতরেই পলাতক।

এসময়ে ওয়াদুদ, মাহাববুল ও মাসরুল--এই তিনজন অপপ্রচার শুরু করে বলে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাজী ফারুককে আর ছাড়বে না। জেলে নেবেই। এই অপপ্রচারের ফাঁদে পা দিয়ে আরো ১৫/২০ জন তাদের কূটচক্রে যোগ দিল। এভাবে তাদের শক্তি বৃদ্ধি পেল।

 

 

বাংলানিউজ: আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এলো তখন আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি পেতে, ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের কাছ থেকে প্রশিকা  কোনো সহযোগিতা পেল কি? পেয়ে থাকলে কেমন সে সহযোগিতা ?

ড. কাজী ফারুক: এরইমধ্যে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলো। ২০০৯ সালে জানুয়ারি মাসে সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমি দেখা করতে গেলাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনার সব মামলা আমরা তুলে নেব । আপনাদের ৩০০ কোটি টাকা ছাড়েরও ব্যবস্থা করা হবে ( কিন্তু বিডিআর বিদ্রোহের কারণে সে আশ্বাসটাও আর আলোর মুখ দেখলো না। )

তারপর নেত্রী বললেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দেওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাসহ অন্যান্য মামলা তুলে নেওয়া হবে। ২০১০-১১ সালের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিএনপি জামায়াতের দেওয়া ২৪টি মামলার মধ্যে ২৩টি মামলা তুলে নেওয়া হয়। সাক্ষী উপস্থিত না হওয়ায় ১টি মামলা ১২ বছর ধরে চলমান রয়েছে। ২টি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ও এনজিও ব্যুরোর দেওয়া মোট ৭টি মামলা প্রধানমন্ত্রী তুলে নেন।

বিএনপি-জামায়াতের দেওয়া অর্থনৈতিক অবরোধ আমরা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। তবে আওয়ামী লীগের সময়েও পিকেএসএফ-এর আর্থিক অবরোধ এবং বিএনপি-জামায়াতের বৈরিতা এখনও চলছে।

বাংলানিউজ: কী কারণে অর্থনৈতিক দুয়ার বন্ধ এখনও বন্ধ করে রাখা হয়েছে বলে মনে করেন?

ড. কাজী ফারুক: বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দেওয়া ২৪টি ফৌজদারি মামলায় জয়ী হলাম, কুচক্রী ওয়াদুদ-মাহাবুবুলদের দেওয়া ১৯টি মামলার মধ্যে ১৮টি তে জয়ী হলাম। একটি মামলা স্থগিত আছে। আয়কর মামলায় ৩৫টির মধ্যে ২৭টিতে জয়ী হলাম।

বিএনপি-জামায়াতসহ সংশ্লিষ্টদের কারণে আমাদের ঋণ কার্যক্রম ক্ষুন্ন হয়েছে। কিন্তু অর্থায়ন পেলে আগের বকেয়া পরিশোধ করে আবার নতুন করে, নতুন উদ্যমে চলতে পারব। এরইমধ্যে  পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান কাজী খলিকুজ্জামানের সঙ্গে আমরা দেখা করলাম। তখন তিনি বললেন, আপনাদের আর চিন্তা করতে হবে না। আমি নিজে এ-বিষয়টি দেখব। পাশাপাশি তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে বললেন। আমরা তাঁর সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাদের বললেন, আপনি ড. কাজী ফারুক যে প্রশিকার বৈধ চেয়ারম্যান সেই প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। এজন্য একটা লিগ্যাল ওপিনিয়ন (আইনি অভিমত) লাগবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক এ-বিষয়ে ওপিনিয়ন দেবেন। কিন্তু দেখা গেল, কোনো ইতিবাচক

ব্যবস্থাই আর নেওয়া হলো না। এর মধ্যে নোটিশ পেলাম আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে পিকেএসএফ।  

এরপরই আমি তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থউপদেষ্টা মশিউর রহমানের কাছে গেলাম। তাঁরা দু-জনই পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ও এমডিকে বললেন,  প্রশিকার ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নিন। মামলা করে তো আর টাকা আদায় করতে পারবেন না।

এমডি সাহেব আমাকে বললেন, বিএনপি-জামায়াতের লোকদের আমি তওবা করিয়ে ছাড়ব। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। এর ১৫ দিন পরই মামলা হয়ে গেছে বলে কোর্ট থেকে সমন এলো। আমাদের ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ২ বছর বাকি থাকতেই তারা  মামলা ঠুকে দিল। তারা দণ্ড সুদ বা দ্বিগুণ সুদ ধার্য করে বসল।

 

 

বাংলানিউজ: একটি মহল আপনাকে প্রশিকার চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিল। এ বিষয়ে কী করলেন?

ড. কাজী ফারুক:  ২০০৯ সালে ওয়াদুদ, মাহাবুবুল চক্র ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা করে বলে, প্রশিকার চেয়ারম্যান পদ থেকে ড. কাজী ফারুক আহম্মদকে সরিয়ে দিয়েছি।

আমি তখন তাঁদের নামে নিম্ন আদালতে একটি ঘোষণামূলক মামলা করি। এই মামলা থেকে হাইকোর্টে তাঁরা ৭টি মামলা আনেন এবং আমি একটি মামলা আনি। এভাবে মোট ৮টি মামলা হাইকোর্টে ওঠে। এই ৮টি মামলা থেকে আপিল বিভাগে ১১টি মামলা হলো। হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের মামলা মিলে মোট ১৯টি মামলা হলো। এগুলোর মধ্যে ১৮টি মামলায় আমি জিতেছি।  ১টি মামলা স্থগিত আছে।

বাংলানিউজ: প্রশিকা নিয়ে চক্রান্তকারী সিরাজুল ইসলাম গং-এর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবেন?

ড. কাজী ফারুক: ২০২০ সালে ওদুদ, মাহাবুবুল ও মাসরুল বিভিন্ন মামলায় পরাজিত হলেন। তখন সিরাজুল ইসলাম প্রশিকার প্রধান নির্বাহী সেজে এবং আরো কয়েকজন মিলে একজোট হয়ে প্রশিকার নাম ব্যবহার করে একটা নকল অফিস নিয়ে কার্যক্রম চালাতে থাকেন। তারা রোকেয়া ইসলামকে চেযারম্যান বানিয়ে ক্যালেন্ডার, প্যাড ও ডায়েরি ছাপিয়েছেন। নিয়মবহির্ভূতভাবে কতগুলো নীতিমালাও তারা তৈরি করেছেন। ডেসটিনি বা এমএলএম কোম্পানির মতো কিছু স্কিমও তাঁরা চালু করেছেন। যেমন, লাখ টাকা দিলে প্রতিমাসে এক হাজার টাকা মিলবে। তিন বছরে মানুষকে তাঁরা লাখপতি বানিয়ে দেবেন। যা লোক-ঠকানো বা প্রতারণামূলক। তারা প্রশিকার সুনামটা ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।  

বাংলানিউজ: বর্তমানে প্রশিকা নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আপনি কী পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছেন?

ড. কাজী ফারুক:  প্রশিকার দিক থেকে তাদের দুষ্কর্মের যতগুলো প্রমাণ আমরা পেয়েছি সবগুলোতে মামলা করেছি। সিরাজুল ইসলামের নামে ৯টি মামলা হয়েছে। মামলাগুলো প্রক্রিয়াধীন ও তদন্তাধীন রয়েছে। আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। তাঁরা বলেছেন বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যেহেতু কোর্টে মামলা হয়েছে, তাই এটা অনেক সময়সাপেক্ষ। এই ফাঁকে তাঁরা প্রচুর টাকা দেশের বাইরে পাচার করে ফেলেছেন বলে মনে করি। আমি আশঙ্কা করছি, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে তাঁরা টাকা-পয়সা নিয়ে দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে পারেন। ই-ভ্যালি বা ডেসটিনির বিষয়ে সরকার যেভাবে নিজে থেকেই ব্যবস্থা নিয়েছে, আমরা চাচ্ছি সরকার এখানেও নিজ উদ্যোগে তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।  

এবার সিরাজুল ইসলাম প্রসঙ্গে আসি। সিরাজুল ইসলামকে ২০০৯ সালে প্রশিকা থেকে দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত করা হয়। তিনি (সিরাজুল ইসলাম) নানা অনিয়ম করে যাচ্ছেন। গত কয়েক বছরে তিনি কোটি-কোটি টাকার অনিয়ম করেছেন। প্রশিকা ও আমার ইমেজ ব্যবহার করে সিরাজুল ইসলাম মিরপুরের বড়বাগে প্রশিকার নামে অফিস ভাড়া নিয়েছেন, অন্যায়ভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি-কোটি টাকা তুলছেন।

আমার আশংকা, বিপুল অংকের সেই অর্থ নিয়ে সিরাজুল ইসলাম একদিন দেশ ছেড়ে পালাবেন। তখন এই যে কোটি-কোটি টাকার দায়, এটা আমার ঘাড়েই এসে পড়বে। আর মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির শিকার হবেন সাধারণ জনগণ। এজন্য সরকারের কাছে আমার বিনীত আবেদন, অতিদ্রুত সিরাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করে, আইনের আওতায় এনে আত্মসাৎ করা টাকা আদায় করে তা জনগণকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।

 

 

বাংলানিউজ: আপনার নেতৃত্বে প্রশিকা যাতে নতুন উদ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সেজন্য সরকারের কাছে আপনার চাওয়া কী?

ড. কাজী ফারুক:  ৩০ বছর ধরে আমাদের ওপর লাগাতার হামলা-আক্রমণ, দমন-পীড়ন হয়েছে। এর মধ্য ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়ত দুইবার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার একবার এবং আমাদের ভেতরের কুচক্রী মহল দ্বারা বারবার, বহুবার। এই ৩০ বছর ধরে আমরা দেশ-মাটি-মানুষের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করে গেছি। মামলাতেও জিতেছি। হাইকোর্টে-সুপ্রিম কোর্টে সব মিলিয়ে ৭৯টি মামলা হয়েছে। ৭০টিতে আমরা জিতেছি। আর ৯টি মামলা স্থগিত আছে।

এখন আমরা প্রস্তুত হচ্ছি আমাদের আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার জন্য। আমরা  মানবসেবায় যে অবদান রেখেছি, সেটার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রশিকাকে আবার শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে হবে।

অতীতে, বিএনপি-জামায়াতের পুরোটা সময়ে অর্থনৈতিক অবরোধ বজায় ছিল। বর্তমানে যে চক্রটি প্রশিকার সম্পদ লুন্ঠন করে চলেছে তারাও সেই একই কাজই করছে। তাই আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের কাছে সুবিচার চাইছি। সাধারণ জন-মানুষের জন্য, প্রশিকার জনবান্ধব কর্মসূচি সচল করার জন্য এবং জাতীয় বিকাশের জন্যই এটা আমি চাইছি। প্রশিকার জনবান্ধব কর্মসূচিতে নারী ও শিশুদের জন্য ইতিবাচক উদ্যোগ থাকবে, যা দেশের সমৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। মানুষের বিকাশ সাধনে জোরালো ভূমিকা রাখবে। জনগণের স্বার্থে, হতদরিদ্র মানুষের হিতসাধনের স্বার্থে, নারীর বিকাশ ও উন্নয়নের স্বার্থে সরকার যেন প্রশিকার পাশে এসে দাঁড়ায়, প্রশিকার পাশে থাকে। পিকেএসএফ-এর মিথ্যা মামলাগুলো তুলে নিয়ে প্রশিকাকে অর্থায়ন করা হোক। এজন্য আমি বলব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিলেই হয়ে যাবে।  

প্রশিকা যেন আবার নতুন করে মানুষের জন্য কাজ করতে পারে সেজন্য বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বপ্নদ্রষ্টা, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ কামনা করছি। তিনি যদি এ বিষয়ে উদ্যোগ নেন তাহলে  এতে শুধু প্রশিকাই লাভবান হবে না, বরং তাঁর নিজের ভিশন বা রূপকল্পকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রেও তা সহায়ক হবে। তিনি এ বিষয়ে দ্রুত সদয় উদ্যোগ নেবেন—-আমরা এ-আশায় বুক বেঁধে আছি।

(তিন পর্বের ধারাবাহিক সাক্ষাৎকারটি এখানেই শেষ হলো)

আরও পড়ুন
প্রথম পর্ব:
প্রশিকা চেয়ারম্যান ড. কাজী ফারুকের সঙ্গে একটি সন্ধ্যা
দ্বিতীয় পর্ব: আগামী ১০ বছরে প্রতিটি গ্রামে অর্গানিক কৃষির প্রচলন করব, সরকারকে পাশে চাই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।