ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সাক্ষাৎকার

সবক্ষেত্রে ডাকাতি বন্ধ করতে ‘মুক্তি মঞ্চ’: অলি আহমদ

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৯
সবক্ষেত্রে ডাকাতি বন্ধ করতে ‘মুক্তি মঞ্চ’: অলি আহমদ কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ।

ঢাকা: বিএনপির নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে আছে ২০ দলীয় জোট। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে এই জোটের বাইরে গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ কয়েকটি দল নিয়ে বিএনপি গঠন করে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’।

বিএনপি ঐক্যফ্রন্টভুক্ত হয়ে নির্বাচন করে। অন্যদিকে তাদের আগের জোটের শরিকরা ভোটে যায় ২০ দলীয় জোটগতভাবে।

নির্বাচনের আগে-পরে দুই জোটই খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে। নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ করে প্রথম দিকে ফল প্রত্যাখ্যানও করে তারা। তবে পরে দুই জোট থেকেই নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেয়। ভোটের আগে-পরে দুই জোটই আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিলেও এ পর্যন্ত তেমন জোরদার কোনো কর্মসূচিই দেখা যায়নি।  

এরমধ্যেই জুনের শেষ দিকে বিএনপি জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) গঠন করে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামে আরেকটি জোট। কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন দলের এ জোটে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা, খেলাফত মজলিস এবং ন্যাশনাল মুভমেন্টকেও দেখা যায়। কী উদ্দেশ্য এই ‘‍মুক্তি মঞ্চ’ গঠনের, কী করতে চায় অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এ জোট। এ নিয়ে রাজধানীতে ডিওএইচএসের নিজ বাসায় বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক, সাবেক মন্ত্রী ও নবগটিত প্লাটপর্ম ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’র আহ্বায়ক অলি আহমদ।
 
বাংলানিউজ: আপনারা বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলে আছেন। আবার বিএনপি আছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ দু’টি জোট থাকার পরও ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ কেন গঠন করলেন?
 
অলি আহমদ: তারিখটা আমার মনে নেই। ২০ দলীয় জোটের এক সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘যার যার অবস্থান থেকে যেভাবে পারেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কর্মসূচি দেন। তাতে করে ২০ দল উপকৃত হবে। একটার বদলে একাধিক কর্মসূচি পালন করা হবে’। তার ওই কথা চিন্তা করেই ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’র আত্মপ্রকাশ। এর মূল লক্ষ্য হলো সমগ্র জাতিকে বর্তমান অবস্থা থেকে মুক্ত করা। বড় দু’টি দাবি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তি এবং পুনরায় জাতীয় সংসদের নির্বাচন। এই দু’টি দফাকে বিচার-বিশ্লেষণ করে ১৮ দফায় রূপান্তরিত করে গত ২৭ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ ঘোষণা করি। অনেক রাজনৈতিক দল ও নেতা আমাদের আমন্ত্রণে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’র বিভিন্ন সভায় উপস্থিত হয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ জাতির উদ্দেশে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে দেশের বাস্তব অবস্থার ব্যাপারে জনমত সৃষ্টি করে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং পুনর্নির্বাচনের দাবি ত্বরান্বিত করতে চাই। সর্বোপরি দেশের মানুষকে বর্তমান অবস্থা থেকে মুক্তি দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।  
বাংলানিউজ: মুক্তি মঞ্চ গঠন করে কেমন সাড়া পেয়েছেন?
 
অলি আহমদ: ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ ইতোমধ্যে সবার গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। কারণ এই মঞ্চে দুর্নীতিবাজ, ধান্দাবাজ, চোরাকারবারি, মাদক কারবারি জড়িত হতে পারেনি। এ ব্যাপারে আমরা খুব সজাগ। দেশবাসীকে পরিচ্ছন্ন এবং জবাবদিহিমূলক রাজনীতি দিতে চাই। বর্তমানে দেশে আদালত আছে, বিচার নেই। বন্যা আছে, ত্রাণ নেই। ডেঙ্গুজ্বর হচ্ছে, চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। ব্যাংক আছে, টাকা নেই। জনগণ কোরবানি দিয়েছে, চামড়া বিক্রি করতে পারেনি। দেশ এখন দেউলিয়াপনায় আক্রান্ত। সুশাসন এবং জবাবদিহি নেই। কোনো বিষয়ে জনগণের প্রতিকার পাওয়ার উপায় নেই। গণতন্ত্র কাগজে আছে, বাস্তবে নেই। দিনের পরিবর্তে রাতের অন্ধকারে নির্বাচন হয়। ব্যাংকের ঋণখেলাপিদের ভিআইপি মর্যাদা দেওয়া হয়। থানার ওসিরা দেশ নিয়ন্ত্রণ করছে। নির্বাচনের সময় তা-ই লক্ষ্য করেছি। জনগণ কি বোকা না বধির তা বোঝার উপায় নেই। এ অবস্থার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’র অন্যতম লক্ষ্য হলো জনগণ যেন স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ পায়। জনগণের ক্ষমতা নিশ্চিত করা, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া। সবক্ষেত্রে ডাকাতি চিরতরে বন্ধ করা। ইনশাআল্লাহ আমরা সেটা করবো। কে এলো কে না এলো সেটা দেখার বিষয় নয়।

বাংলানিউজ: আপনি ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক, জোটের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলুন।

অলি আহমদ: ২০ দলীয় জোট পুরোনো অবস্থানে আছে। তবে আমাদের যেভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার কথা, বিভিন্ন কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে আগস্ট মাসকে শোকের মাস হিসেবে বলা হচ্ছে। সুতরাং আমরা সুস্থ নাগরিক হিসেবে কর্মসূচি নিতে পারছি না। যে যা বলুক না কেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিজ নিজ স্থানে মহিমান্বিত। দেশের জন্য তাদের অনেক আত্মত্যাগ রয়েছে। মানুষ হিসেবে আমরা কেউ আলোচনা-সমালোচনার ঊর্ধ্বে নই। রাজনীতিক হিসেবে সবসময় আমাদের ধৈর্যশীল হতে হয়। জবাবদিহি করতে হয়, জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। যা বর্তমানে অনুপস্থিত। যেটা দেশের জন্য সুখকর নয়।
 
বাংলানিউজ: আপনিতো আগস্ট মাসের কথা বললেন, কিন্তু আমরা দেখছি দীর্ঘদিন যাবত ২০ দলীয় জোটের কোনো কর্মকাণ্ড নেই।
 
অলি আহমদ: এটা ঠিক যে এক বছরের উর্ধ্বে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান অফিসের বাইরে ২০ দলীয় জোটের কোনো কর্মকাণ্ড ছিল না। নিঃসন্দেহে এতে অনেকে হতাশ। বড় দল হিসেবে বিএনপিকে এর দায়িত্ব নিতে হবে। বিএনপি ২০ দলের কাণ্ডারি। তাদের ইচ্ছায় সব হয়। এখানে ছোটদলের ভূমিকা নেই বললেই চলে।
 
বাংলানিউজ: তাহলে ২০ দলকে বিএনপি ইন-অ্যাকটিভ (নিষ্ক্রিয়) করে রেখেছে এটা বলা যায়?
 
অলি আহমদ: ইন-অ্যাকটিভ বলবো না। তাদের হয়তো বাধ্যবাধকতা ও দলের অভ্যন্তরে অসামঞ্জস্য থাকতে পারে। চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে বলতে গেলে গভীর সমুদ্রে ক্যাপ্টেনবিহীন জাহাজ চলছে।
 
বাংলানিউজ: যদিও আপনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে নেই, তবু বাইরে থেকে একজন দর্শক হিসেবে বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কি এখনো আছে?
 
অলি আহমদ: কাগজে কলমে আছে। তবে বাস্তবে কতটুকু আছে সেটা বলা মুশকিল। তাদের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমি জড়িত নই। সুতরাং না জেনে না শুনে তাদের সম্পর্কে মন্তব্য করা সমীচীন নয়।
 
বাংলানিউজ: খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে বিএনপি কি ব্যর্থ?

অলি আহমদ: বিএনপি একটি পৃথক রাজনৈতিক দল। এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তাদের ভালো-মন্দ তারা বুঝবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৯
এমএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।