ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সাক্ষাৎকার

মেয়রের ইন্টারভিউ

বানারীপাড়া হবে উন্নয়নের রোল মডেল

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৬
বানারীপাড়া হবে উন্নয়নের রোল মডেল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বরিশাল: বরিশালের সন্ধ্যা নদী তীরবর্তী এলাকায় বানারীপাড়া পৌরসভা। এ পৌরসভার প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা ও অনুন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা।

এসব সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে এ জনপদের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে পৌরবাসীকে আলোকিত বানারীপাড়ায় উপহার দেওয়াই একমাত্র লক্ষ্য সদ্য নির্বাচিত পৌর মেয়রের।

সম্প্রতি পৌরসভার উন্নয়ন এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন  বিষয়ে বাংলানিউজের কথা হয় বানারীপাড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীলের সঙ্গে।

আলাপচারিতার শুরুতেই উন্নয়ন পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে নির্বাচন করার ইচ্ছে এই মুহূর্তে নেই। তাই যতটা পারি উন্নয়ন কাজ করে মানুষের মনের মধ্যে জায়গা করে নিতে। যাতে পৌরবাসী ভালোভাবে আমাকে স্মরণ রাখে। তবে কাজ করতে গেলে কারো ভালো লাগবে, আরো কারো চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়াবো, এটাই স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, বানারীপাড়া পৌরসভায় ঐতিহ্যবাহী একটি বৃহৎ বাজার রয়েছে। যে বাজারে বহু ব্যবসায়ী রয়েছে। নদী তীরবর্তী এ বাজারে ব্যবসার উন্নয়ন ঘটলেও এখানে সার্বিক উন্নয়ন ঘটেনি। এ বাজারে আগুন লাগলে তা নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভেতরে যেতে পারেনা। একটি গাড়ি সড়ক দিয়ে ঢুকলে অপরদিক থেকে গাড়ি আসতে পারেনা।

তাই ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে পৌর এলাকার ভেতর দক্ষিণ দিক থেকে নদী সংলগ্ন উত্তর পাড় পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের চিন্তাভাবনা রয়েছে। যে সড়ক দিয়ে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য ভারী যানবাহনের সহায়তায় আনা-নেওয়া করতে পারবে। এমনকি বাজারের চারপাশ থেকে সড়ক ব্যবস্থা জোরদার হবে। আর সড়কটি নদী তীরবর্তী হওয়ায় শহর রক্ষা বাঁধের কাজও করবে। আবার ভ্রমণপিপাসু ও নগরবাসীর বিনোদনের জায়গাও হবে। পাশাপাশি উত্তরপাড় সরকারি জমিকে শিশু পার্কও নির্মাণ করা সম্ভব।

তবে উত্তরপাড়ে পরিকল্পিতভাবে ঈদগাহ, শিশুপার্ক, শ্মশান, কবরস্থান, আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, বানারীপাড়ায় একটি বৃহৎ সমস্যা জলাবদ্ধতা। এক্ষেত্রে সরকারি খাল যেগুলো রয়েছে সেগুলো পুনরুদ্ধার ও খনন করা প্রয়োজন। কারণ বানারীপাড়া পৌরসভা সন্ধ্যা নদী তীরবর্তী এলাকায় অবস্থিত।

এই মনে করেন, বানারীপাড়া হাসপাতালের পেছন থেকে একটি খাল রয়েছে। যে খালটি অনেকে বিভিন্ন স্থান থেকে ভরাট করে ফেলেছে বা শুকিয়ে গেছে। যা খনন করে স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনলে পৌরএলাকার জলাবদ্ধতা কিছুটা কমবে। তবে বেশি সুবিধা পাবেন আশপাশের ইউনিয়নের মানুষ। কারণ বর্তমানে যারা বিভিন্ন পরিবহনে ঝই-ঝামেলা করে রোগী নিয়ে আসেন তারা সরাসরি নৌ-পথে রোগী নিয়ে হাসপাতালে আসতে পারবেন।

তবে এসব কাজসহ পৌরসভা ও পৌরবাসীর উন্নয়নে কাজ করতে গেলে জনগণকে আমার সঙ্গে থাকতে হবে।

পৌর মেয়র বলেন, যে পরিমাণ মানুষ আমার হয়ে নির্বাচনে কাজ করছেন, ভোট চেয়েছেন, ভোট দিয়েছেন তাদের সবার মন রক্ষা করাটা খুব কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়াবে আমার জন্য।

তারপরেও এ পৌরসভাকে রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার ইউনুস এ বিষয়ে সহায়তা করবেন। এছাড়াও পৌরবাসী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা আমাকে সহায়তা করবেন বলেও আমার প্রত্যাশা।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ডিজিটাল ও আধুনিক প্রযুক্তির ছোয়া বানারীপাড়াবাসীর মধ্যে এসে গেছে। এসব ক্ষেত্রকে আরো এগিয়ে নিয়ে সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করবো।

বানারীপাড়া পৌর এলাকার রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ, সাপ্লাই, স্যানিটেশন ব্যবস্থায় উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হবে।

সুভাষ চন্দ্র শীলের বলেন, নগরীর শোভা বর্ধনে কিছু কাজ করারও ইচ্ছে রয়েছে।

মেয়র বলেন, বেকার যুব সমাজের কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। এক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে কিছু করার নেই, তবে পৌর মেয়র হিসেব ন্যাশনাল সার্ভিসসহ বেকারত্ব দূরীকরণে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে যুব সমাজের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করা যেতে পারে।

তবে জাতিকে যতো বেশি সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করা সম্ভব ততো বেশি বেকারত্ব লাঘব হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নে সরকারের সব অগ্রণী পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সহায়তা করবো। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবকাঠামোগত ও দৃশ্যমান কাজগুলো করা প্রয়োজন সেগুলো করবো।

আগামীদিনের ভবিষ্যত যুব সমাজকে মাদকের কালো হাতের ছোবল গ্রাস করে নিচ্ছে। এলাকা ভিত্তিক মাদকের সোর্স শনাক্ত করা, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনকে এসব বিষয়ে সহায়তা করা, যার ফলে দোষীরা আইনের আওতায় আসতে পারে। তবে মাদকের ক্ষতিকর বিষয়গুলো স্থানীয়দের মধ্যে তুলে ধরে জনসচেতনা বাড়ানোর বিষয়ে উদ্যোগী হওয়াটা জরুরি।

তিনি বলেন, এসব কিছু থেকে দূরে রাখতে মাঠ পর্যায়ে খেলাধুলা, শিক্ষা সফর, নিয়মিত সাংস্কৃতিক চর্চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এসব ক্ষেত্রে মেয়র হিসেবে সর্বোচ্চ সহযোগীতা করা হবে।

শিশুদের জন্য শিশুপার্ক নির্মাণ করা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে বিকশিত করার লক্ষ্যে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। আর পৌর এলাকার খেলার মাঠগুলো সংস্কার ও পুনরুদ্ধারের বিষয়টিতো থাকছেই।

দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য পৌরসভার পৃথকভাবে তেমন কিছু করার থাকেনা, তবে রাষ্ট্রীয় যেসব উদ্যোগ রয়েছে তা যাতে সদভাবে ব্যবহার হয় সেটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করবো।

দুর্নীতি একটি বড় ধরনের সমস্যা, তবে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো অন্তত আমার আমলে পৌরসভায় যাতে কোনো দুর্নীতি না হয়। সব কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা রাখা হবে।

বানারীপাড়া পৌরসভার উত্তরপাড়ের বাসিন্দা মৃত নরেন্দ্র ভূষন শীলের ছেলে সুভাষ চন্দ্র শীল। চারভাই এক বোনের মধ্যে ছোট তিনি এবং পারিবারিক জীবনে তার ২ মেয়ে রয়েছে।

পৌর মেয়র সুভাশ চন্দ্র শীল ১৯৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে আইনজীবী, ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পাশাপাশি জড়িত রয়েছে সংস্কৃতি অঙ্গনের সঙ্গে।

১৯৬৯ সালে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হন। এরআগে ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের আন্দোলন তাকে অনুপ্রাণিত করে।

১৯৮৪ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ৯০’র সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক। ২০১২ সালে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ লাভ করেন।

তিনি শিক্ষাজীবনে বানারীপাড়া হাইস্কুল, চাখার কলেজ, বিএম কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও ল’কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং বানারীপাড়ার বেশ কিছু স্কুল কলেজের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন এবং করছেন।

পৌরসভা নির্বাচনে বানারীপাড়ায় তিন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সুভাষ চন্দ্র শীল (নৌকা) প্রতীক নিয়ে ৫ হাজার ৩৫৫ ভোট, বিএনপির প্রার্থী গোলাম মাহামুদ (ধানের শীষ) প্রতীক নিয়ে ৪৪৩ ভোট, ইসলামী আন্দোলন জলিস মাহামুদ মৃধা (হাতপাখা) প্রতীক নিয়ে ১২২ ভোট পান।

বানারীপাড়া পৌরসভায় মোট ভোটার ৭ হাজার ৫৪৩ জনের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ হাজার ৮৩৯ জন ও মহিলা ভোটার ৩ হাজার ৭০৪ জন।

এ পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একজন করে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও তারা দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচনের আগে মনোনায়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৬
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।