ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

গাজার হাঁস-মুরগি-কুকুরগুলোও মানুষের মতো ক্ষুধার্ত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৩
গাজার হাঁস-মুরগি-কুকুরগুলোও মানুষের মতো ক্ষুধার্ত

চারদিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর কিছু ফিলিস্তিনি গাজা উপত্যকার মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে তাদের ঘর-বাড়ি দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল শুধুই ধ্বংসাবশেষ।

তারা খোঁজ করছিলেন পৈতৃক ভিটার, নিজের তৈরি ঘরের। কিন্তু কিছুই যে আর আগের মতো নেই! ভেঙেচুরে একাকার সব। গাজায় কোনো ভবন আর দাঁড়িয়ে নেই।

শনিবার (২৫ নভেম্বর) আল জাজিরা সাংবাদিক হিশাম জাকাউট মধ্য গাজার বুরেজ শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। তার আগে গাজা উপত্যকার কিছু এলাকাও ঘুরে দেখেন তিনি। সেখান থেকে ফিরে নিজের সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন লেখেন তিনি। যেটির সূচনায় ওপরের কথাগুলো লেখেন।

হিশাম ওই শরণার্থী শিবিরের কিছু লোকের সঙ্গে কথা বলেন। তারা জানান, বুরেজে তারা যেসব এলাকা থেকে এসেছেন, সেখানে অবশিষ্ট বলতে কিছু দেখেননি। যুদ্ধবিরতির সুযোগে তারা নিজেদের সম্পদ দেখতে গিয়েছিলেন। যেখানে তাদের বাড়ি-ঘর, বিভিন্ন ভবন দাঁড়িয়ে ছিল, সেগুলো ধূলিকণায় পরিণত হয়েছে।

প্রবীণ এক ফিলিস্তিনি নারী হিশামকে বলেছেন, আমি রাস্তায় কিছু কুকুর, হাঁস-মুরগিকে চলাফেরা করতে দেখেছি। তারাও মানুষের মতো ক্ষুধার্ত। আমাদের বাড়িটা ধ্বংস হয়ে গেছে, কিছুই অবশিষ্ট নেই। ইসরায়েলিরা আমাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। এটা তো যুদ্ধ নয়, নজিরবিহীন অপরাধ।

হিশাম তার প্রতিবেদনে লিখেছেন, অক্টোবর মাস থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ক্রমাগত ও তীব্র গোলাগুলির কারণে বুরেজ ক্যাম্পের অনেক বাসিন্দা আরও পশ্চিমে অর্থাৎ নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ফিরে এসে তারা দেখতে পেলেন, তাদের বাড়িঘর মাটিতে পড়ে আছে। কিছু মৃতদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। ওই প্রবীণ নারী আমাকে বলেছেন, আগ্রাসনের মাঝেও সময় পেলে তিনি তার পৈতৃক ও স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পদ দেখতে আসতেন।

তিনি আমাকে আরও বলেন, আমি গবাদিপশু ও মুরগি পালতাম। বাধ্য হয়ে সবকিছু ছেড়ে আমাকে যেতে হয়েছিল। তারপরও আমি মাঝে মাঝে বুরেজে আসতাম। এটি খুব বিপজ্জনক ছিল; কিন্তু আমার পোষ্যগুলোকে পরীক্ষা করতেই হতো। আমি ভয় পেতাম না যদি আমার নিয়তি হয় হত্যা- আমি মরবো। আমার জীবন জায়োনিস্টদের হাতে নেই।

দক্ষিণ গাজার খুজা এলাকায় বসবাসকারী এক ফিলিস্তিনি জানিয়েছেন, তিনি উত্তর শহর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে এখানে এসেছেন। নিজ সম্পদ দেখতে তিনি উত্তরে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানকার পরিস্থিতি দেখে তিনি হতবাক। হিশামকে তিনি বলেছেন, ধ্বংসলীলা এতটাই ব্যাপক, ভাবতেই চোখে পানি চলে আসে। আমি শুধু বলতে পারি, আল্লাহ-তায়ালাই আমার জন্য যথেষ্ট।

বুরেজে থেকে নুসিরাতে ফেরাদের কয়েকজন আশা করছেন কাতারের মধ্যস্থতায় হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির চুক্তি ‘চিরকাল স্থায়ী হতে পারে’। এক যুবক আল জাজিরাকে বুরেজে অকল্পনীয় ধ্বংসের কথা বলেছেন। তার ভাষ্য, সত্যি, আমি কখনোই ধ্বংসের মাত্রা কল্পনা করিনি। যা ঘটে গেছে, তার ১ শতাংশও নয়।

আমার বাড়িতে গোলাগুলি হয়েছিল। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আর বসবাসের উপযুক্ত নয়। বাড়িটি পুনর্নির্মাণ করা আবশ্যক।

আপনি কি আবার সেখানে বসবাসের আশা করেন? হিশাম জাকাউটের এমন প্রশ্নের উত্তরে যুবক বলেন, জাতিসংঘের স্কুলগুলোয় অপমানিত হওয়ার চেয়ে আমি আমার দেয়াল ছাড়া বাড়িতে খোলা আকাশের নিচে থাকতেই পছন্দ করবো। আমরা সমুদ্রের নোনা জল পান করি, ভেবে নিই এটি মিষ্টি পানি। তা ছাড়া আমরা আর কি-ই বা করতে পারি।

গত ৭ নভেম্বর হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর কিছুটা থমকে যায় ইসরায়েল। নিজেদের সামলে নিয়ে কিছু সময় পর তারা বিরতীহীনভাবে গাজায় আগ্রাসন চালায়। বিমান হামলা, বোমা হামলা, গুলি; ফিলিস্তিনের মানুষ নিদ্রাহীন রাত পার করছিল। হাজার হাজার ফিলিস্তিনি জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু তারা নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারছিলেন না। এমনটি স্কুলগুলোও তাদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। আশ্রয় নেওয়াদের লক্ষ্য করে লাগাতার বিমান হামলায় কয়েক ডজন বেসামরিক নিহত হন।

গতকাল শুক্রবার থেকে আগামী সোমবার- চারদিন হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চলবে। এ সময়ের মধ্যে হামাস কর্তৃক জিম্মি ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক এবং ইসরায়েল কর্তৃক বন্দি বহু ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এ যুদ্ধবিরতি আরও সম্প্রসারিত হতে পারে বলে এর মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অভিযান সমাপ্তে রাজি নয় ইসরায়েল। দেশটির পশ্চিমা মিত্ররাও এতে সমর্থন করছে না।

এদিকে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে যতদিন অটল থাকবে তার সংগঠনও ততদিন এটি মেনে যাবে। কিন্তু গাজার লোকজন এখন চান, যেন আর যুদ্ধ না হয়। বছর পঁচিশের এক যুবক আল জাজিরাকে বলেছেন, আমরা শুধু চারদিন নয়, চির শান্তি কামনা করি। লোকেরা অনেক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গেছে এবং এখনও ভুগছে। আমি আশা করি যুদ্ধবিরতি চিরকাল স্থায়ী হতে পারে। কেন? কারণ আমরা ক্লান্ত, আমরা এই ধরনের জীবন যাপনে খুব ক্লান্ত।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।