ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

আমরা মৃত্যু থেকে কয়েক মিনিট দূরে দাঁড়িয়ে: আল শিফা পরিচালক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৩
আমরা মৃত্যু থেকে কয়েক মিনিট দূরে দাঁড়িয়ে: আল শিফা পরিচালক

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার সর্ববৃহৎ হাসপাতাল আল-শিফায় ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ হামলার পর সেখানকার পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ হয়ে পড়েছে। হামলায় বহু মানুষ হতাহত হয়েছে।

হাসপাতালের পরিচালক মুহাম্মদ আবু সালমিয়ার বলেছেন, তার নার্স, কর্মীবাহিনী, রোগী ও তাদের স্বজনরা মৃত্যু থেকে কয়েক মিনিট দূরে অবস্থান করছেন।

শনিবার (১১ নভেম্বর) আল জাজিরার লাইভ আপডেট থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।

মুহাম্মদ আবু সালমিয়ার বলেছেন, আমি শুধু বলতে পারি আমরা প্রাণ হারাতে শুরু করেছি। রোগীরা মুহূর্তের মধ্যে মারা যাচ্ছে। আমরা মৃত্যু থেকে মাত্র কয়েক মিনিট দূরে। অসুস্থ-আহতরা এমনকি ইনকিউবেটরে থাকা শিশুরাও মারা যাচ্ছে।

ইনকিউবেটরে থাকা এক শিশুকে ইতোমধ্যে আমরা হারিয়েছে। নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে থাকা এক যুবকও জীবন থেকে ছুটি নিয়েছেন। হাসপাতালের আঙিনা ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি ভবনকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। হাসপাতালে থাকা যেকোনো ব্যক্তি লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন। ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী হাসপাতালের বাইরে অবস্থান করছে, কাউকে নড়াচড়া করতে দিচ্ছে না।

হাসপাতাল আল-শিফার পরিচালক আরও বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী আমাদের মেডিকেল ক্রুর এক সদস্যকে গুলি করে হত্যা করেছে। নিহত হওয়ার আগে তিনি হাসপাতালে জন্ম নেওয়া শিশুদের সাহায্যে ইনকিউবেটরে কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাকে গুলি করা হয়েছে। ইসরায়েলি স্নাইপার বন্দুকের গুলিতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। হাসপাতালে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, পানি নেই। কেউ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। আমরা পুরো পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আছি। আমরা সারা বিশ্বে অনেক বার্তা পাঠিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।

পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। আমরা কিছু লোককে শিফা থেকে সরিয়ে দিয়েছি। এ জায়গা থাকার জন্য এখন আর নিরাপদ নয়। আমাদের কিছু কর্মী হাসপাতালে আছেন। তারা তাদের চেষ্টা করে যাচ্ছেন সেবা-সহায়তার জন্য।

ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস সামে একটি সংগঠনের হয়ে কাজ করেন শিশু চিকিৎসক তানিয়া হজ হাসান। লন্ডন থেকে তিনি গাজার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে চাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, আমি আসলে কোনো কথা ভাবতে পারছি না। আমার কাছে শব্দ বা বাক্য নেই। কয়েক সপ্তাহ হয়ে গেছে আমরা মানবিক বিপর্যয়ের বিষয়ে সতর্ক করেই যাচ্ছি। প্রতিদিন আমরা এ পরিস্থিতি নিরসনে ফোন কল করছি। আমরা এ ব্যাপারে আরও বেশি মরিয়া। আমরা কি আদৌ এই পৃথিবীতে আমরা বাস করছি?

তানিয়া আরও বলেন, হাজার হাজার মানুষ ‘খুব সংকটজনক অবস্থায়’ হাসপাতালে আসছে। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ করছি! আমি আন্তর্জাতিক চিকিৎসক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ করছি যারা এটি শুনছেন। দয়া করে উঠে দাঁড়ান।

আল শিফা হাসপাতালের বাজে পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির মধ্য ও নিকটপ্রাচ্যের আঞ্চলিক প্রধান ফ্যাব্রিজিও কার্বোনিও। তিনি বলেন,  বলেছেন, আল শিফা হাসপাতাল ‘এভাবে চলতে পারে না’। হাজার হাজার আহত, বাস্তুচ্যুত মানুষ ও চিকিৎসা কর্মীরা ঝুঁকিতে আছেন। তাদের যুদ্ধের আইনের সাথে সঙ্গতি রেখে সুরক্ষিত করা দরকার।

মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্স-এ তিনি লিখেছেন, গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল থেকে আসা তথ্য বলছে, সেখানে খাবার-পানি ও বিদ্যুৎ নেই। দুঃখজনক।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাই আল-কাইলা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ফসফরাস ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলিরা আল শিফায় সাদা ফসফরাস ব্যবহার করেছে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ অস্ত্র। আমরা ভাবছি যে সাদা ফসফরাস দিয়ে আল শিফায় হামলার জন্য ইসরায়েলকে কে দায়ী করবে।

রামাল্লায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে। ‘অনিবার্য মৃত্যু’ গাজার হাসপাতালে থাকা রোগীদের ভাগ্যে পরিণত হয়েছে। আমরা এ জন্য ইসরাইল, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়ী করি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।