ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল বাস্তবায়নে চুক্তি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১
তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল বাস্তবায়নে চুক্তি

ঢাকা: দেশের তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বহুল প্রত্যাশিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সি-মি-উই-৬ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড মেইটেনেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট এবং কনসোর্টিয়ামের সরবরাহকারীদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিক এই কার্যক্রম শুরু হলো।

ডাক ও টেলিযোগাযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে এ চুক্তি স্বাক্ষর উপলক্ষে ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দেশে ডিজিটাল সংযুক্তি বিকাশের অনন্য এ কার্যক্রমের শুভযাত্রা ঘোষণা করেন।

মন্ত্রী জানান, ২০২৪ সালের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটি চালু হবে। এর ফলে দেশে ডিজিটাল সংযুক্তি বিকাশে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে।

তিনি বলেন, আগামী দিনে ডিজিটাল সংযুক্তির বর্ধিত চাহিদা পূরণের মাধ্যমে ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে সি-মি-উই-৬ নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ স্থাপনে অভাবনীয় অবদান রাখবে।

বিএসসিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন, বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং সি-মি-উই-৬ প্রকল্পের পরিচালক কামাল আহমেদ বক্তব্য দেন।  

ডাক ও টেলিযোগাযোগাযোগ মন্ত্রী সাবমেরিন ক্যাবলকে দেশের অত্যন্ত অপরিহার্য টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো উল্লেখ করে বলেন, বিনামাশুলে ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে তৎকালীন সরকার বাংলাদেশকে ১৪ বছর তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়া থেকে পিছিয়ে রাখে। ২০০৮ সালে ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির হাত ধরে সেই পশ্চাদপদতা অতিক্রমই বাংলাদেশ কেবল করেনি বরং হাওর, দ্বীপ, চরাঞ্চল ও দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলসহ দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশে ২০০৮ সালে মাত্র ৮ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহৃত হতো এবং ব্যবহারকারী ছিল মাত্র ৭ লাখ। বর্তমানে দেশে ১১ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং ২৭০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইদথ ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযুক্তি ডিজিটাল প্রযুক্তি দুনিয়ায় বাংলাদেশের আরো একটি ঐতিহাসিক অর্জন।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বাংলাদেশ প্রবেশ করেছিল আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংযুক্তির যুগে। বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ছাড়াও আইটিইউ, ইউপিইউের সদস্যপদ এবং টিঅ্যান্ডটি বোর্ড প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বাংলাদেশের বীজ বপন করে গেছেন।

মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ, ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালু এবং তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগে নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সফলতা তুলে ধরে মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২০১৯ সাল থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের তিনটি প্রস্তাবকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে একনেক সভায় তা অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারির কারণে কনসোর্টিয়াম কর্তৃক সরবরাহকারী নির্বাচনে বেশ বিলম্ব হয়। ফলে গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কনসোর্টিয়ামের প্রস্তাবিত কার্যাবলি চালু করার পরিকল্পনা থাকলেও তা পিছিয়ে ২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে নির্ধারণ করা হয়।

ডাক ও টেলিযোগাযোগাযোগ বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সাবমেরিন কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। কনসোর্টিয়ামের সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহ স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিজ নিজ দেশ থেকে অনুরূপ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে কনসোর্টিয়ামের  অস্থায়ী সদর দপ্তর সিংগাপুরে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাঠাবেন।

বিসিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, ২০১৭ সালের প্রথম প্রান্তিকে বিএসসিসিএল কুয়াকাটায় দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল চালু করে। এই ক্যাবলটির সক্ষমতা প্রথম ক্যাবলটি হতে অনেক বেশি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দ্বায়িত্ব নেওয়ার পরপরই মোস্তাফা জব্বার স্যার আমাকে বলেন যে, দেশে যেভাবে ব্রডব্যান্ড সেবার প্রসার হচ্ছে তাতে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সক্ষমতাও দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। এই কথা বলে তিনি আমাকে দ্রুত তৃতীয় একটি সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে সংযোগের উদ্যোগ নিতে বলেন। তিনি জানান, আজ দেশে ২৭০০ জিবিপিএসেরও বেশি আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ ব্যবহৃত হচ্ছে, যার মধ্যে বিএসসিসিএল একাই সরবরাহ করছে প্রায় ১৬৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ।

২০০৬ সালের প্রথমার্ধে দেশে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল কমিশনিং করা হয়। ২০২৪ সাল নাগাদ দেশে ৬০০০ জিবিপিএস-এরও বেশি আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথের প্রয়োজন হবে। ইতোমধ্যে ভারতের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বিএসএনএল এর কাছে ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ রফতানির জন্য নতুন করে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া বিএসসিসিএল দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের পশ্চিম দিকের তথা ইউরোপের দিকের অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ দীর্ঘমেয়াদে লিজ দেওয়ার জন্য সৌদি আরব ও ফ্রান্সের সাথে দুটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, মালয়েশিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন আছে।

সি-মি-উই-৬ কনসোর্টিয়ামে যোগদানকারী ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে—সিংটেল সিঙ্গাপুর, বিএসসিসিএল বাংলাদেশ, টেলিকম মালয়েশিয়া, এসএলটি শ্রীলংকা, ধিরাগু মালদ্বীপ, এনআইটুআই ভারত, টিডব্লিউএ পাকিস্তান, জিবতি টেলিকম, জিবতি, মবিলিঙ্ক-সৌদি আরব, চায়না মোবাইল ইন্টারন্যাশনাল, চায়না টেলিকম গ্লোবাল লিমিটেড চায়না, ইউনিকম চায়না, মাইক্রোসফট যুক্তরাষ্ট্র, টেলিকম ইজিপ্ট মিশর এবং অরেঞ্জ ফ্রান্স।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।